মানুষের প্রয়োজন অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থানের মত চাহিদাগুলার পরই শিক্ষা ও চিকিৎসা। মৌলিক এই চাহিদাগুলু রীতিমত অধিকারের পর্যায়ে পৌছে গেছে এখন। রাষ্ট্র তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করছে তার নাগরিকদের নূন্যতম চাহিদার যোগান দিতে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সম্পদ অসীম নয় তাই অবধারিত ভাবেই সীমিত সম্পদ প্রায়োরিটির ভিত্তিতে বন্টিত হয়। যদিও দূর্নীতি ও অদক্ষতার করনে অপ্রতুল বরাদ্ধে ও হরিলুট নিত্য দিনের ঘটনা।অস্বীকার করার উপায় নেই যে শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে উচ্চশিক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। প্রথমটি খুশির কারন হলেও দ্বিতীয়টি দুঃশ্চিন্তার কারন যা মূলত প্রয়োজনীয় সংখ্যক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার ফলে সৃষ্ট। এ সবই কোয়ান্টিটির প্যাচালি কিন্তু কোয়ান্টিটির সল্পতায় কোয়ালিটির অবস্থা আরো খারাপ। খাবার প্রাপ্তির অনিশ্বয়তায় ভোগা ব্যাক্তি যেমন স্বাদ ও পুষ্টিগুন নিয়ে খুব এখটা চিন্তার সুযোগ পায়না ঠিক তমনি ভাবে শিক্ষর্থীদের ও একই অবস্থা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুল তাই অন্ধের যস্ঠী হয়ে উঠেছে অবস্থা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের। অতএব মেধার জোরে আর্থিক অসামর্থ ঘোচানোর সুযোগ কেবল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলতেই উন্মুক্ত।
বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাঃ
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর মেধা ও যোগ্যতা অনুসারে মহাবিদ্যালয়ে ৩ বছরের স্নাতক ডিগ্রি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ বছরের স্নাতক ডিগ্রি (সম্মান) কর্যক্রমে ভর্তি হয়। যেসব শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি পাস কার্যক্রম থেকে স্নাতকোত্তর কার্যক্রমে ভর্তি হয় তাদের জন্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রির মেয়াদ ২ বছর এবং সম্মান ডিগ্রিধারীদের জন্য এক বছর। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এম ফিল ও ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
পেশাগত শিক্ষাক্ষেত্র যেমন কৃষি, চিকিৎসা, প্রকৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ফার্মেসি ইত্যাদি বিষয়ে ডিগ্রির মেয়াদ ৫ বছর। বাংলাদেশে মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মত উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ও এর ছয়টি স্কুলের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষক ক্ষেত্রে বিভিন্ন মেয়াদ ডিগ্রি প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশে বেসরকারি ইদ্যোগে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠেছে। আরও কিছু অনুমোদনের পথে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রধানে দায়িত্ব হল দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার বিশ্বব্যাপী চাহিদার সাথে সঙ্গতি রক্ষ করে দেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার কাঠামোঃ
শিক্ষক প্রশিক্ষণঃ বাংলাদেশের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে অব্যহত রয়েছে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠানে সার্টিফিকেট ইনএডুকেশন কোর্সে পরিচালিত হয় তাহলঃ
ক. প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (পিটিআই):
প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তির জন্য মহিলাদের এস, এস. সি ও পুরুষদের এইচ, এস, সি পাশ আবশ্যক। এক বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ দানের পর তাদেরকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন সনদ (সি, এড) প্রদান করা হয়। বর্তমানে সি, এড প্রদানের দায়িত্ব রয়েছে ন্যাশনাল একাডেমি ফর প্রাইমারি এডুকেশন (নেপ) ময়মনসিংহ।
খ. বালাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি):
বাউবি ৬ মাস ব্যাপী তিন সেমিষ্টারের মাধ্যমে সি.এড. প্রদানের কার্যক্রম প্রবর্তন করেছে। বাউবি এর সার্টিফিকেট ইন এডুকেশনের প্রথম ব্যাচের কোর্সে দুই হাজার খৃস্টাব্দের জুনে সম্পন্ন হয়। এ কোর্সের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন পিটি আই এর প্রশিক্ষক বৃন্দ। তাছাড়া বি.এড ও এম.এড কার্যক্রম চালু রয়েছে। বি.এড ডিগ্রিধারীদের জন্য বাউবির এম.এড কার্যক্রম ৬ মাস ব্যাপী ৩ সিমেষ্টার অর্থাৎ ১৮ মাসে এম. এড কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
গ. ব্যাচেলর অব এডুকেশন (B.Ed) এবং মাষ্টার অব এডুকেশন (M.Ed):
দেশের ১০টি সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, প্রায় ২৯টি বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান বি.এড ডিগ্রি. এম.এড ও শিক্ষায় সন্মান প্রদান করে থাকে। এ বি.এড কার্যক্রমের মেয়াদ এক শিক্ষাবর্ষ তথা বার মাস। ঢাকা, সয়মনসিংহ, চট্রগাম এবং রাজশাহী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে বর্তমানে স্নাতকোত্তর শিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি ২টি বি.এড. কলেজে এবং আহছান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এড. কোর্স ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে চালু করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের মেয়াদ কালও বার মাস। তবে এম.এড শ্রেণীতে ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতা হল বি.এ বিএস.সি,বি. এড। বর্তমান ঢাকা টিটিসিতে শিক্ষায় সম্মান ডিগ্রী প্রদানের কোর্স চালু করা হয়েছে।
ঘ. শারীরিক শিক্ষায় ডিপ্লোমা ও ব্যাচেলর ডিগ্রিঃ
বাংলাদেশে দুটি শারীরিক কলেজ রয়েছে তার একটি হল ঢাকা ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজ এবং অপরটি হল রাজশাহী ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজ। এ কলেজ দুটিতে দুই ধরনের কোর্স রয়েছে -
