আমি খুব ব্যস্ত একজন মানুষ। আমি অনেক কাজের সাথে জড়িত বলে সারাক্ষণ চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। তাই নামাজে দাড়ালেও সেসব চিন্তা মনে ভিড় করে। নামাজে মনযোগ দিতে পারি না। তাই একদিন নামাজের বিছানায় বসে বসে ভাবতে লাগলাম কিভাবে নামাজের সময় অন্যদিকে খেয়াল যাওয়া থেকে মনকে বিরত রাখা যায়। তখনই পেয়ে গেলাম বুদ্ধি।
এর আগে অনেকে এর সমাধান সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাদের মত আরো অনেকে উপকৃত হতে পারেন বলে এখানে লিখলাম। আপনার যদি একই সমস্যা থাকে তাহলে পড়ে দেখুন।
আমি মাঝে মাঝে নামাজের বিছানা পেতে চুপচাপ বসে থাকি, বাইরের দৃশ্য দেখি। বাতাসে গাছপালার নড়াচড়া দেখি, পাখি উড়ে যেতে দেখি, প্রকৃতিকে দেখে just রিল্যাক্স ও এনজয় করি। তখন যত রকম চিন্তা করতে মন চায় করি। কিছুক্ষণ পর মন থেকে সেসব চিন্তা Automatically গায়েব হয়ে যায়। তখন আর অন্য চিন্তা মনে আসে না। খুব চিন্তা-ভাবনার মধ্যে থাকলে এটা করে আমি নামাজে মনযোগ নিয়ে আসি। আপনিও ট্রাই করে দেখতে পারেন। যা মনে আসে তাই চিন্তা করুন।
আমি দেখলাম "নামাজের সময় অন্য কোনো চিন্তা করা যাবে না" এরকম একটা চিন্তা নামাজে দাড়ালে আমাদের সবার মনেই থাকে। এই কারণে আমরা চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু মানুষের মন এমন জিনিষ যেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা এত সহজ নয়। যতই কোনো চিন্তাকে দমিয়ে রাখতে চাইবো সেই চিন্তা তত মাথায় ভর করবে। অনেকটা সাইকেল শেখার সময় গাছের দিকেই সাইকেল এগুনোর মতো! যতই চাই সাইকেল সেদিকে না যাক ব্যাটা সেদিকেই যাবে! দমিয়ে না রেখে তাই চিন্তার দরজা খুলে দিলে মন থেকে সেসব চিন্তা একে একে বের হয়ে যেতে পারে।
আমি সাধারণত অশ্লীল চিন্তা করি না। তবে যারা অশ্লীল চিন্তা নিয়ে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রেও এটা কাজে লাগতে পারে।
এই টিপটায় কাজ হবার কথা। তবে না হলে চিন্তা নেই, আরো টিপস বের করেছি। এগুলোও কাজে লাগতে পারে। তবে উপরের টিপটায় কাজ হলে এগুলো না-ও লাগতে পারে।
* নামাজ শুরুর আগে শ্বাস নিন, কিছুক্ষণ (যতক্ষণ আরামে পারেন) দম আটকে রাখুন এবং আস্তে আস্তে ছেড়ে দিন। এভাবে কয়েকবার করুন। এতে রিল্যাক্সড হবেন।
* নিয়ত করার সময় বাংলায় করুন। আর মনে মনে চিন্তা করুন আপনি কিসের জন্য নিয়ত করলেন। এসময় এদিক সেদিক না তাকিয়ে সিজদার জায়গায় দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন। (নিয়ত যদি না-ও করেন তবুও চলবে, শুধু মনস্থির করলেও চলবে। কারণ নিয়ত করার নিয়ত(!) হলো যেন আপনি যা করছেন তা মনে মনে স্থির করতে পারেন। ইসলামে নিয়ত আরবীতেই করতে হবে সেটা বলা নেই, তবে মনে মনে আপনি 'এখন কি করবেন' সেটা ঠিক করে নিতে হবে। এটাই নিয়ত। কিন্তু এখানে আপনার স্বাধীনতা আছে, আপনার বিশ্বাস অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবেন।)
* আস্তে আস্তে নামাজ পড়ুন। এতে নামাজের প্রতি মনযোগ থাকবে। তবে এত আস্তে না যে ঘুমিয়েই পড়ে যান! যতটুকু গতি আপনার কাছে আরামের ততটুকু গতিতে নামাজ পড়ুন।
* সূরা নীরবে ঠোঁট নেড়ে পড়ুন। যখন নিজে একা একা পড়বেন তখন এটা খুব কাজের। ঠোঁট কিভাবে নড়ছে সেদিকে মনোযোগ দিন।
* আল্লাহ তাআলার তুলনায় নিজেকে দুর্বল মনে করুন। নিজেকে Helpless মনে করুন। তার দয়া ছাড়া যে এক মুহূর্ত বাঁচবেন না সেটা মনে করুন।
* আল্লাহ তাআলা আপনাকে খুব ভালবাসেন। কারণ আল্লাহ তাআলা আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। একথাটা ভাবুন। (আমরা যেমন কোনো কিছু তৈরি করলে সেটার প্রতি মায়া জন্মে, আল্লাহ তাআলাও আপনাকে সেরকম মায়া করেন। এটা খুবই সত্য, বানিয়ে বলছি না!)
* আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করছেন এমনভাবে সূরা ফাতিহা পড়ুন। সূরা ফাতিহার অর্থ জেনে থাকলে আরো ভাল।
* অন্য সূরা ও দোয়ার অর্থ জানার চেষ্টা করুন। এতে আপনি শুধু মুখস্থ গড়গড় করে পড়া থেকে বেঁচে যাবেন। আপনি যখন সূরাগুলোর অর্থ জানবেন তখন আপনি প্রতিটা শব্দ আল্লাহ তাআলাকে বলছেন এমন ভাবটা আনতে পারবেন। এটাই তো নামাজের আসল উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশের মুসলমানরা অল্প কিছুতেই রেগে যান। কিন্তু তারা ইসলামকে খুব ভালবাসেন। আমার বিশ্বাসের সাথে কারো অমিল হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু আশা করি ইসলামকে যারা ভালবাসেন তারা মানুষকে ভালবাসেন। তাই আমাকে আমার বিশ্বাসের জন্য শত্রু মনে করবেন না আশা করি। আপনার যদি কোনো বিষয়ে দ্বিমত থেকে থাকে তাহলে এখানে মুক্তমনে মন্তব্য করুন। কোনো সমস্যা, সাজেশন থাকলেও বলুন। আমি যতটা পারি জবাব দেবো। আপনার যদি টিপসগুলোতে উপকার হয় তাহলেও জানাবেন কিন্তু!
লেখাটা বড় হওয়ার জন্য দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:৫২