সকালে উইঠাই দেহি লুঙ্গি মাথায়। আরে ভাই থামেন। ডরাইয়েন না। শর্টস পরা আছে। রাইতে ঠান্ডা লাগতেছিল তাই লুঙ্গি মাথায় বাইন্ধা নিছিলাম। আপনেরা না এক্কেয়ারে যা-তা।
এদিকে বেটা আকাশ মাইয়া মানষির মতো কান্না শুরু করেছে। ইচ্ছে করছে ঠিক বাম কানের ইঞ্চি দুই নিচে একখান থাবড়া দিয়ে ঘুরায় দেই। কিন্তু অত্তো উঁচুতে হাত পাবো না তাই চিন্তাখান বাদ দিলাম। কিন্তু সকাল সকাল এই কান্নাকাটি আই মিন বৃষ্টি বাদলের কোন দরকার আছে! শুকনা মুখটা পাংশু কইরা রহমত চাচার দোকানে যাওয়ার জন্য বাইর হলাম। রহমত চাচারে আবার নাম দস্তখত শেখাচ্ছি। সে আবার সামুর রেগুলার ভিজিটর। তাই দুইবেলা চা ফ্রি তয় সিগারেট কিনেই টানতি হয়। বেটা হাড় কিপটা। জাতির উন্নতি করতাছি কিন্তু দাম দিল না।
তো বাড়ির গেটের থেইকা বাইর হইয়া দেহি ছাতা আনি নি। ক্যামন লাগে। ইচ্ছা হইলো ছাতার বাট দিয়া মাথায় একখান গুতা দেই। কিন্তু ছাতা আনি নাই। তাই এবার এই চিন্তাটাও বাদ দিলাম। ভিজেটিজে কোনরকম চাচার দোকানে ঢুইকাই কইলাম চাচা চা দাও। চাচা মুখখানা ইন্দুরের মতো কইরা কয় নিজেরে কি প্রামাণিক ভাবো? যহনতহন চা চাইলেই দিয়া দিলাম। বইতে লাগো আবু আইয়া নিক তারপর দিতাছি। আমি তো টাস্কি খাইয়া কই কও কি? শাকিল ভাই মানে আবু শাকিল!! তুমার দোকানে। চায়ের দুধ গরু দেয় নাকি তুমি দাও। মাথা গেছে নাকি? বুইড়া।
গরুও না আর আমিও না। কন্ডেন্স মিল্ক দেই। গারল কুনহানের। আরে আমাগো পিচ্চি আবুইল্যা। বিলকিসের ছুডোপুলা। আমার দুকানে বেগার খাটে।
যাই হোক কিছুডা ধাতস্থ হইয়া আবুইল্যার হাতের থন চা নিয়া একখান নতুন কবিতার প্লট ভাবতাছি। ঠিক সেই চরম মুহূর্তে যেই মুহূর্তে একখান কবিতা প্রসব করার বেদনা আমার ভেত্রে উঁকিঝুঁকি দিতেছিল সেই মুহূর্তে একটা রিক্সা আইসা থামলো। রিক্সার ভেতর থেইকা লাউএর ডগার মতো দুইখান নির্মল সুন্দর হাত প্রসারিত কইরা নীল ছাতাসমেত একটা পেরাণী আমার সামনে আইসা দাঁড়াইলো। তারপর ভেজাচুলে ঝাটা দিয়া ত্থুক্কু ঝারা দিয়া চিপিয়া চিপিয়া পানি বাইর করবার তার মোহনীয় ভঙ্গী আমি চোখ দিয়ে গিলতে লাগিলাম। কিয়ৎকাল পর আমার পানে সে চক্ষু ছুড়িয়া মারিল মানে দৃষ্টি ছুড়িয়া পারিল। আমার পায়ের পন্স স্যান্ডেল জোড়া লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা দেখে সে হাসিয়া গড়াগড়ি খাইলো দুএকবার। তারপর ডান হাতখান আগায় দিয়া বলিল 'আমি নীলপরি'।
আমি সাথে সাথে আমার বিদ্যা জাহির করা শুরু করলাম। হুটহাট কবিতা বাইন্ধা তারে চমকায় দিলাম।
পরি তুমি কার আকাশে ওড়ো
তার আকাশ কি আমার থেইকাও বড়ো
আমার এই অতিশীল্প গুণ সমৃদ্ধ কবিতা শুনিয়া নীলপরি লাজুক হাসিয়া ঠোঁট বাকাইয়া বলিল-
তুমি নিশ্চয় রাজপুত্র। দিশেহারা রাজপুত্র। এমন কবিতে সামুর আর কারো পক্ষে সম্ভব না। কি আবেগ! সেই আবেগের বেগে আমি যেন উড়ে যাচ্ছি পড়ে যাচ্ছি মরে যাচ্ছি।
তা শুনে আমি আমার আঠাইশ পাটি দাঁত বাহির করিয়া তার হাত ধইরা ঝুইলা পড়িলাম। তারপর আবুইল্যার হাতের আরেক কাপ চা নীলপরির হাতে ধরায় দিলাম। কিন্তু সে কয়।
আমার তো গ্যাস আছে রাজপুত্র।
একথায় আমার বিবেক উঠে দাঁড়ায়। কতো দরিদ্র মা চুলায় কাঠ গুজিয়া চোখ লাল করিয়া রান্না করে আর তুমি সমস্ত গ্যাস তুমার পেটের মধ্যি ভরিয়া রাখিছো। এ কেমন অন্যায়। তুমার কি মন বলে কিছু নেইইই?
সে আমার পশ্চাৎদেশে আই মিন মাথার পশ্চাৎদেশে চাটা দিয়া কয় আরে বেকুবের বাইশ ঘর। আমার আলসার। গ্যাস্ট্রিক বুঝো না মুর্খ কুনজাগার।
ঠিক সেই চরম মুহূর্তে যেই মুহূর্তে পরির গ্যাস্ট্রিক আছে জানলাম একরাশ পানি আমার শরীর জুড়ায়ে দিল। ঠান্ডা অনুভব হইতেই চোখ খুইলা দেখি শ্রদ্ধেয় আম্মাজান রুদ্রমূর্তি নিয়ে দাঁড়ায় আছেন। আর আমি বিছানা ভিজায় মানে ভিজা বিছানায় শুইয়া আছি।
কিরে? ঘুমের মধ্যি গুংগাইস ক্যান? হুম।
আমি কলাম ইয়ে মানে আম্মা পরির না গ্যাস্ট্রিক।
শুভ্র
প্রামাণিক ভাই, শাকিল ভাই কিংবা নীলপরি আপনাদের নাম ব্যবহারে যদি কোন আপত্তি থাকে তবে নিজ দায়িত্বে আমায় ভালোবাসবেন। আমার কিছু করার নাই। আমি অপারগ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