1. জুনিয়র ডিপ্লোমা ইন ফিজিক্যাল এডুকেশন যার শিক্ষা কাল এক বছর
2. ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড), যার ভর্তির যোগ্যতা বি.এ/বি.কম/বি.এসসি এবং প্রশিক্ষণ কাল এক বছর। এছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা একাধিক বেসরকারি টিটি কলেজে বিপিএড কার্যক্রম চালু হয়েছে।
ঙ. ডিপ্লোমা ও বি.এসসি ইন টেকনিক্যাল এডুকেশনঃ
বাংলাদেশে টেকনিক্যাল শিক্ষায় পোষ্ট গ্রাজুয়েট পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাহল ঢাকাস্থ তেজগাঁও শিল্প এলাকায় টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। এ কলেজ ১. ডিপ্লোমা ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন ২. বি. এসসি ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন ডিগ্রি প্রদান করা হয়। উভয় কার্যক্রমের মেয়াদকাল এক শিক্ষাবর্ষ। তবে শেষোক্তটিতে ভর্তি হতে ডিপ্লোমা ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন পাস হতে হয়।
চ. ভোকেশন্যাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
যারা ৮ম শ্রেণী পাসের পর ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে বৃত্তিমূলক বিষয়ে প্রশিক্ষন গ্রহণের পর এসব ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন, তাদের জন্য সার্টিফিকেট ইন ভোকেশনাল টির্চাস এডুকেশন কোর্স এক বছরের জন্য প্রদান করা হয়। অপরদিকে যাঁরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করে সরাসরি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে সিনিয়ার শিক্ষক হন, তাঁদের এক বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ভোকেশনাল টিচার্স এডুকেশনের সার্টিফিকেট রয়েছে তাঁরা ভোকেশনাল ডিপ্লোমা ইন টিচার্স এডুকেশনে ভর্তি হতে পারেন। বাংলাদেশ এরূপ বিষয় শিক্ষা প্রদানের জন্য বগুড়ায় ভোকেশনাল টির্চাস ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নামে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ছ. শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) থেকে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (সম্মান), এম. এড ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে এটি একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। তাছাড়াও এ প্রতিষ্ঠান দেশের শিক্ষা সমস্যার ওপর বিভিন্ন গবেষণাও পরিচালনা করে থাকে।
পরীক্ষা পদ্ধতিঃ
বাংলাদেশে বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে যথাক্রমে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পরীক্ষা করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পরীক্ষা পদ্ধতি সাধারণত দুই ধরনের। যেমন-
ক. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি (পাস) এর জন্য দুই বছর পর এবং অনার্স এর জন্য তিন বছর পর প্রথাগত পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
খ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চার বছর মেয়াদী ডিগ্রি অনার্স কোর্স প্রবর্তন করেছে।
এখানে সিমেষ্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়, তবে দেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় এখনও প্রথাগত পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করে।
ভারতের উচ্চ শিক্ষাঃ
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ডিগ্রি কার্যক্রমে ভর্তি হতে পারে। এফিলিয়েটেড কলেজ ডিগ্রি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ ডিগ্রি কলেজের মেয়াদ তিন বছর। ডিগ্রি কলেজের এ শিক্ষাক্রম বিশ্ববিদ্যালয় প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ করে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কার্যক্রমের মেয়াদ দুই বছর। ডিগ্রি লাভের পর এমফিল ও ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের/ লাভের/ অধ্যয়নের ব্যবস্থা আছে। Indian institute of Technology কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় Joint Entrance Examination এর মাধ্যমে প্রকৌশল, ফার্মাসিউটিকাল, আর্কিটেকচার কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এসব কার্যক্রমে স্কাতক ডিগ্রির মেয়াদ ২-৫ বছর। এছাড়া ইন্দিরা গান্ধী ওপেন ইইনিভার্সিটি ও কোট ওপেন ইউনিভার্সিটি, নালন্দা ওপেন ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন কোর্সে উচ্চ শিক্ষায় ডিগ্রি দেয়া হয়।
অনেক মানুষের মতামত হল, বিশ্ব বিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্বশাসিত হওয়া উচিত। তাই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত ব্যাপারে এবং রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ অনাবশ্যক। কিছু উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের Chancellor নিয়োগে প্রতিবাদ করেন। কিছু সরকারি ব্যবস্থার প্রতিও প্রতিবাদ এসেছে, যেমন মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম বানানো এবং বই প্রকাশনা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্তরে বিশৃংখলা এবং অরাজকতার সময়ে সরকারি কর্মশক্তির ব্যবহারও সমালোচিত হয় যে, রাজনৈতিক চাপ এরূপ কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়ে যায়। এসব কিছুই বিশ্ববিদ্যালয় বেড়ে যায়। এসব কিছুই বিশ্ববিদ্যালয় এর স্বশাসনের বিষয়টা ভুল বোঝাবুঝি।
এটা স্বীকৃত বিষয় যে, শিক্ষাভিত্তিক বিষয় স্বাধীন। যেমন শিক্ষা গ্রহণ, পথ প্রদর্শন অধ্যয়ন, মত বিনিময় ইত্যাদি। স্বাধীন চিন্তা ছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত শিক্ষা পদ্ধতি টিকে থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্বশাসনের সৃষ্ট অরাজকতা নির্দেশ করে ভাল প্রশাসন ব্যবস্থাপনার অভাব। সঠিক নিয়ন্ত্রণ এবং সামপ্রদায়িকতার জন্য শিক্ষকদের মধ্যে উচ্ছৃংখল মানবিকতা এবং আন্তঃপ্রতিদ্বন্দিতার জন্য শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে।
