ধোঁয়ারা কুন্ডলী পাকিয়ে একাত্ম ঘোষণা করছে নীল আকাশের সাথে। আমি বারবার হাত ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছি। অপেক্ষার প্রহরগুলোতে শম্ভুকগতির এই অপ্রিয় যন্ত্রটা বড় বেশি প্রতারণা করে। যদিও আমার অপেক্ষা কোন অচীনপুরীর রাজকণ্যার জন্য নয়। শেষ হয়ে আসা সিগারেটটা নিঃশেষিত হবার অপেহ্মা।
অাজ অনেকগুলো বছর পর সপ্তমীর সাথে দেখা। রাস্তার ব্যস্ততায় যানযটের রক্তচহ্মু উপেহ্মা করে দুটি চোখ খুঁজে নিয়েছিল প্রিয় মানুষটির উপস্থিতি। কয়েকটা মুহূর্ত। তারপর মুচড়ে ওঠা হৃদয়ে শূন্যতার বসত গড়ে আর একবার ওই মেয়েটির হারিয়ে যাওয়া। ঠোঁটের কোণে বিস্তৃত হওয়া হাসিটা সম্বল করে তাকিয়ে রইলাম। ওর চলে যাওয়াটাও যে এতটা ভালোলাগার হতে পারে এই প্রথম তা অনুভব করলাম।
মেয়েটি কেন শুধু কয়েক মুহূর্তের জন্যই আমার জীবনে আসে। কেন পুরটা জুড়ে নয়। কেন খন্ড খন্ড মেঘ হয়ে আসে। রোদেলা আকাশ হয়ে কেন নয়।
ভাবনা গুলো ডানা মেলছে চিন্তার পালকে ভর করে। সেই ডানায় ভর করে ফিরে যাই বছর কতক আগে। রাজকণ্যার সাথে আমার প্রথম আর সম্ভাব্য শেষ কিছু স্মৃতির রাজ্যে।
- তুমি ইচ্ছে করলে আমায় ছুঁতে পারো। আমি রাগ করব না।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। বুকের গভীরে মেয়েটির জন্য এক ধরনের হাহাকার অনুভব করছি। অসম্ভব রকমের ভালোলাগা কাজ করে এই অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটির জন্য। কিন্তু তার খুব কিঞ্চিৎ পরিমাণই বোঝাতে পেরেছি। সত্যি বলতে আমি কখনো চাই নি আমার চোখে ও প্রেম দেখুক। কিন্তু কিভাবে যেন ভালোবাসাটা হয়ে গেল। হয়তো পৃথিবীর সবথেকে কমদৈর্ঘের ভালোবাসার গল্প হবে এটা। নিজের অজান্তেই হেঁসে উঠলাম।
- কি হলো হাঁসছো যে?
সপ্তমীর প্রশ্নে চমকে উঠলাম। মেয়েটি এখনো হাত বাড়িয়ে আছে। সীমার মধ্যেই প্রিয় মানুষের স্পর্শ।
ভালোবেসে এই হাত ধরে হাঁটতে চাই অজানা সব পথ। পাড়ি দিতে চাই তেপান্তরের মাঠ কিংবা ফেনিল সমুদ্র। তবে এতো সংকোচ কেন? এত দ্বিধা কেন?
- তুমি কি কিছু ভাবছো?
- না কি ভাববো। ভাবনারা তো আজ আমার সামনে বসে আছে।
- তাই বুঝি?
- হুম।
- জানো আমি কখনো ভাবিও নি তুমি আমার প্রেমে পড়বে। তুমি তো প্রয়োজন ছাড়া কখনো কথাও বলো নি আমার সাথে। আজ যখন জানতে পারলাম তুমি আমায় পছন্দ করো আমি তো বিশ্বাসই করতে পারি নি। পরে তোমার লেখা কবিতা গল্প পড়ে বুঝলাম ওদের প্রত্যেকটা শব্দ বাক্য আমার কথাই বলছে। তুমি আমায় এতোটা ভালবাসা আর আমি বুঝতেই পারি নি কখনো।
তুমি কি করে বুঝবে আমার ভেতরকার আমিটা কত সহস্রবার তোমার সাথে কোনো এক পড়ন্ত বিকেলের আলোটা ভাগ করে নিতে চেয়েছে। তুমি জানো না। তুমি শুধু ভালবাসাটাই জানো। তার পেছনে থাকা কষ্টরা আজো তোমার বোধের বাইরে বিচরণ করে।
- কি হলো? ধরবে না।
- কি?
