…..এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলাম.. নাহ।আমার চিনতে কোন ভুল হচ্ছে না।মুখ দাঁড়ি গোঁফে ভর্তি থাকলেও চেহারায় তেমন কোন পরিবর্তন আসে নি। এটা রাতুল না হয়ে যায় না।বেডে ঘুমিয়ে আছে ও।
‘দেখ, রাতুল তুই যত কথাই বলিস ইভা মেয়েটা কে কিন্তু আমার মোটেও ভালো মনে হয় না। সে দিন ও ওকে আমি দেখলাম রাজিবের সাথে হেসে হেসে কেমন করে যেন কথা বলছে।’আমি রাতুল কে এ কথা বলতেই ওর চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল ।ও বললো ‘একটা মেয়ে তো একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতেই পারে।এতে দোষের কী আছে। শুরু থেকেই দেখছি ইভা কে তুই দেখতে পারিস না।কী করেছে ও তোর।আমি কিছু বলতে গেলেই ও আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো ‘খবরদার, তোর মুখে যেন ইভা সম্পর্কে খারাপ কোন কথা না শুনি।ওর সম্পর্কে খারাপ কোন বদনাম আমি সহ্য করবো না।’ ও চোখ লাল করে বলল, ‘আসলে ইভার মত সুন্দরী মেয়ের কাছে পাত্তা না পেলে অনেকে বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথা বলে।’ রাতুলের এ কথায় আমার বুকে যেন আগুন ধরে গেল।ছি ছি রাতুল সামান্য একটা বাজে মেয়ের জন্যে তুই আমাকে এতো বড় কথা বললি।‘হা বললাম।তোর সম্পর্কে আমার সব জানা হয়ে গেছে।’এ কথা শুনে আমি আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারলাম না।ওকে মারার জন্যে এগিয়ে আসলাম।রাতুলও এগিয়ে আসল।হঠাৎ মাঝখানে মিনহাজ এসে আমাদের দুই জনকে আলাদা করা দিল।এভাবেই আমাদের ১২ বছরের বন্ধুত্বের অবসান ঘটলো।এর এক মাস পরেই ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট দিল। ভার্সিটির সমাবর্তনের দিনেও আমরা একে অন্যের দিকে তাকালাম না।
হঠাৎ ডাক্তার এর আগমনে পাঁচ বছর আগের অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আসলাম।আমাকে ডেকে নিয়ে গেল তার কক্ষে।মেডিকেল রিপোর্ট সব চেক করে বললো ‘সব ঠিক আছে।আপনি উনাকে এইবার বাড়ী নিয়ে যেতে পারবেন।’কিছু দিন আগে অফিস থেকে বাড়ী ফিরতেই রাতুল হঠাৎ আমার গাড়ির সামনে এসে পরে আর ধাক্কায় ছিটকে রাস্তার এক পাশে পড়ে।আমি দ্রুত ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। তাড়াহুড়োর মধ্যে তখন চেহারার দিকে লক্ষ করি নি।ডাক্তার বললো, ‘চলুন রাতুল সাহেবের কাছে যাওয়া যাক’। এতোদিন ওকে দেখতে আসলেও আমি ও জাগ্রত অবস্থায় ওর মুখোমুখি হই নি। ওর কেবিনে ঢুকতেই ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। সাথে সাথে ওর চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো।আমি ও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।ডুকরে কেঁদে উঠলাম দুজনেই।
মেঘনার তীরে বসে আছি আমি আর রাতুল ।পাঁচ বছর আগে যেখানে বসতাম আমরা।ওর থেকেই পরে শুনলাম ইভার সাথে ওর রিলেশন ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পরে ছয় মাস স্থায়ী হয়েছিল।রাজিব কেই মেয়েটা বিয়ে করেছিল।এরপর থেকে রাতুল কেমন যেন হয়ে যায়।হঠাৎ করে পিছু থেকে কে যেন ধাক্কা মারলো আমাকে।সাথে সাথে পড়ে গেলাম নদীতে।পিছনে তাকিয়ে দেখলাম রাতুল মিটিমিটি হাসছে।আমি দ্রুত সাতঁরে উপরে উঠে ওকে ধরতে এগিয়ে গেলাম । ও দৌড়তে শুরু করলো।আমাদের সেই দুষ্টমি আবার শুরু হলো।মনে মনে বললাম মেঘনার স্রোতধারার মত আমাদের বন্ধুত্ব যেনো বাকি জীবন চলতে থাকে………………..
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৩১