ভারতীয় সংবিধান অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার দায়িত্ত সরকারের কিন্তু ভারতীয় সরকারের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক অন্য বিদেশী দেশ যেমন U.S.A বৃটেন এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মত নয়, যেখানে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন অথবা সম্পূর্ণ ভাবে সরকারের অধীনে। আর্থিক সমস্যা হল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা এবং অনুদান আকারে এ সাহায্য তারা সরকারের কাছ থেকে পায়। অন্য প্রধান দিক হচ্ছে নীতির গঠন, নিয়ম, অধিকার এবং সুযোগের সীমা নির্ধারণ ুযা সরকারের নির্দেশধীন। অনুদান মঞ্জুর এবং পন্থার গঠন হচ্ছে আইনকর্তাদের অধিকার। বস্তুত আইনকর্তা মঞ্জুর করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসন ভোগ করে।
ভারতীয় সংবিধান অনুসারে উচ্চ শিক্ষায় কেন্দ্রের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার মান-এ সমতা আনয়নে উৎসাহত, গবেঘণামূলক কাজের উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত এবং বিশেষভাবে অবধারিত শিক্ষার ব্যবস্থা করা। অন্য কিছু সংখ্যক জাতীয় বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দিল্লি Varanasi. আলীগড় Osmania. বিশ্বভারতী এবং আরো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি অধিনস্থ।
বিশেস অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা এবং অংশ ভাগ রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় ভার। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের প্রতি এবং কিছু সম্পূর্ন নতুন কার্যক্রমের প্রতি অর্থনৈতিক অঙ্গীকার পালনে রাজ্য সরকার প্রায়ই ব্যর্থ হয়। কেন্দ্রীয় সরকার যেহেতু মাঝে মাঝে রাজ্য সরকারকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে, এরূপ পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা সম্পন্ন করা সন্দেহ জনক হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন স্থাপন কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের অধিকার নিতে চায় না। কেন্দ্রীয় সরকার সর্বদাই চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রাখতে।
মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষাঃ
মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষার রূপরেখা রাজ্জাক ও রহমান তালিবের রিপোর্টদ্বয়ে সুনির্তিষ্টভাবে যে সুপারিশ করা হয়েরছে তারই আলোকে প্রণীত। দেশের উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন জনশক্তি সৃষ্টি, গবেষণার প্রসার ও করসালটেন্সি সার্ভিসের জন্য জনবল তৈরি করাই মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষার প্রধান লক্ষ। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ শিক্ষ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উচ্চ শিক্ষার ক্রমবর্ধমারন চাহিদা পূরণের জন্য টুইনিং কার্যক্রমের (Twining program) মাধ্যমে ডিগ্রি পর্যয়ের পেশগত সরকারি এবং বেসরকারি উচ্চ শিক্ষ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ফলে বহু সংখ্যক বেসরকারি মহাবিদ্যালয় উচ্চ শিক্ষ প্রসারের কাজে এগিয়ে এসেছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়, ২টি মহাবিদ্যালয় ও ৬টি কারিগরি ইরস্টিটিউট আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে সব বিষয় শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বিজ্ঞান, কারিগরি বিজ্ঞার, ফলিত বিজ্ঞান ও শিল্পকলার প্রতি প্রধান্য দেয়া এবং দেশের শিল্প কারখানার কাজের সাথে এসব বিষয়ের যোগসূত্র রক্ষ করা হয়। বিজ্ঞন বিষয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যার হার বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে নানা ব্যবস্থা ও নীতি গৃহিত হয়েছে। ২০২০ খৃস্টাদ্বের মধ্রে জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্য অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকার প্রতিযোগিতামূলক শিল্প, অর্থনীতি, ইলেকট্রিনিকস, বায়োটেকনোলজি, ইনফরমেশন টেকনোলজি ও অন্যান্য গ্রহণ করে।
শিক্ষক প্রশিক্ষণঃ বিশ্ববিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়সমূহে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে প্রথমিক, মাধ্যমিক (উচ্চ মাধ্যমিক অন্তর্ভুক্ত) ও কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক, বিশেষ স্কুল এবং বিষয় বিশেষজ্ঞদের শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। দেশে ৩০টি প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের মধ্যে একটিতে ইসলাম ধর্ম শিক্ষকদের এবং আর একটিতে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আনুসারে প্রশিক্ষণ কোর্সের মেয়াদের পার্থক্য দেখ যায়। এক বছরের পোষ্ট গ্রাজুয়েট, ডিপ্লেমা-ইন-এডুকেশন ও ২ থেকে ৩ বছরের সার্টিফিকেট-ইন-এডুকেশন কোর্স এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় চার বছরের সমন্নি স্নতক ডিগ্রি দেয়া হয় । সব প্রকারের প্রশিক্ষণ মহাবিদ্রালয়ের শিক্ষকদের কর্মকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছেঠ প্রশিক্ষণ মহাবিদ্রালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রমের সাথে প্রশিক্ষণার্থীদের সহ শিক্ষক্রমের কার্যবলীর অভিজ্ঞতা অর্জনের ব্যবস্থ বিদ্যমান।
যুক্তরাজ্যের উচ্চ শিক্ষা:
গ্রেট বৃটেনে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। উচ্চ শিক্ষার গুনগত মান সংরক্ষনের দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এসব কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালযের ডিগ্রী কোর্সের মেয়াদ তিন বছরের এবং পূর্নকালীন। বর্তমানে গতানুগতিক বিষয় ছাড়াও আধুনিক বিষয় তথা ইলেকট্রনিক্স, প্রকৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান, আধুনিক জীবন প্রযুক্তি, তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বৃটেনে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনষ্টিটিউটের সংখ্যা প্রায় ১২০ টি।