- হাত! আমার পূর্ণ পারমিশন আছে।
প্রতিউত্তরে একচিলতে হাসি উপহার দিলাম আমার আরাধ্য রাজকণ্যাকে। কষ্টরা আজো হেরে গেলো। আর হেরে গেলো আমার ভালবাসা। একটা চিরকুট তুলে দিলাম আমার ছোঁয়ার প্রতিহ্মায় থাকা ওর ওই হাতে।
আর দেরী করলাম না। বেরিয়ে পরলাম ক্যান্টিন থেকে। হাঁটতে থাকলাম। যথহ্মণ না পা জোড়া প্রতিবাদ না জানায় আমি হাঁটতে থাকলাম। পেছনে ফিরে তাকায় নি আমি। দেখতে চাইনি কথিত রাজকণ্যাকে। যে আমার নয় সে একমুহূর্তের জন্যও আমার হতে পারে না। মানুষ কখনো প্রকৃতির বিরুদ্ধতা করতে পারে না। সে সাহস অন্তত আমার মতো ছেলেদের রাখতে নেই।
ব্যস্ত জনসমুদ্রের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আমি। যেন সময় যন্ত্রে করে ঘুরে আসলাম অতীতের সেই দিনটাতে। যেদিন কোন এক প্রেমিকের প্রেম পথের ধূলোর সাথে একাত্ম ঘোষনা করেছিল অভাবের রক্তচক্ষুর কাছে। প্রায় ছয় ছয়টা বছর পার হয়ে গেছে। সময়ের কাঁধে চেপে স্মৃতিরা আজ পলাতক। তাই আমিও ফিরে আসি বিষাদময় বর্তমানের বুকে।
তবুও কিছু চিন্তারা পিছু নেয়।
আচ্ছা সপ্তমী কি পড়েছিল সেই চিরকুটটি। নাকি আমার স্মৃতির মতো ঐ কাগজের টুকরোটাও জায়গা করে নিয়েছিল আস্তাকুঁড়ে।
জানি না। জানতেও চাই না। কিছু কথা অজানাই থাক।
যদি কখনো ফিরে আসি এ পৃথিবীতে নতুন করে। তবে জেনে রেখো ঐ অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটি শুধুই আমার হবে। বুকের পাজরে হবে ও আমার বন্দিনী।
"তোমার রাজত্বে আমি প্রবেশাধিকারহীন উপযাচক মাত্র।"
চিরকুটে লেখা এই শব্দ গুলো যে কতটা বিষাদের তা কি সপ্তমীর চেতনায় কোন রেখাপাত করেছে।
নাকি অজ্ঞাতই রয়ে যাবে।
কতটা ভালবাসা জমা আছে আমার চিরপ্রতিহ্মিত রাজকণ্যার জন্য তা হয়তো ওর জানার সীমায় কখনোই প্রবেশ করবে না।
তাতে হ্মতি কি?
আচ্ছা;
আমি কি চাইলেই পারতাম না আমার এই প্রেমের গল্পটিকে টেনে টুনে লম্বা করতে। কোন সম্ভাবনাই কি ছিল না।
কে জানে?
তবে এটুকু জানি কিছু গল্প ছোট হওয়াই শ্রেয়।
না হয় অপেহ্মায় থাকলাম অন্য কোন পৃথিবীর যেখানে ভালোবাসাকে অর্থের তুলাযন্ত্রে মাপা হয় না। আমার প্রেম না হয় সেই জগতেই পূর্ণতা পাক।
হ্মতি কি??
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৩