প্রচুর হিন্দি সিনেমাও দেখেছি। দেশে তখন প্রথম ভিসিআর আসলো। আমার মামার বাসায় একবার সিনেমা দেখার ব্যাপক আয়োজন। আমরা তখন ছোট। আমাদের জন্য ডন আর বড়দের জন্য ববি। আমার হিন্দি ছবি দেখা হচ্ছে ডন। কিন্তু যা দেখলাম না সেটার জন্যই আগ্রহ থেকে গেলো প্রবল। ববি দেখেছি আরও পরে। বিকিনি পড়া ডিম্পল। একারণেই মনে হয় সেটি ছিল বড়দের সিনেমা।
আমার বাবার পোস্টিং তখন মাসকাটে (ওমান)। একদিন দেখলাম বড়রা সবাই সিনেমা হলে যাচ্ছে নতুন একটা ছবি দেখতে। এটাও বড়দের বই। কুরবানি। বড় হয়ে দেখলাম। আর কিছুই না বিকিনি পড়া জিনাত আমান। তয় জোস ছিল সেই সময় জিনাম আমান।
তারপন জীবনে বহু হিস্দি সিনেমা দেখছি। এখনও দেখি, তবে জেনে শুনে। বলতে দ্বিধা নাই প্রচুর ভাল সিনেমাও হয় হিন্দিতে।
আজ না হয় আমার পছন্দের কিছু হিন্দি সিনেমার কথা বলি।
১. অর্ধ সত্য: ওম পুরি, স্মিতা পাতিল আর সদাসিব অম্রপুকার। পরিচালক গোবিন্দ নিহালানি।
আমার মনে হয় ওম পুরির সেরা ছবি এখনও এটি। পুলিশ কর্মকর্তা ওম পুরির দায়িত্ব পড়ে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনকে রক্ষা করার। আমার দেখা অন্যতম সেরা হিন্দি ছবি অর্ধ সত্য।
২. ইজাজত: নাসিরউদ্দিন শাহ, রেখা ও অনুরাধা। গুলজার পরিচালক। তথাকথিত আর্ট ফিল্ম না। রোমান্টিক এক ছবি।
৫ বছর পর রেল স্টেশনে দেখা দুজনের। তারপরে স্মৃতি রোমন্থন। সংসার ছিল তাদের একসময়। টেকেনি। ছিল তৃতীয় একজন।
৩. জানে ভি দো ইয়ারো: আবারো নাসিরউদ্দিন শাহ। আমি এখনো মনে করি এটাই হিন্দি সিনেমা জগতের সেরা কমেডি মুভি।
১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির পরিচালক কুন্দন শাহ।
কমেডি আর স্যাটায়ারের এরকম মিশ্রন হিন্দি সিনেমায় আর কখনো ঘটেছে কি না আমার জানা নাই। দুই বন্ধুর গল্প। তাদের ইচ্ছা একটা ছবি তোলার স্টুডিও করা। করলো। তারপরেই তারা মুখোমুখি হলো খুন, দুর্নীতি, রাজনৈতিক শঠতা আর বাস্তবতার সঙ্গে। কি নেই এটার মধ্যে? রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি, পত্রিকার দুর্নীতি, ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি আর ভাল মানুষের সাজা, সব কিছুই আছে।
৪. সতরঞ্জ কি খিলারি: সত্যজিত রায়ের একমাত্র হিন্দি ছবি। সঞ্জিব কুমার আর সায়েদ জাফরী।
বাহদুর শাহ জাফরের শেস সময়ের ঘটনা। সে সময়ের আয়েশী দুই জমিদারের কাহিনী। অসাধারণ এক ছবি
৫. এক পল: আবারো নাসির উদ্দিন শাহ। সাথে শাবানা আজমী ও ফারুক শেখ। মৈত্রেয়ী দেবীর লেখা, কল্পনা লাজমি পরিচালক।
সম্পর্ক থাকে শাবানার সাথে ফারুক শেখের। কিন্তু বিয়ে করে না ফারুক শেখ। শাবানার বিয়ে হয় নাসিরউদ্দিন শাহের সাথে। তারপর ফিরে আসে ফাররুক শেখ। ভুপেন হাজারিকার অসাধারণ কিছু গান আছে।
৬. নামকিন: গুলজারের আরেকটি ছবি। আমার অনেক প্রিয়। সঞ্জিব কুমার, শাবানা, ওয়াহিদা রেহমান ও শর্মিলি ঠাকুর।
ট্রাক ড্রাইভার সঞ্জিব। ভাড়া নেয় ওয়াহিদার বাড়ি। ওয়াহিদার তিন মেয়ে। সম্পর্কের জটিলতা শুরু হয় সেখান থেকেই।
৭. সোলভা সাল: আমার দেখা সেরা এন্টারটেইনমেন্ট ছবির একটা। দেব আনন্দ আর ওয়াহিদা রেহমান।
এক রাতের ছবি। প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায় ওয়াহিদা। পথে তার সোনার গহনা নিয়ে পালিয়ে যায় ছেলেটা। এক রাতের মধ্যে সেই গহনা উদ্ধার করে ঘরে ফেরার গল্প। পথে পরিচয় মেয়ে দেখতে যাওয়া দেব আনন্দের সাথে।
৮. তিসরি কসম: রাজকাপুরের অনেক ছবির নাম বলা যায়। তবে আমার পছন্দ তিসরি কসম।
সাথে আছে ওয়াহিদা রেহমান। খুব সাধারন এক কাহিনীর অসাধারণ চিত্ররূপ। গরুর গাড়ির চালায় রাজকাপুর। আর একজন ড্যান্সার ওয়াহিদা। রাজ কাপুরের গরুর গাড়িতে করে ওয়াহিদা যাচ্ছে মেলায়। এটাই সিনেমা। .......তারপর......
৯. মধুমতি: দিলীপ কুমারের অসংখ্য ছবি আছে। কিন্তু আমার কাছে সেরা মনে হয় মধুমতিকে।
সাথে আছে বৈজয়ন্তী মালা। চমৎকার কিছু গান আছে। আর আছে দারুণ এক গল্প। বিনোদন হিসেবে যারা ছবি দেখেন তাদের পছন্দ হবে।
১০. আর্থ: মহেশ ভাটের অনেক ছবি আছে। শেষ দিকে অসংখ্যা আজে বাজে ছবিও করেছেন। কিন্তু সে যে কত শক্তিশালী পরিচালক তা বুঝা যায় আর্থ ও সারাংস দেখলে।
শাবানা, স্মিতা পাতিল ও খুলভুষন। জগজিতের অসাধারণ কিছু গজল আছে। খুলভুষন শাবানাকে ছেড়ে নতুন করে সংসার করে স্মিতাকে নিয়ে। তারপর শুরু হয় নানা জটিলতা। অসাধারণ এক ছবি।
১১. দৃষ্টি: গোবিন্দ নিহালানির আরেকটি পছন্দের ছবি। শেখর কাপুর ও ডিম্পল।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে আরেকটি ভাল ছবি। আমার বেশ পছন্দের ছবি।
১২. আবিস্কার: সংসার ও সম্পর্ক নিয়ে আরেকটি ছবি। রাজেস খান্না ও শর্মিলা ঠাকুর।
কাউকে পরোয়া না করে তুমুল প্রেম করে বিয়ে করেছিল ওরা। ৭ বছর পর বুঝতে পারছে না সেই প্রেম কোথায় গেলো। বিয়ে বার্ষিকীর দিন সেটাই আবিস্কার করার চেষ্টার ছবি।
১৩. ক্যারাভান: নাচে গানে ভরপুর এক ছবি। জিতেন্দ্র আর আশা পারেখ।
এই ছবি আমি বার বার দেখতে চাই হেলেন ও আশা পারেখের নাচ আর আশার গানের জন্য। পিয়া তু আবতো আজা.............
১৪. অংকুর: আর্ট ফিল্ম ঘরানার ছবি। শাবানা আজমির অসাধারণ অভিনয় আছে। একদমই নতুন ধরণের এক ছবি।
১৫. খন্ডহার: আবারো শাবানা ও নাসিরউদ্দিন শাহ। মৃনাল সেনের হিন্দি ছবি।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের বিখ্যাত এক ছোট গল্পের ছবি। আমি এই ছবির বিশাল ভক্ত।
আরো এরকম অসংখ্য ছবি আছে। যেমন, দেব আনন্দের গাইড ও তেরে ঘরকে সামনে, গুরু দত্তের পিয়াসা ও কাগজ কি ফুল, রাজকাপুরের সংগম ও চোরি চোরি, অমিতাভের মিলি, অভিমান কিংবা সওদাগর, কামাল হাসানের পুস্পক, গানের ছবি হিসেবে তিসরি মঞ্জিল ও ইয়াদো কি বারাত, শ্যাম বেনেগালের মান্ডি, ভুমিকা, শাবানা আজমির স্পর্শ ও খামোশ, রাজেস খান্নার খামোসি, আনান্দ ও নেমক হারাম, নাসিরউদ্দিন শাহ-এর আক্রোস ও মিরিচ মশল্লা। এরকম অনেক ছবি আছে। নাম সব মনে পড়ছে না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:০৫