রয়েল চার্টার দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হলেও এগুলো একাডেমিক স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনুদানের জন্য এডুকেশন কোয়ালিটি কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে।তাতে গবেষনা ও উচ্চতর শিক্ষার জন্য ফেলোশিপ প্রদানের ব্যবস্থা দেখা যায়।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ:
গ্রেট বৃটেনে শিক্ষক প্রশিক্ষন দির্ঘ সময়ের ঔতিয্য রয়েছে।প্রথাগত শিক্ষক প্রমিক্ষন ব্যতিত শেখানোর আধুনিক কলা কৌশলের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন শিক্ষা সম্মন্ধিয় রিপোর্টের আলোকে যে সব উল্যেখযোগ্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাহল-
1. ক্রথার রিপোর্ট অনুসারে উচ্চ যোগ্যতা সমম্পন্ন ও প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ড়্গিক প্রস্তুতির জন্য পূর্নকালীন শিক্ষা সম্প্রসারন করতে হবে।
2. প্যাউডেন রিপোর্টের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত পরিমানে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষনের কলেজ অব এডুকেশনকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
3. জেমস রিপোর্টের তিন পযায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষনের সুপারিশ করা হয়।
ক) প্রশিক্ষনার্থী ব্যক্তিগত শিক্ষার মান বৃদ্ধি করবে।
খ) জাতীয় পর্যায়ে কিছুদিন বিদ্যালয়ে চাকুরি করার পর কর্মরত শিক্ষক হিসাবেপ্রশিক্ষনে যোগদান করে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি করবে।
বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ষনের সঞ্জীবনী প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কর্মরত শিক্ষক বৃন্দের দক্ষতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে।
পরীক্ষা পদ্ধতি:
যুক্তরাজ্যের পরীক্ষা পদ্ধতি অনেকটা প্রথাগত। রচনা মুলক প্রশ্নের --------
ক) ইংল্যান্ডের সবচেয়ে গুরম্নত্বূপূর্ন পরীক্ষা পদ্দতি হল Eleven Plus Examination যা স্থানীয় শিক্ষা কতৃপক্ষ পরিচালনা করে থাকে। এ পরীক্ষার মূল বিষয় গুলো হল ু বুদ্ধিমত্তা, কৃতিত্ব, ইংরেজী ও পাটিগনীত।
খ) মাধ্যমিক শিক্ষার সাধারন সনদ পত্র: ইংল্যান্ডের এ পরীক্ষা শিক্ষাবোর্ড গ্রহন করে থাকে। জেনারেল এডুকেশন অব সেকেন্ডারি এডুকেশনকে সংড়্গেপে GCE পরীক্ষা বলে।
এ পরীক্ষা : ক) অর্ডিনারী লেভেল (O-level)
খ) এডভান্সড লেভেল (A-level)
ক) অর্ডিনারী লেভেলের পরীক্ষা ১৬ বছর বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য যারা ৫ বছর পর্যনত্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে। তাদেরকে A-level ভর্তির যোগ্য হিসাবে এর ফলাফল বিবেচনা করা হয়।
খ) এডভান্সড লেবেলের পরীক্ষা ঐ সব শিক্ষার্থিদের জন্য যারা O-level পাশ করে আরও দুই বছর লেখাপড়া সম্পন্ন করেছে তারা এ লেভেল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে থাকে।
গ) ১৯৬৫ খৃস্টাব্দে সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারী এডুকেশন ( সিএস ই) পরীক্ষা যে তিনটি মোডের শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে গ্রহন করা হয় তা হল-
মোড-১: আঞ্চলিক বোর্ড কর্তৃক প্রনিত শিক্ষা সূচীর আলোকে বহি:পরীক্ষা।
মোড-২: বিষয় বিশেষজ্ঞের অনুমোদিত কতকগুলো বিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত বহি:পরীক্ষা।
মোড-৩: বিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ব শিক্সাসূচীর অনুসরনে আঞ্চলিক বোর্ডের মডারেশনে ও স্কুল কর্তৃক পরীক্সনের ভিত্তিতে পরীক্ষা। ইংল্যান্ডের উচ্চতর পযায়ে পরীক্ষা পদ্ধতি গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় গ্রহন করা হয়।
জাপানের উচ্চ শিক্ষাঃ
জাপানের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, জুনিয়র, মহাবিদ্যালয়, প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয় এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় রয়েছে। যেমনঃ
1. বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের স্নাতক ও দুই বছরের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রিও প্রদান করা হয়।
2. নিম্ন মাধ্যমিক কলেজে দুই বা তিন বছর মেয়াদে বিভিন্ন কোর্স প্রদান করা হয়।
3. প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের প্রকৌশল, নৌবিজ্ঞান, শিল্প ইত্যাদি বিষয়ে অধ্যয়ন
শিক্ষক প্রশিক্ষণঃ
জাপানের শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দের প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। জাপানে চাকরিপূর্ব শিক্ষক প্রশিক্ষণ দুই ধরনের। যেমনঃ
ক. জুনিয়র মহাবিদ্যালয়ের বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনের পর শিক্ষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে educational personal certification law অনুসারে সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয়।
খ. নবনিযুক্ত শিক্ষকদের জন্য মাষ্টার শিক্ষকের তত্তাবধানে এক বছর শিক্ষানবীশ হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। প্রিফেকচুয়াল শিক্ষা কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়।
পরীক্ষা পদ্ধতিঃ
জাপানের বিদ্যালয়ে আন্তঃ ও বহিঃ উভয় প্রকারের পরীক্ষার প্রচলন রয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে যে দুটি পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। তার একটি হচ্ছে আপার সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট এবং অপরটি লোয়ার সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট। শিক্ষা মন্ত্রণালয় উক্ত পরীক্ষাসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীর রেকর্ড এবং এচিভমেন্ট টেস্টের ওপর ভিত্তি করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। শতকরা ৭২ ভাগ শিক্ষার্থী এ প্রক্রিয়ায় নিম্ন মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হয়। উচ্চ মাধ্যমিক স্তর থেকে শতকরা ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জুনিয়র কলেজে ভর্তি হয়ে থাকে। ভর্তির জন্য নির্বাচনের ব্যাপারে প্রিফেকচারাল বোর্ড এবং মিউনিনিপ্যাল বোর্ড শিক্ষার্থীর এচিভমেন্ট টেস্ট এবং ফলাফল ব্যবহার করে থাকে।
