সকালে ঘুম থেকে উঠে অভ্যাসবশত রিধি মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখেই ফেসবুকে লগ ইন করল। সে ভুলেই গিয়েছিল সে ফেসবুকে না ঢোকার সপথ করেছে। ঢুকেই আগে ম্যাসেজ চেক করতে গেল। একুশটা ম্যাসেজ জড় হয়ে আছে। কাউকে সে চেনে না। বিরক্তিকর ব্যাপার। অচেনা মানুষ যারা কিনা তার ফেসবুক আইডিতেই নেই, তারা ম্যাসেজ করছে কেন? কোন ম্যাসেজ দেখা যাবে না। তাহলে আবার ম্যাসেজ করবে।
নোটিফিকেশন খুব একটা নেই। আগে ত্রিশ চল্লিশটা থাকত। সব অভিকের স্ট্যাটাস এর নোটিফিকেশন। ক্লোজ ফ্রেন্ড করা ছিল। ওর সব স্ট্যাটাস সবার আগে রিধি দেখত। রিধির আগে কেউ না।
রিধির হঠাৎ করে সব মনে পরে গেল। তার তো ফেসবুকে আসার কথা ছিল না। অভিকের আইডিতে গেল। আইডি টা খাঁ খাঁ করছে। ওকে আর ম্যাসেজ করলে রিপ্লে আসবে না। ওয়াল পোস্ট করলে কমেন্ট আসবে না। কিচ্ছু হবে না। কয়েকজন দেখি, শুধু শুধু ওর পুরানো স্ট্যাটাস এ কমেন্ট করে ভরে ফেলছে। এমন ভাবে কমেন্ট করছে যেন, একটু পর অভিক রিপ্লে দিবে। অথচ সবাই জানে, ও আর রিপ্লে দিতে পারবে না। অসহ্য। তবুও রিধি কমেন্ট গুলো পড়ছে।
রিধি আর রুমাল ইউজ করবে না। চোখ জ্বলে। চোখের পানি মুছতে মুছতে এই অবস্থা। আজ দোকান থেকে টিস্যু পেপার আনাতে হবে।
ও আবার ইনবক্স এ গেল। অভিক এর সাথে চ্যাট দেখছে। চোখ থেকে পানি পরছে। পরুক। আর মুছবে না। পরে বন্যা হয়ে যাক। যদি অভিক এর দেহ পাওয়া যেত, তাহলে ওর পাশে বসে হয়ত রিধি প্রলাপ বকত। নাও বকতে পারত। বোঝা যাচ্ছে না। গতকাল অভিক এর বাসায় গিয়েছিল। ওদের বাসায় সবাই রিধি কে চেনে। রিধির বাসায় কেউ অভিক কে চেনে না। তাই রিধি ওর ফ্রেন্ড শাম্মির সাথে গিয়েছিল। অভিক এর মা ওকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদল। রিধি কাঁদছিল না। তবে চোখের পানিও আটকাতে পারছিল না।
অভিক কে আবার ম্যাসেজ করল। অনেক গুলো এর আগেও করেছে। সিন হয়নি। হওয়ার কোন সম্ভাবনাও নাই।
প্রথম দিকে অভিক এর সাথে পরিচয় হওয়ার আগে এরকম হত। চার পাঁচটা ম্যাসেজ করলে হয়ত সিন হত। কখনও হয়ত রিপ্লে করত। তখন রিধির খুশির সীমা থাকত না। আবার যখন ম্যাসেজ সিন হয় না, তখন খুব রেগে যেত। ভাবত, এহ্। ভাব। কি এমন আমার লেখক হয়েছে, ম্যাসেজ দেখার সময় পায় না। আর ম্যাসেজই করব না। পরে আবার ঠিকই ম্যাসেজ করত।
একদিন হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর একটা লেখা নিয়ে আলোচনা করার প্ল্যান করল রিধি। তারপর ওদের মধ্যে ঘনিষ্ঠটা বাড়ল। যা পরবর্তীতে প্রেমে রূপান্তরিত হয়।
আজকে বিছানায় বসে ঘুম থেকে উঠে মুখ-চোখ না ধুয়েই পুরনো কথা গুলো ভাবছে রিধি। আর ম্যাসেজ করছে। সব ম্যাসেজে একটাই বাক্য। "আমি তোমাকে এখনও ভালবাসি। বাসব।" বারবার এই ম্যাসেজ করছে রিধি।
এটা ডিজিটাল "প্রলাপ বকা" বলা যেতে পারে। বকা হবে না। প্রলাপ লেখা।
যখনই আইডি টা দেখছে, মনে হচ্ছে, অভিক বেচে আছে। এখনই একটা মন খারাপ করা স্ট্যাটাস দিবে। আর ক্লোজ ফ্রেন্ড নোটিফিকেশন আসবে।
ব্যাপারটা এই রকম যেন, অভিক হচ্ছে 'মানুষ অভিক' আর ওর আইডি হচ্ছে 'রোবট অভিক'। রোবট অভিককে চালাত মানুষ অভিক। রিধি প্রথমে রোবট অভিক এর প্রেমেই পরেছিল। পরে মানুষ অভিকটার সাথে পরিচয়। রিলেশন। এখন মানুষ অভিক আর নেই। রোবট অভিক শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওকে চালানোর জন্য মানুষ অভিক নেই। ওপারে চলে গেছে। রোবটটাকে নিয়ে যায়নি। রোবটটা বারবার ওর অনুপস্থিতির জানান দিচ্ছে। এই যে রিধি, শুনতে পাচ্ছ? আমি নেই। আমি মানে আমাকে যে চালায়, সে। আমাকে এত কিছু যে জিজ্ঞাস করছ, উত্তর পাবে না তো। আমি তো আর তোমাকে ভালবাসি বলতে পারি না।
অভিক শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আর রিধি তাকিয়ে আছে ওর চোখের দিকে। চোখের মিটি পরার অপেক্ষায় আছে হয়ত। সেভাবেই তাকিয়ে দেখছে রিধি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৩৬