আমি প্রথম এম্বিগ্রাম করা শুরু করি স্বাভাবিকভাবেই ইংরেজিতে। এম্বিগ্রাম কি? ড্যান ব্রাউন এর "এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস" পড়েই এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। তারপর বেশ কিছুদিন ইংরেজিতেই করতে থাকি। এরপর ভাবলাম আমার মাতৃভাষা বাদ যাবে কেন? কিন্তু ভরসা পাচ্ছিলাম না। পারব তো। তখন আমার হাতের নাগালে ইন্টারনেট ছিল না, তাই কেউ এইগুলো আদৌ প্রাকটিস করে কিনা, জানা ছিল না।
ভয় হচ্ছিল। আমার আবার এ্যাটিচিফোবিয়া আছে। ব্যর্থতা খুব ভয় পাই। যাই হোক, তারপর একদিন বাংলা ব্যাকরণ উদ্ভুত বাংলাভাষা ভীতি কাটিয়ে "ধর তক্তা, মার পেরেক" এর মত করে বসে গেলাম এম্বিগ্রাম তৈরি করতে। ব্যাস, হয়ে গেল!!! "অনিক" নামের এম্বিগ্রাম বেরিয়ে গেল আমার হাত দিয়ে।
সাথে সাথেই যেন ভালবেসে ফেললাম বাংলা এম্বিগ্রাম (বাম্বিগ্রাম!!!)। এরপর এতই অবসেসড হয়ে গেলাম যে, বাংলা ছাড়া এম্বিগ্রাম করতে মনেই চায় না। যদি কখনো ইংরেজিতে করতেই হয়, তবে সাথে সাথে সেটার বাংলাও করার চেস্টা করি। আগে যেটাকে কঠিন লাগত, এখন সেটাকে ইংরেজি থেকে সহজ মনে হয়।
তারপরই উপলব্ধি করলাম, নিজের ভাষাটাকে আসলেই কত ভালবাসি!!
এর সাথে কিছু কথা বলি। বাংলা পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর ভাষা। আমার কথা না, স্বীকৃত কথা। নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। ইংরেজি ভাষা বলার ক্ষেত্রে আমরা উপমহাদেশীয় লোকজনরা বেশ এগিয়ে আছি। অন্তত যেটুকু বলি, শুনতে ভাল লাগে। ভারত, পাকিস্তান এর কথা বলব না। নিজেদের কথা বলি।
আমরা ইংরেজি বলার ক্ষেত্রে বেশ সুন্দর করেই উচ্চারণ করতে পারি। শুনতে সরল হলেও শ্রুতিমধুর। রাশিয়ান কিংবা মংগোলীয় উদ্ভুত জাতিগুলোর উচ্চারণ দেখলে হাসি আসে। what are you doing? কে ওরা উচ্চারণ করবে "হোয়াত আর ইউ দুয়িং? " প্রায় একই কথা খাটে মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোর ক্ষেত্রে। সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন উদ্ভুত দেশগুলোও একই কাতারে আছে। ওদের ভাষাগুলো বছরের পর বছর উচ্চারণ করে জিহবার বারটা বেজে গেছে, অন্তত ইংরেজি উচ্চারণ এর জন্য। অনেক কসরত করে সেটা ঠিক করতে হয়, নতুবা শৈশব থেকে নিয়মিত ইংরেজি বলা চর্চা করতে হয়।
এবার আপনি উচ্চারণ করে দেখুন তো বাক্যটা!! আমাদের ভাষাটা অনেক অনেক সমৃদ্ধ। বর্নমালাও তদ্রুপ। খুব ভেরিয়েশন আছে। ত যেমন আছে, ট এবং ঠ তেমন আছে। দ, ধ। ড, ঢ। স শ ষ। যুক্তাক্ষর সবকিছু। যে কোন ভাষা কেই প্রায় নিখুঁত উচ্চারনে বাংলায় পরিবর্তন করা যায়। ব্যাকরন ও খুব সমৃদ্ধ (তবে খুব কঠিন লাগে আমার কাছে। বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষার আগের রাতে দুঃসপ্ন দেখতাম শুধু!!!!)। এর অবমাননা দেখলে খুব খারাপ লাগে। শামসুর রহমানের মত বলতে ইচ্ছা হয়ঃ
"এখন
তোমাকে নিয়ে খেঙরার নোংরামী,
এখন তোমাকে ঘিরে খিস্তি খেউড়ের
পৌষমাস।
তোমার মুখের দিকে আজ আর যায়
না তাকানো,
বর্ণমালা আমার
দুঃখিনী বর্ণমালা।“………………………
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