উচ্চ শিক্ষায় বাংলাদেশের তুলনাঃ
বৃটিশ শাসিত ভারতে ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে উচ্চ শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভৌত অবকাঠামো ছিল না। শুধু পরীক্ষা নেয়াই ছিল তার প্রধান কাজ। বিচারকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের একজন জজ ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করতেন। শিক্ষকদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে ছাত্ররা আবাসিক হলে থেকে পড়াশোনা করবে এই অঙ্গীকার নিয়ে ১৯২১-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। উচ্চ শিক্ষার পাদপীঠ তখন ছিল মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত জনগণের আয়ত্তে। শিক্ষার কাঠামোটা ছিল পিরামিড আকৃতির, নিম্নশিক্ষার ভিত্তিটা চওড়া যা আজও রয়েছে অব্যাহত। আর উচ্চ শিক্ষার চূড়াটা ছোট। পিরামিডের চূড়ায় আরোহণ করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া মানে অনেক অর্থ ও মেধার প্রয়োজন হতো। ১৯৭৩-এর বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট প্রবর্তনের সময় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ হাতেগোনা ৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আজকাল বহুসংখ্যক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানগত তথ্য সরকারের নথিতে রেকর্ডভুক্ত থাকলেও জনগণের গণনায় নেই। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট বিভ্রানত্দি, সন্দেহ। কেউ কেউ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলছে সনদ বিক্রির কারখানা। যে যা বলে বলুক, উচ্চ শিক্ষার প্রসারে এই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান, চাহিদাকে এখন আর খাটো করে দেখার উপায় নেই।
এককালে উচ্চ শিক্ষার পাদপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ছিল জ্ঞান আহরণে ও বিতরণে প্রত্যাশার অনুকূলে। শিক্ষার্থীকে পাঠিয়ে বাবা-মাকে অনাকাঙ্ক্ষিত দুশ্চিন্তায়, দুর্ভাবনায় প্রহর গুনতে হতো না। তার মানে জাতীয় ক্রাইসিসে অনিয়ম, কুনিয়মের বিরুদ্ধে ছাত্ররা হাঁকডাক দিত না তা নয়। পড়াশোনার সব তাল-লয় বজায় রেখে ছাত্ররা দেশের, দশের দুর্বিপাকে, দুর্যোগে, দুঃখ-শোকে বাড়িয়ে দিত সমবেদনার হাত। ১৯৫২-তে বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ে ছাত্ররাই রেখেছিল অগ্রণী ভূমিকা। প্রত্যাশার ও অধিক সাহসিকতা নিয়ে ছাত্ররাই রাষ্ট্রীয় সামাজিক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিকে দেখিয়েছিল স্বাধীনতার সোনালি স্বপ্ন। চুয়ান্ন'র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছেষট্টির ছয়দফা, ঊনসত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি সব প্রেক্ষাপটে ত্যাগী রক্তক্ষয়ী ভূমিকায় ছাত্ররা অগি্নস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠে বাড়িয়েছিল বিক্ষোভ-আন্দোলনের গতিধারা। ছাত্ররাই ছিল জাতীয় আন্দোলনের রূপকার, আশ্রয়দাতা, প্রশ্রয়কারী, বাহক, পথ প্রদর্শক অর্থাৎ আন্দোলনের অগ্নিলাভায় ঘি ঢেলে দেয়ার প্রবক্তা। তবে সারাসারি হল দখল, ডাইনিংয়ে ফাও খাওয়া, নিজেদের আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডার ছিনতাই, ইত্যাদি অনৈতিক কাজের জড়িয়ে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে শিক্ষার্থীরা সময় নষ্ট করতো না। গড়হবু রং হড় ঢ়ৎড়নষবস এই ধরনের ঘোষণা দিয়ে রাজনীতির মেরম্নমজ্জায় অনাকাঙ্ক্ষিত সংস্কৃতির বীজ ঢুকিয়ে দিলে দেশ তথা মানবীয় সেবার পরিবর্তে ছাত্র রাজনীতিতে চলে আসে অস্ত্রের ঝনঝনানি, রোমান্স, দলীয় আধিপত্য বিস্তারের কালচার। বই খাতার ভাঁজে ও ফাঁকে স্থান পায় রাম দা, চাকু, পিস্তলসহ অনাকাঙ্ক্ষিত আগ্নেয়াস্ত্র যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে করে বিষাক্ত। টোকাই জাতীয় ছাত্ররা বই কলম ছেড়ে বাসত্দবিক অর্থে হয়ে ওঠে পেশিশক্তির গডফাদার। অহেতুক তুচ্ছ কারণে বা রাজনৈতিক প্রভাব শক্তিশালী করতে গিয়ে কতবার অস্ত্রের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কত শিক্ষার্থী হয়েছে কফিনবন্দি তার ইয়ত্তা নেই। সেই ধারাবাহিকতার পথ বেয়ে আজও চলছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির নামে অপসংস্কৃতি, মারামারি, অনৈতিক পেশিশক্তির চর্চা। যে শিক্ষার্থী যত বেশি মাস্তানি করতে পারে সেই পায় বাড়তি আদাব সালাম থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও প্রাণ ফুটো হয়ে যাওয়ার ভয়ে এই ধরনের শিক্ষার্থীদের কাছে থাকে নিতান্ত অসহায়।
সরকারঃ
২০০৯-এ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র শাসনের মধ্যমণি হয়ে দক্ষতার সঙ্গে যাত্রা শুরু করেন। কূট ষড়যন্ত্র, প্রবল প্রতিকূলতা ওভারকাম করে নিজস্ব মেধা, দক্ষতা প্রয়োগে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রায় সব কলকাঠি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও দলীয় ছাত্ররাজনীতি রয়ে যায় বিশৃঙ্খল অবস্থানে। আদর, শাসন, হুমকি-ধমকি জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করার পরও যখন ছাত্রদের 'খাই খাই আরও চাই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ফেরানো গেল না, তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা বিরক্ত ও কিছুটা অভিমান করেই দলীয় সাংগঠনিক পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন। তারপরও টনক নড়লেও ছাত্ররাজনীতি রয়ে গেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ছাত্ররাজনীতির ঘোলাজলে সতর্কতার টোকা পড়লেও ইতিমধ্যে কতিপয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে বন্ধ হয়ে শিক্ষার কার্যক্রম থমকে দাঁড়ায়। এই সব