মাতৃঋণ - পরিশোধিত
ক'টা বাজে?
নিজের কাছেই প্রশ্ন করে রঙ্গন। বইতে মুখ গুঁজলে ওর আর সময়ের হিসেব থাকে না। মাথার উপরেই পেল্লাই ঘড়ি ঝুলছে দিব্যি। কিন্তু দেখার ইচ্ছে নেই। ইদানীং ইচ্ছে গুলো কেমন যেন ভোঁতা হয়ে গেছে।
২টো ৩৫। চেনা পুরুষালী কন্ঠস্বর।
নিশ্বাস আটকে যায় রঙ্গনের। কই ঘরে তো কেউ নেই। জানলার দিকে তাকায়। ধূসর নীল পর্দাটা আবছা আলোয় পরাবাস্তব মনে হয় ওর কাছে। চেয়ার ছেড়ে উঠে আসে। ক্যাচক্যাচ করে যেন চেয়ারটা বিরোধীতা করে ওঠে। যেন ঘোর অমঙ্গল হবে ওকে ছেড়ে গেলে। ইতস্তত ঘুরে জানালার দিকে এগিয়ে যায়। মাথার মধ্যে এক অদ্ভুত শূন্যতা। তার মধ্যে জায়গা নিচ্ছে উদ্ভট সব চিন্তা। ভয় যে একেবারে করছে না তা নয়। তবে রঙ্গন ভীতু নয়। জানলার পাল্লা সরিয়ে আকাশ দেখে। কালো কুচকুচে। যেন অভিশপ্ত। হয়তো মনের ভুল। নিজেকে বোঝায়।
বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। দেহ ভার হয়ে আসে। কোথাও যেন তলিয়ে যায়। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। মুখ হা করে বড় বড় দম নেয়। সারা শরীরে আঠালো তরল। ঘেন্না হয় নিজেকে। নাক মুখ দিয়ে উগ্রে দিচ্ছে রক্ত।
বাবার হাত ধরে বাবু সেজে এই প্রথম বেড়াতে বের হয়েছে রঙ্গন। সে কি আনন্দ! বাবার মতো সেও পাঞ্জাবি পড়েছে। কলাপাতা রঙের। চুলগুলো পরিপাটি। মুখে একগাল হাসি। মাঝে মাঝেই বাবার দিকে তাকায়। কি অদ্ভুত নির্ভরতা। অচেনা মুখগুলোতে ভয় নেই। বাবা আছে তো। আরেকটু সরে যায় বাবার দিকে। আহ! কি অদ্ভুত গন্ধ। বাবাকে বড্ড ভালোবাসে সে।
এই রঙ্গন। রঙ্গন। হতচ্ছাড়া। এতো বেলা করে ঘুমায়! একজন তো মরে বাঁচিয়েছে। আর এই নবাব এখনো জ্বালিয়ে মারছে। কবে যে আমার মরণ হবে। গজগজ করতে করতে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ান রঙ্গনের মা। ওহ। ভুল হলো উনি তো এখন মিসেস রাহমান।
ঘুম ভাঙে। মাথাটা বেশ পরিষ্কার। ও জানে ওকে কি করতে হবে। কাঠের বাক্সে সযত্নে লুকানো দড়িটা বের করে। আহ সেই পরিচিত গন্ধ। রান্না ঘরের দিকে এগোয় রঙ্গন। বাবার মুখটা মনে পড়ে। হা করে চেয়ে আছে। রঙ্গনের দিকে।
- শুভ্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩১