লোভ মানুষের অধপতনের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়। যেহেতু লোভ একটি নৈতিক ত্রুটি, তাই বর্তমানে এই বিষয়টি উপর আলোচনা করা খুবই প্রয়োজন, আর তাই এখানে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হল। লোভ মানুষের জীবন থেকে সুখ কেড়ে নেয়। আল্লাহ তায়ালা যে সকল নেয়ামত তাকে দান করেছেন তার শুকরিয়া কখনই সে আদায় তো করেই না, বরং আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন তার চেয়ে সে বেশী চায় এবং যদি সেটা পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে সে আবার নতুন করে আর একটি জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দেয়। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যক্তি একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে, যদি সে লোভী হয় এবং আল্লাহর শুকুর গোযার না হয় সবসময় তার এই চিন্তা থাকে যে, আরো উন্নত একটি বাড়ি ভাড়া নিতে হবে। যখন পূর্বের চেয়ে আরো উন্নত বাড়ি সে ভাড়া নিতে সক্ষম হয়, তখন সে আবার নতুন করে অন্যের সম্পত্তির প্রতি দৃষ্টি দেয় যে, এবার যদি অমুকের মত একটি সুন্দর বাড়ি বানাতে পারতাম। এভাবেই চলতে থাকে তার লোভের চক্র। আর কখনই সে এ সমস্ত নেয়ামত যা আল্লাহ্ তাকে দিয়েছে তার শুকুর আদায় করে না।
কিন্তু আল্লাহ্র মু’মিন বান্দারা যে সকল নেয়ামত তাদেরকে দান করা হয়েছে সেগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে ও তাতেই সন্তুষ্ট থাকে। আর যদি পরবর্তীতে কিছু তার সম্পদ বৃদ্ধি পায় তবে তার জন্য সে আল্লাহর দরবারে পূর্বাপেক্ষা অধিক শুকরিয়া আদায় করে। আর ভূলেও সে অন্যের সম্পদের প্রতি দৃষ্টি দেয় না। মু’মিনদের এ দলটি সর্বদাই সুখে ও শান্তিতে বসবাস করে। কেননা তারা শুধুমাত্র আল্লাহর নৈকট্য বৈ আর কিছু চায় না।
অসংখ্য রেওয়ায়েত লোভের নিন্দায় বর্ণিত হয়েছে। যার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল।
قال الإمام الصادق (ع) : حُرِمَ الحريص خصلين و لزمتهُ خصلتان: حُرِمَ القناعةَ فافتقدَ الرّاحة وَ حُرِمَ الرِّضا فافتقدَ اليقين.
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন : ‘লোভী দু’টি উৎকৃষ্ট গুণ হতে বঞ্চিত, ফলশ্রুতিতে সে দু’টি দোষের অধিকারী; সে পরিতৃপ্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত ফলে প্রশান্তিকে হাতছাড়া করেছে, [আর] সন্তুষ্টি হতে বঞ্চিত ফলে বিশ্বাসকে খুইয়েছে’।
قال الإمام علی (ع(: أغنی الأغنياءِ مَن لَم يَکُن لِلحرصِ أسيراً.
ইমাম আলী (আঃ) বলেছেন : ‘সেই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা ধনি যে লোভের বন্দি নয়’।
الإمام الصادق (ع) : کانَ أميرُ المؤمِنِين صلواتُ الله عليه يقول: ابن آدم، إن کُنت تُرِيدُ مِن الدّنيا ما يَکفِيک فإِنَّ أيسر ما فِيها يَکفِيک، وَ إِن کنت إنّما تُرِيدُ ما لا يَکفِيک فإنَّ کلَّ ما فِيها لا يَکفِيک.
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন : আমিরুল মু’মিনীন (আঃ) বলতেন যে, হে আদমের সন্তানেরা! যদি তুমি দুনিয়া হতে পরিমাণ মত চাও তাহলে সেটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যদি পরিমাণের চেয়ে বেশী চাও, সমস্ত দুনিয়াও তোমার জন্য যথেষ্ঠ নয়’। (আল কাফী, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩১৬, হাদীস নং ৭)
লোভের উত্পত্তি কোথা থেকে এর সংজ্ঞা স্বয়ং মহানবী (স.) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসূল (স.) হতে বর্ণিত ঐ হাদীসটি নিম্নে উল্লেখ করা হল :
قال رسول الله (ص) : اعلم يا علی، أنَّ الجُبنَ و البخلَ و الحِرصَ غَريزةٌ واحِدةٌ، يَجمَعُها سوءُ الظَّنِّ.
রাসুল (সঃ) বলেছেন : ‘হে আলী জেনে রাখ! ভয়, কৃপণতা ও লোভ একই প্রকারের, আর তাদের মূলে হল খারাপ ধারণা পোষন করা’। (এলালুশ শারায়ে, মুন্তাখাবে মিযানুল হিকমাহ, পৃষ্ঠা ১৪৪, হাদীস নং ১৫০৫)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ২:২৫