প্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার পরিবেশে সুস্থতা থাকবে কী থাকবে না এই আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ শংকিত হয়ে ছাত্ররাজনীতির লাগাম টেনে ধারার লক্ষ্যে কঠোর নীতিনির্ধারণ ও প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়। যেমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১২ মে ২০০৯ এ জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, প্রথমত পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মাইকিং, ব্যানার, পোস্টারিং, প্রচারপত্র প্রচার ও বিতরণ নিষিদ্ধ থাকবে। দ্বিতীয়ত হলসমূহে বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ থাকতে পারবে না। ২৩ মে ২০০৯ প্রক্টর দফতর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদানকৃত পরিচয়পত্র প্রাপ্ত রিকশাওয়ালারাই কেবল ওই ক্যাম্পাসে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। এই ধরনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ পরিস্থিতি কী কারও কাম্য? এর জন্য দায়ী কে? শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ জাতীয় বিবেকের কাছে রাখছি প্রশ্ন। নিরাপত্তার স্বার্থে এতসব উদ্যোগ তৎপরতা গ্রহণ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যারয় অঙ্গন পরিণত হয়েছে অস্বস্তিকর অবরোদ্ধ দ্বীপ চত্বরে। গণতন্ত্রের হাতে-পায়ে পরিয়েছে শেকল। একেই বলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। আমরাই তো খোঁচাখুঁচি করে জাতীয় নীতিনির্ধারণীকে রক্তাক্ত করছি। বিদ্যা চর্চার কেন্দ্র কেন কতিপয় স্বর্থান্বেষী মহলের কুকীর্তির কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। অসহায় নিরাপরাধ মেধাবী শিক্ষার্থীরা করতে পারবে না স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ ও জ্ঞান আহরণের তপস্যা। কী অদৃশ্য কারণে বাধ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গণতন্ত্রের সূত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্কচটেপ লাগিয়ে দিতে দু'ঠোঁটে। ছাত্ররা হবে কারারুদ্ধ, ক্রসফায়ারে মারা যাবে তা কী কারও কাম্য।
উচ্চ শিক্ষার পরিবেশঃ
এই সব অবান্তর পরিবেশ পরিস্থিতির বাংলাদেশ পাওয়ার জন্যই কী একাত্তরে যুদ্ধ করেছিল শাত্তপ্রিয় জনগণ। আমরা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই না। ২০২১ রূপকল্পকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছাত্র শিক্ষকসহ সর্বস্তরের জনগণ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত ও নিবেদিত হয়ে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবুঝ, সবুজ, চিরতারুণ্যে ঠাসা শিক্ষার্থীরা জাতীয় স্বার্থে শিক্ষার পরিবেশকে রাখবে আশা-আকাঙ্ক্ষার অনুকূলে এ প্রত্যাশা সবার। দিনবদলের আহ্বানে আমরা যদি নিজেদের চরিত্রে, মানবীয় মূল্যবোধে, চিন্তা-চেতনায় সাম্যভাব গাম্ভীর্যতা ফিরিয়ে আনতে না পারি তাহলে জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। যে কোন উপায়েই হোক উচ্চ শিক্ষার পরিবেশে সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে হবে। যাদের বলি দেশের কর্ণধার, জাতির গর্ব, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, সেই তেজোদীপ্ত সোনার টুকরো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের স্নেহর পরশ মিশিয়ে বলছি_ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ পেতে হলে, বাংলাদেশকে রবীন্দ্রনাথের কাম্য সোনার বাংলায় পরিণত করতে হলে ব্যক্তি স্বার্থের ও প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহার করে বই-খাতা হাতে তুলে নিজেদের জ্ঞানগুণে দেশপ্রেমে সিক্ত সুনাগরিকে পরিণত কর। আমি নিশ্চিত এবং আশাবাদী ইতিহাসের বাস্তবতা মাথায় রেখে তোমরাই পারবে উচ্চ শিক্ষার পরিবেশকে উন্নয়নের অনুকূলগামী করে মহাজোট সরকারের পথ চলাকে সুমসৃণ করতে। তাতে দেশের ও দশের মঙ্গল হবে, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে কল্যাণকামী সুধী মহল। জাতি পাবে দক্ষ জনশক্তি, সামাজিক অবক্ষয়ের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষা তথা জাতীয় উন্নয়ন হবে সুদূরপ্রসারী অগ্রগামী বহুদূর।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেরা দেশ নির্বাচন সংস্থা নিউজউইক পরিচালিত জরিপে ২০১০ সালে শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্হান পাওয়া দেশটির নাম ফিনল্যান্ড । দ্বিতীয় ও তৃতীয় তালিকায় যথাক্রমে আছে সুইজারল্যান্ড এবং সুইডেন। নিউজউইক যেসব মানদন্ডের ভিত্তিতে সেরা দেশ নির্বাচন করেছে সেগুলো হলো: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবনধারণের মান, অর্থনৈতিক মাত্রা ও রাজনৈতিক পরিবেশ। আমাদের দেশ সেই তালিকায় স্হান পেয়েছিল ৮৮ নম্বরে। ৮৯ তম অবস্থান পাওয়া পাকিস্তানের অবস্থান ঠিক আমাদের নিচেই। ৮৭ তম অবস্থান নিয়ে আমাদের উপরে আছে কেনিয়া। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান ৭৮ তম। নিউজউইক পরিচালিত জরিপে বাংলাদেশ শিক্ষা ক্যটাগরীতে পেয়েছে ৫৮.৬৩%, স্বাস্থ্যে ৫১.৭১%, জীবনযাত্রার মানে ৪৮.৫৩%, অর্থনৈতিক মাত্রায় ৩১.০৬% এবং রাজনৈতিক পরিবেশে ৪৭.০৬%।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ৪টি দেশ ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে আর ফিনল্যান্ড এর ভৌগলিক অবস্থান খুব কাছাকাছি। বিশ্বের সেরা ৩টি দেশের মধ্যে এই স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকেই দুইটি দেশ নির্বাচিত হয়েছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান বাকি দুটি দেশ নরওয়ে আর ডেনমার্কের অবস্থান যথাক্রমে ৬ষ্ট ও ১০ম। পড়াশুনা করার জন্য সুইডেনে অবস্থান করছি বলে সুইডেন সম্পর্কে একটা ভাল ধারণা পাওয়ার সুযোগ ঘটেছে। অনেক কাছে থেকে এখানকার মানুষের আচার-আচরন, এদের জীবনব্যবস্থা দেখার সুযোগ পেয়েছি। আমি সুইডেনে যেখানে অবস্থান করছি সেটা ডেনমার্কের অনেক কাছের এলাকা। সুইডেনের রাজধানী ষ্টকহোম ট্রেনে যেতে আমার সময় লাগে ৬ ঘন্টা, সেখানে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন যেতে ট্রেনে সময় লাগে ১ ঘন্টা। সুইডেনের এই দক্ষিণাঞ্চল একসময় ডেনমার্কের শাসনাধীন ছিল।
