আমরা স্বল্পে সন্তুষ্ট, আবার স্বল্পেই হতাশ হয়ে পড়ি। আমরা কোথাও গিয়ে সামান্য বিড়ম্বনায় পড়লে প্রচণ্ড সমালোচনামুখর হয়ে উঠি, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে কাজটি হাসিল হলে বেমালুম সব ভুলে যাই। আমাদের দর্শন স্বল্পায়ু। চেতনা মুমূর্ষু।
নৃতাত্ত্বিকভাবে মাঝারি গড়ন আমাদের। এ জাতি সংকর জাতি। বিভিন্ন ধরণের রক্ত মিশে এ জাতির উৎপত্তি। জাতিগত ভাবে বাঙালি মৌলিক জাতি নয়। তাই মৌলিক চিন্তাও আমাদের মাথায় আসে না। আমাদের শিল্প-সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের অনুসারী মাত্র কিংবা মামুলী ভাবালুতা কিংবা ভাববাদ প্রভাবিত। বস্তুবাদী দর্শনও এখানে এক পর্যায়ে ভাববাদী দর্শনে পরিণত হয়।
বাঙালি আত্ম-বিনাশী, হিংসুটে, পরশ্রীকাতর। মানসিক ও শারীরিক উভয়ভাবেই অলস। এখানে মেধার মূল্য কম, দৃশ্যমান শ্রমের মূল্য বেশি। এখানে বিদেশি জিনিস মানেই ভালো জিনিস, স্বদেশি মানে ভেজাল জিনিস। এখানে গ্রামে-গঞ্জে রাজনীতি আছে, কিন্তু কোথাও রাজনীতিমনস্কতা নেই। উন্নত চিন্তার ছোঁয়া মাত্র নেই।
‘কিচ্ছু হবে না, পারবে না, অসম্ভব ব্যাপার’—এগুলো বাঙালির উৎসাহের ভাষা। নিজে হতাশ থাকা এবং অন্যকে সেই হতাশায় সংক্রমিত করা আমাদের একটি প্রিয় কর্ম।
এতো কিছুর পরেও বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র বাঙালি অধ্যুষিত দেশ। এক জাতি, ভাষাও প্রায় এক। ইতিহাসে বাংলাদেশই বাঙালি কর্তৃক শাসিত প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র। দেশ স্বাধীন হলো প্রায় বিয়াল্লিশ বছর। মানব সভ্যতার বয়স হাজার বছর। সে হিসাবে এ দেশের বয়স খুব বেশি নয়।
আমাদের জাতিগত হতাশা রোগটিকে কিছুটা নিয়িন্ত্রণে আনা গেলে এ দেশের উন্নয়নের গতি আরও বৃদ্ধি পেতো। আমাদের সেই বুদ্ধিজীবীরা কই? জাতিকে দিকনির্দেশনা দেবার মোক্ষম সেই আশা জাগানিয়া মন্ত্রগুলো কে শোনাবে? লোহা টকটকে লাল হয়ে আছে, আঘাত করার এখনই সময়।
বুদ্ধি-প্রতিবন্ধীদের ‘বুদ্ধিজীবী’ পোস্টে ডেপুটেশনে থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে বহু আগেই।