সেনাবাহিনীকে যখনই আইন শৃংখলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বা তাদের দিয়ে কোন আইন শৃংখলা বাহিনী করা হয়েছে তখনই জনগনের টাকায় কেনা অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে দেশের জনগণ হত্যা করেছে পাকিস্তানী বাহিনীর মত। সত্য কথা বলতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর চেয়েও নিৎকৃষ্ট কারনে, কারন ওরা রাষ্ট্রের জন্য বাংঙালী হত্যা করেছিল কিন্তু এরা করে পয়সার জন্য, ধান্দার জন্য, নেতার জন্য। কখনও যেকাউকে ধরে নিয়ে, ঘরে অস্ত্র রেখে, মামলার ভয় দেখিয়ে। উদাহরন হিসাবে অপারেশন ক্লিন হার্ট, রেবের ক্রসফায়ার ইত্যাদী। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে যত মানুষ হত্যা করা হয়েছে তার ৯৫% কোননাকোন ভাবে এই বাহিনী করেছে।
খবরঃ ‘আমি লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য ইটভাটায় কাজ করছি। মানুষের কাছ থেকে জামাকাপড় চেয়ে নিয়ে কলেজে যাই। র্যাব কোনো কথা না শুনেই আমার পায়ে গুলি করে বলল, “তুই সন্ত্রাসী”।’
ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদছে এক তরুণ। নাম লিমন হোসেন। বয়স ১৬ বছর তিন মাস। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তার থাকার কথা ছিল এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রে। কিন্তু সে শুয়ে আছে হাসপাতালে। তার বাঁ পা কেটে ফেলা হয়েছে। কারণ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছে তার ওই পায়ে। র্যাবের ভাষায় ‘সন্ত্রাসী’ এই তরুণের চিকিৎসা চলছে গ্রামের মানুষের আর্থিক সহায়তায়।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের দিনমজুর তোফাজ্জল হোসেনের ছোট ছেলে লিমন। কাঠালিয়া পিজিএস কারিগরি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সে। গত ২৩ মার্চ বিকেলে লিমন মাঠ থেকে গরু আনতে বাড়ির বাইরে যায়। পথে স্থানীয় শহীদ জমাদ্দারের বাড়ির সামনে র্যাব-৮-এর একটি দল তাকে সামনে পেয়ে শার্টের কলার ধরে নাম জিজ্ঞেস করে। লিমন নিজেকে ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু র্যাবের এক সদস্য কথাবার্তা ছাড়াই তার বাঁ পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে দেন। লিমন সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিমন প্রথম আলোকে বলে, ‘আমি গরিব বাবা-মায়ের সন্তান। কষ্ট করে লেখাপড়া করি। লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য বাড়ির পাশে ইটভাটায় কাজ করছি। মানুষের কাছ থেকে জামাকাপড় চেয়ে নিয়ে কলেজে যাই। র্যাব কোনো কথা না শুনেই আমার পায়ে গুলি করে বলল, “তুই সন্ত্রাসী”।’
এএসবি ইটভাটার অন্যতম মালিক মো. নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিমন আমাদের ইটভাটায় মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করত। তাকে দৈনিক ২০০ টাকা মজুরি দেওয়া হতো।’
লিমনের বাবা তোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘র্যাব আমার নিষ্পাপ পোলারে গুলি কইর্যা তারে সন্ত্রাসী বানাইছে। হ্যারপর রাজাপুর থানায় দুইডা মামলা দেছে। মামলায় ল্যাখছে, আমার পোলার দারে (কাছে) অস্ত্র পাইছে। সব ডাহা মিথ্যা।’ তিনি বলেন, র্যাব মামলায় লিমনের বয়স ২৫ বছর লিখেছে। কিন্তু স্কুলের সনদ অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১৯৯৫ সালের ১৫ জানুয়ারি।
লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম গত রোববার ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ওই দিন র্যাবের একটি দল গ্রামের শহীদ জমাদ্দারের বাড়ি ঘেরাও করে। ওই বাড়িতে কাউকে না পেয়ে চলে যাওয়ার সময় পথে লিমনকে পেয়ে তার পায়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ লিমনকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি কাঁথা চাপা দিয়ে দু-তিন ঘণ্টা ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখা হয়। সন্ধ্যার পর লিমনকে নিয়ে যাওয়া হয় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে ২৫ মার্চ ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে আনা হয়।
সাতুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার হুমায়ুন কবীর (৫২) বলেন, ‘লিমন যদি সন্ত্রাসী হতো তাহলে গ্রামের মানুষ চাঁদা তুলে তার চিকিৎসার খরচ বহন করত না। গ্রামের সবাই তার জন্য সাহায্য করেছে। যাদের কাছে নগদ টাকা নেই, তারা চাল-ডাল দিচ্ছে।’
স্থানীয় রিকশাচালক লিটন (৩০) বলেন, ‘আমি লিমনের জন্য ৫০ টাকা দিছি। লাগলে আরও দিমু।’
সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘লিমন বাচ্চা ছেলে। সন্ত্রাস, অন্যায় এসবের মধ্যে সে নেই। র্যাব অকারণে তাকে গুলি করেছে।’
লিমনের কলেজের অধ্যক্ষ মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘লিমন অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির ছেলে। কলেজের ভর্তির তথ্য অনুযায়ী তার বয়স মাত্র ১৬ বছর তিন মাস। র্যাব একটি নিরীহ তরুণকে গুলি করে সন্ত্রাসী সাজানোর চেষ্টা করছে।’
র্যাবের কথিত অভিযানে নেতৃত্ব দানকারী কর্মকর্তা ডিএডি মো. লুৎফর রহমানের সেই গৎবাঁধা দাবি, লিমন সন্ত্রাসী মোরশেদের সহযোগী। সে র্যাবের ওপর গুলি করেছে। ক্রসফায়ারে সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত অবস্থায় উদ্ধারকালে তার পাশ থেকে একটি পিস্তল পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় ডিএডি মো. লুৎফর রহমান বাদী হয়ে রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করেছেন। একটি অস্ত্র আইনে অপরটি সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে। দুটি মামলাতেই লিমনকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলাতেই পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মোরশেদ জমাদ্দারসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
জানতে চাইলে দুটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, লিমনের বিরুদ্ধে আগেও কোনো মামলা ছিল না। এই দুই মামলায় এখন পর্যন্ত কোনো কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মামলার এজাহারে র্যাব যে দাবি করেছে, তা সেই পুরোনো গল্প। ‘র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে লিমন ও তার সহযোগীরা র্যাবের ওপর গুলিবর্ষণ করে। র্যাব আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা গুলি চালায়। সংঘর্ষের পর একটি পিস্তলসহ আহত অবস্থায় লিমনকে উদ্ধার করা হয়।’
র্যাব-৮-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মনিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঝালকাঠি এলাকায় মোরশেদ নামের একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী আছে। সে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আবার এলাকায় ফিরে এসেছে। এমন খবর পেয়ে র্যাবের একটি দল তাকে ধরতে অভিযান চালায়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। এতে লিমন নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়।
লিমনের বয়স কত—জানতে চাইলে মনিরুল হক বলেন, মামলা দায়েরের সময় অনুমানের ভিত্তিতে বয়স উল্লেখ করা হয়। এ কারণে কমবেশি হতে পারে। লিমনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকার পরও কেন গ্রেপ্তার করা হলো—জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে এলাকার সন্ত্রাসী মোরশেদের সহযোগী।
পঙ্গু হাসপাতালের ওয়ার্ডে গতকাল ঢুকতেই চোখে পড়ল লিমনকে। কাঁদছে অঝোর ধারায়। পরীক্ষা দিতে না পারার কান্না। তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন পাশে থাকা বাবা, খালা আর তার পাহারায় থাকা পুলিশের দুই সদস্য। ওয়ার্ডের অন্য সব রোগী ও তাদের স্বজনেরাও জড়ো হয়েছেন। কিন্তু কারও মুখে সান্ত্বনার ভাষা নেই।
পরিবারের লোকজন জানান, নিরীহ নিপাট ছেলে বলেই তার পরিচিতি গ্রামে ও কলেজে। পরিবারের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। সারা দিন দিনমজুরি, রাতে লেখাপড়া করে এইচএসসি পর্যন্ত এসেছে লিমন। এসএসসিতে জিপিএ-৪ পেয়েছিল। এইচএসসিতে আরও ভালো করার আশায় প্রাণপণ প্রস্তুতি নিয়েছিল। সূত্র
উল্লেখ্য এই বাহিনী মূলত সেনাবাহিনী দিয়ে গঠিত বাহিনী। এর নীতি, আদর্শ ও জনবল প্রায় সবটাই সেনা বাহিনী থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৪:৫৭