স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়টি সুইডেনে অবস্থিত। ১৪৭৭ সালে উপসালা (Uppsala University) নামের এই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টি সুইডেনে প্রতিষ্টা পেয়েছিল। সুইডেনের দ্বিতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় লুন্ড্ (Lund University) প্রতিষ্টিত হয়েছিল ১৬৬৬ সালে। গত একবছর ধরে আমি এই লু্ন্ড্ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছি। সেরা দেশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুইডেন শিক্ষাখাতে পেয়েছে ৯০.৭৬%। ইংল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড বা ফ্রান্সের মতো সুইডেন কোথাও উপনিবেশ গড়ে তোলেনি। শিল্পায়নের দিক দিয়েও উত্তর ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে দেশ হিসাবে পরিচিত ছিল সুইডেন। বর্তমান সময়ে শুধু স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলেই নয় বরং সারা বিশ্বের উন্নত প্রথম দশটি দেশের তালিকায় সুইডেনের নাম চলে আসে। সুইডেনের আজকের উন্নতির পিছনে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল সেগুলোর মধ্যে শিক্ষাখাতকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সুইডেনের শিক্ষাখাতে বাজেট এত বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছিল যে তারা নিজের দেশের শিক্ষার্থীদেরকে বিনাপয়সায় পড়ানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্যও বিনাপয়সায় অধ্যয়নের সুযোগ রেখে দেয় ২০১০-১০১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত।
তুলনান্তে যা দেখা যায়ঃ
শুধু সুইডেন নয় বিশ্বের যেকোন উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যাবে যে তাদের উন্নতির পিছনে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসাবে কাজ করছে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা। আলোকবর্তিকার (Enlightenment) সময়ের পরে উত্তর ইউরোপ যখন চার্চকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে বের হয়ে এসেছিল ঠিক তখন থেকেই এখানকার সবগুলো দেশে শিক্ষা-গবেষণাকে দেখা শুরু করা হয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে। আর অবিশ্বাস্য সব আবিস্কার হওয়ার রাস্তাটি প্রসারিত হতে শুরু করলো ঠিক তখনই। শুধু বৈজ্ঞানিক আবিস্কার নয়, নতুন নতুন দর্শন-তত্ত্ব জন্মলাভ করে ঠিক এ সময়টাতেই। ১৮৭০ সালে আলফ্রেড নোবেল নামক একজন মহান সুইডিশ বিজ্ঞানী আবিস্কার করেন ডিনামাইট। আর সেই আলফ্রেড নোবেলের নামানুসারে এবং তার অর্থায়নের মাধ্যমে আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরস্কারটির প্রবর্তন ঘটেছে। উত্তর ইউরোপের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির ধারাটি আজও প্রবাহমান। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা সহ উত্তর আমেরিকা আর ইউরোপ মহাদেশের অন্যান্য দেশগুলো থেকেও শিক্ষার্থীরা সুইডেনে পড়াশুনা করতে আসে। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা আর উঁচুমানের গবেষণার সুযোগ আছে বলেই এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক জনপ্রিয়।
এবার একটু আমার দেশের দিকে তাকাই; আমি ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। আমার হল শহীদ সালাম-বরকত হলে বেশকিছু নেপালী ছাত্র ছিল। তারা জাহাঙ্গীরনগরে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করতে নেপালের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আমাদের দেশে এসেছিল। আমি যখন ২০০৬ সালে অনার্স শেষ করি তখন আর নতুন কোন নেপালী শিক্ষার্থী দেখতে পাইনি। ৭০ এর দশকে নাকি আমাদের দেশে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, কোরিয়া থেকেও শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতে আসতো! ৭০ বা ৮০'র দশকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চয় অনেক উন্নত ছিল। যেদেশে বর্তমান সময়ের উন্নত দেশ মালয়েশিয়ার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতে আসতো সেদেশে আজ আমাদের শিক্ষার্থীরা নেপাল, ভুটানেও পড়াশুনা করতে যায় বলে শুনেছি! ২০১০ সালের নিউজউইকের জরিপে আমরা শিক্ষাখাতে অর্জন করেছি ৫৮.৬৩%। কেন এত অবনতি? আমাদের দেশে কি বিশ্বমানের শিক্ষার্থী নেই? এই দরিদ্র দেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনা করতে যেয়ে কতো ভাল রেজাল্ট করছে। গণিত অলিম্পিয়াডের প্রতিযোগিতায় আমাদের শিক্ষার্থীরা কতো ভাল করছে। শিক্ষার্থী ভাল শিক্ষার্থী হিসাবে জন্মলাভ করেনা, তাদের ভাল পরিবেশ দিতে হয়। পড়াশুনার যথোপযুক্ত পরিবেশ, শিক্ষকদের ভাল প্রশিক্ষণ, গবেষণার পরিবেশ তৈরি এগুলোর দিকে মনোযোগ দিলে এমনিতেই পড়াশুনার মান উন্নত হয়ে যাবে। ৭০ এর দশকে আমরা যে অবস্থানে ছিলাম আজ প্রযুক্তির প্রসারের যুগেও ঠিক সেভাবে নিজেদের অবস্থানের অবনতি ঘটিয়েছি।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবস্থানঃ
বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমাদের দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। ঠিক এ সময় আশার আলো নিয়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্খার বাস্তবায়ন কিছুটা হলেও ঘটেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটা এলাকার নয় বরং পুরো দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যে সময় আমরা বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থার পিছিয়ে পড়েছি সেসময় এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টি আমাদের কাছে শুধু আশার আলোই নয় বরং পিছিয়ে পড়া উত্তরবঙ্গের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও রাখতে পারে অনেক অবদান। যার নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত সেই বেগম রোকেয়া নিজেও শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে নারী শিক্ষার আন্দোলনে নেমেছিলেন। নারী শিক্ষার পথিকৃৎ এই বেগম রোকেয়ার নামে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত সেখানে আমরা হরতালের নামে ক্লাশ বন্ধ করিয়ে রাখি। আমরা জাতীয় রাজনীতির কারনে পরপর ৪ দিনেরও বেশি হরতাল করলাম। হরতাল করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রাখলাম। অথচ শিক্ষা আমাদের প্রধান মৌলিক অধিকারগুলোর একটি। আমরা হরতালের নামে নিজেরাই নিজের জাতিকে তার শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখলাম এবং আরও অনেকবার হরতাল করে বঞ্চিত করতেই থাকবো! আমাদের রংপুর শহরে খেরাজ আলী নামের একজন পরমহিতৈষী একটি সাইকেলে করে বই নিয়ে মহিলাদের জন্য বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দিতেন যাতে পিছিয়ে পড়া রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। অনেক কষ্টে তিনি কেরামতিয়া স্কুল মাঠের এক কোনায় একটি পাঠাগার গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৬০ এর দশকে খেরাজ আলী যে মহান কাজের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সেটার বাস্তব প্রতিফলন আমাদের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর। আজ আমাদের উত্তরবঙ্গের মেয়েরা নিজেরাই বাড়ির বাহিরে এসে পড়াশুনা করার সুযোগ পাচ্ছে। ৬০ বা ৭০ দশকের আগে এটা খুব সহজ কাজ ছিলনা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক ছোট পরিসর নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে, কিন্তু শিক্ষার মান ঠিকভাবে ধরে রাখতে পারলে সেটা অনেক দ্রুত বড় পরিসর তৈরি করে দিবে। শ্রদ্ধেয় উপাচার্য জলিল স্যারকে আমি অনুরোধ করবো শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটু বেশি সচেতন থাকতে। আমাদের রংপুরের অনেক শিক্ষার্থী বিদেশের উঁচুমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে তাদেরকে খুঁজে বের করুন। নিজের এলাকার প্রতি সবারই একধরণের দুর্বলতা থাকে, আপনি তাদেরকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেখুন তারা কতোটা আনন্দের সঙ্গে তাদের নিজের এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশের শিক্ষাটাকে কাজে লাগায়। দলীয়করণের উর্ধ্বে উঠে আপনি যদি বিদেশ থেকে ডিগ্রি নেয়া রংপুরের স্থানীয় শিক্ষার্থীদের আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত করতে পারেন সেটা শুধু আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই নয় বরং পুরো দেশের জন্য মঙ্গলময় হবে। এছাড়া প্রতিবছর অন্তত একজন করে হলেও আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাওয়ার সুযোগ তৈরি করুন। তারা বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাধর্মী পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করুক। যারা বিদেশ থেকে ডিগ্রী নিয়ে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত হবে তাদের মাধ্যমে বিদেশের সেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কোলাবোরেশন প্রোগ্রাম তৈরি করার চেষ্টা করুন। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই বিদেশের ভাল প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। অবাধ তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী যেন প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক দিয়ে পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন স্যার। দরকার হলে প্রতিটি বিভাগে বাধ্যতামুলক কিছু কোর্স চালু করুন যার মাধ্যমে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা মিলে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যাপারে দক্ষ হতে পারে, সঙ্গে কম্পিউটারের বেসিক বিষয়গুলো আয়ত্ত্বে নিয়ে আসতে পারে।
উত্তরণের পথঃ
কোন অভিভাবক মা-বাবা কী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরনের অপ্রত্যাশিত পরিবেশে শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দিয়ে দু'চোখ বুজে ঘুমাতে পারেন? শিক্ষার্থীদের উচ্ছৃঙ্খল অবস্থান থেকে ফিরিয়ে এনে শ্রেণী শিক্ষায় অভ্যস্ত করাতে দয়ার হাত প্রসারিত করে এগিয়ে আসবে কে? সাধারণ জনগোষ্ঠী থেকে শুরম্ন করে সুশীল সমাজের কেউ কী শিক্ষাঙ্গনের অস্থিতিশীল পরিবেশ এখনও কামনা করে। তারপরও উচ্চ শিক্ষার পরিবশে অনাকাঙ্ক্ষিত হচ্ছে, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই কলঙ্কিত হচ্ছে। উজ্জ্বল সম্ভাবনায় সোনার সনত্দানরা জড়িয়ে পড়ছে নিয়ন্ত্রণহীন অপকর্মে। ছাত্ররাজনীতির এই হালচাল দেখে শানত্দিকামী জনগণ অকল্যাণের সম্ভাবনায় নানামুখী চিনত্দা-ভাবনায় অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। ছাত্ররাজনীতিকে কী নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না? এ প্রশ্ন সবার মুখে মুখে করছে ঘোরাঘুরি।
পরিশেষে, ২০১১ সালের মধ্যেও আমাদের দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সেরা ৫০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য অন্তর্ভূক্ত হতে পারেনি। আমরা স্থানীয় মানুষরা যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যপারে একটু সচেতন থাকি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে পড়াশুনার সুষ্ঠ পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতা করি তাহলে কে বলতে পারে যে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিন বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে স্থান করে নিবে না! শিক্ষাই একমাত্র জিনিস যেটা কেউ চুরি করতে পারেনা। শিক্ষাই একমাত্র বিষয় যেটার মাধ্যমে অনেক বড় স্বপ্ন দেখা যায় এবং সেসব স্বপ্নের বাস্তবায়ন করাটাও অসম্ভব কিছু নয়। আর আমাদের উচ্চ শিক্ষা হবে “বিশ্ব সেরা শিক্ষা”।
(ইহা আমি দীর্ঘ দিন সময় ধরে বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের বই, জার্নাল ও ব্লগের সাহায্যে লিখেছি)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১২ রাত ১০:৩৮