-তোমাকে একটা কবিতা শোনাই
‘ঈশানকোণে মেঘ জমেছে
মেঘের পরে মেঘ
স্বপ্নগুলো মেঘের ভেলায়
হারিয়ে যাবে এই অবেলায়
একলা আমি একলা মানুষ
উড়াই উড়াই স্বপ্ন ফানুস
পলাশ শিমুলের এই গোলাপী আকাশ
বিষণ্ণতায় সাদাকালো
দিচ্ছে বিদায় ধূসর সিঁদুর
হারাবো হারাবো আমি যাবো বহুদূর
পথের মাঝে পথ হারিয়ে
স্বপ্নহারা পথিক হয়ে
যাবো অচিনপুর’।
-বিষণ্ণ, কিন্তু সুন্দর!
-ঠিক তোমার মতো।
-তাই বুঝি? আপনি জানেন আমি দেখতে কেমন?
-জানি না বলছো? আমি সব জানি।
-কি করে জানলেন, শুনি?
-শুনবে? তবে শোন, কাল শেষ রাত্তিরে স্বপ্নে এসেছিল স্বয়ং কবিগুরু রায়গুণাকর। ওঁর সাথে অনেক কথা হল; কবিতা নিয়ে, সাহিত্য নিয়ে, তোমাকে নিয়ে...
-আমাকে নিয়ে? কি বললেন উনি?
-‘কে বলে শারদ শশী সে মুখের তুলা।
পদনখে পড়ি তার আছে কতগুলা।।’
-হয়েছে! আপনি বানিয়ে বানিয়ে সুন্দর মিথ্যে বলতে পারেন দেখি?
-তুমি কবি! তোমার হৃদয় ভরা শব্দের ফুলঝুরি, আমার আছে শুধু আবেগ!
-আপনার লেখা কবিতা এটা?
-আমার আর কবিতা লিখে কাজ কি বল? তুমি আমার কবিতা গাছ! প্রতিদিন একটি করে পাতা প্রসাদ দিও, ওতেই চলে যাবে আমার।
-তারপর?
-তারপর? যেদিন শেষ পাতাটি আমার হবে, আমিও হারিয়ে যাবো, হারিয়ে যাবো না ফেরার দেশে।
-আপনি এত নিষ্ঠুর কেন বলুন তো?
-তুমিও তো কম যাও না।
-কেন, আমি আবার কী করেছি?
-এই যে আমাকে আপনি বলে বলে আয়োজন করে কষ্ট দিচ্ছ।
-ওহ এই কথা! তুমি তো আচ্ছা পাগল মানুষ!
-আমার কী দোষ বলো? কেবল তুমি সামনে এলেই আমার সব এলোমেলো হয়ে যায়। আমি আর আমার থাকি না।
-তুমি একটা কলেজে পড়াও। এভাবে পাগলামি করলে লোকে কি বলবে, শুনি?
-কেন? মিসির আলীদের কি কখনো হিমু হতে ইচ্ছে করে না?
-আচ্ছা, ঠিক আছে! মাঝে মাঝে হিমু হতে পার তুমি, তবে সব সময় নয়। মনে থাকবে?
-তুমি আমার হবে কলাপাতা মেয়ে? পৌষের ভোরের শিশির হয়ে ছুঁয়ে যাবো তোমার শরীর, হৃদয়।
-যদি না হই?
-না হলেও ক্ষতি নেই। সোনালী ঘাস হয়ে মিলিয়ে যাবো ধূসর ঊষরে।
(পূর্ণেন্দু পত্রীর কথোপকথন অবলম্বনে।)