বিশ্বে খুবই প্রসারিত ভাবে আলোচনা করা হচ্ছে ইস্তাম্বুলে ইরান ও “ছয় পক্ষের” মধ্যস্থতাকারী দলের (রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, চিন ও জার্মানী) প্রতিনিধিদের মধ্যে ইরানের পারমানবিক সমস্যার সমাধান সংক্রান্ত আলোচনার ফলাফল নিয়ে। মন্তব্য হয়েছে নানা ধরনের – একেবারে আশাবাদী (আর একটু হলেই ইরানের পারমানবিক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে) থেকে একেবারেই নৈরাশ্য বাদী (এটা ইরানকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যারা শেষ অবধি যুদ্ধ বাধাবেই) অবধি।
এই প্রসঙ্গে - আমাদের সমীক্ষক ভ্লাদিমির সাঝিনের মন্তব্য।
বোধহয়, সত্য সব সময়ের মতই রয়েছে – ঠিক মাঝখানেই। এখানে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা যেতে পারে সেই বাস্তবকেই, যে বহু ধরনের পূর্বাভাস স্বত্ত্বেও, “ছয় পক্ষের” মধ্যস্থতাকারী দলের ইরানের সঙ্গে আলোচনা কোন রকমের ভাবেই ভণ্ডুল হয়ে শেষ হয় নি। সব দেখে শুনে মনে হয়েছে যে, দুই পক্ষেরই এই “না যুদ্ধ, না শান্তি” পরিস্থিতি এতদূর বিরক্তির কারণ হয়েছে যে, তারা তৈরী আছেন নিজেদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার গলা টিপে ধরতে আর কোন একটা সমঝোতায় পৌঁছতে। এই কথা সত্য যে, এখনও বোঝা যাচ্ছে না, কে কি করতে তৈরী রয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আলি আকবর সালেখি বুঝতে দিয়েছেন: তেহরান তৈরী রয়েছে শতকরা তিন শতাংশের বেশী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা নিয়ে কিছু একটা ছাড় দেওয়ার জন্য, যা ইরানের বিরুদ্ধে থাকা পক্ষ দের অশান্তির জন্য প্রধান কারণ হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন: “আমরা সমস্ত প্রশ্নই খুব দ্রুত ও সহজ ভাবেই বাগদাদের আলোচনার সময়ে মিটিয়ে ফেলতে পারি”। এটা – একটা সংযোজনের চিহ্ন সমেত খবর।
ইরানের প্রস্তাব ব্যাখ্যা করে রাশিয়ার সামাজিক – রাজনৈতিক গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর ভ্লাদিমির ইভসেয়েভ বলেছেন:
“ইস্তাম্বুলে যে আলোচনা হয়েছে তাতে ইরানের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মানে হল, যে, তেহরান তৈরী আছে ইউরেনিয়াম শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করার পরিমান কম করতে। এই প্রসঙ্গে ইরান রাজী হয়েছে যে বাগদাদে আগামী ২৩শে মে পরবর্তী আলোচনার আগে যাতে আন্তর্জাতিক ও ইরানের বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়ে ঠিক করে নেন, যে ঠিক কতটা শতকরা ২০ ভাগ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ইরানের প্রয়োজন রয়েছে নিজেদের শান্তিপূর্ণ অসামরিক ক্ষেত্রের পারমানবিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য। আপাততঃ সম্পূর্ণ ভাবে বোঝা যায় নি, পশ্চিম একই সঙ্গে কোন পদক্ষেপ নেবে কি না আর নিষেধাজ্ঞা কম করবে কি না। এটা বাগদাদেই কোন একটা সমঝোতায় পৌঁছনোর জন্য একটা ভাল ভিত্তি হতে পারত। কারণ, যদি এখন যদি ইতিবাচক গতি বজায় রাখা না হয়, তবে আবার সেই কানা গলির পরিস্থিতিতে পৌঁছতে হবে, যা আমরা এই ইস্তাম্বুল বৈঠকের আগে দেখেছি”।
বিয়োগ চিহ্ন সমেত যে খবর আছে – তা হল সেই শর্ত, যা তেহরান এখন সামনে রেখেছে। ইরানের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর দেশ পারমানবিক পরিকল্পনা সংক্রান্ত সমস্ত প্রশ্নের অবসান করতে তৈরী রয়েছে, কিন্তু তা হতে পারে শুধু একটি শর্তেই যে, তার আগে পশ্চিম সমস্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে শুরু করবে। কিন্তু এই ধারণা কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সঙ্ঘ মেনে নেবে? পররাষ্ট্র সচিব হিলারি ক্লিন্টন এর মধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে, কোন রকমের কাজ শুরু তখনই ঠিক করা হবে, যখন ইরানের তরফ থেকেও প্রত্যুত্তরে পদক্ষেপ দেখতে পাওয়া যাবে। এটা নীতিগত ভাবে অর্থ করা যেতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে অবস্থান লঘু করা হয়েছে। আর তা “ইরানের কানা গলি” থেকে বের হওয়ার জন্য রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভ প্রস্তাবিত ধাপে ধাপে বের হওয়ার পরিকল্পনার সঙ্গে মিলে গিয়েছে।
আজ মস্কো শহরের এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাশিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ এই প্রসঙ্গে বলেছেন: “ইরানের সঙ্গে আলোচনার জন্য যে সমস্ত বিষয় বস্তু রয়েছে, তা হওয়া উচিৎ দুই পক্ষেরই গ্রহণযোগ্য পারস্পরিক অভিমুখে এগিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত রকমের। আমরা আজ ইস্তাম্বুলের সমঝোতার মতো খুব একটা খারাপ নয় এই ধরনের একটা সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ার ট্রাম্পলিন পেয়েছি, যা সকলে মিলে কাজ করার জন্য ভাল”।
অবশ্যই, খুবই বোকামি হয়ে যাবে মনে করলে যে, বাগদাদের সাক্ষাত্কারে সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু ইস্তাম্বুলে ইতিমধ্যেই অনেক কিছু করা হয়েছে। কিন্তু, ইতিবাচক লক্ষণ স্বত্ত্বেও, বাগদাদের বৈঠকের আগে মনে তো হয় না যে, কোন রকমের মূল গত ভাবে পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যাবে।
কিন্তু এমন হতে পারে যে, ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এই বিষয়েই সীমাবদ্ধ যে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কমে গিয়েছে (অন্তত পক্ষে, মে মাসের শেষ অবধি)। এটা বিরোধী পক্ষ দের সময় দেবে পরিস্থিতি ভাল করে খতিয়ে দেখার ও বাগদাদের বৈঠকের জন্য খুবই ভাল করে তৈরী হওয়ার জন্য।