আস্তিক বা নাস্তিক বর্তমান সময়ের একটি বড় আলোচনার উপাদান। এগুলো হল বিশ্বাসের ব্যাপার। যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। এটাতে কোন সমস্যা বা সংঘাত নেই। তবে উগ্র নাস্তিকতাবাদ এবং উগ্র আস্তিকতাবাদ দুটোই খারাপ। সেটা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই হোক না কেন। একটু জেনে রাখা ভাল, বিবর্তনবাদীদের একাংশের ধারনা মতে "যাদুবিদ্যা - ধর্ম - বিজ্ঞান" এভাবে পৃথিবীতে মানব সভ্যতার বিবর্তন সাধিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে "যাদুবিদ্যা - ধর্ম - বিজ্ঞান" তিনটি বিষয়ই মানব সভ্যতায় স্ব স্ব মহিমায় বিদ্যমান (এটি বিবর্তনবাদের একটি বড় সমালোচনাও বটে)। বর্তমান পৃথিবীতে নাস্তিকদের চেয়ে আস্তিকদের সংখ্যাই বেশি।
আস্তিক হচ্ছে এক কথায় যারা সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ধর্মে বিশ্বাসী। যার যার বিশ্বাস অনুযায়ী আস্তিকরা স্ব স্ব ধর্ম-কর্ম পালন করে। সেটা যে কোন ধর্মেই হতে পারে। তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হল উগ্র আস্তিকতাবাদ অর্থাৎ কেউ যখন জোর করে অন্যকে নিজের বিশ্বাসের দিকে প্রভাবিত করতে চায় বা অন্যের বিশ্বাসের প্রতি কটুক্তিমূলক আচরণ প্রদর্শন বা এগুলো কোন কিছুতেই কাজ না হলে ভিন্নমতাবলম্বীকে নিঃশেষ করে দেয়ার চেষ্টা করা। আর তখনই সংঘাত তৈরী হয়। যা কখনোই সমর্থনযোগ্য বা কাম্য নয়।
নাস্তিকরা সাধারনত কোন সৃষ্টিকর্তা বা ধর্মে বিশ্বাস করে না। তারা বস্তুবাদে বিশ্বাসী। তাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হল উগ্র নাস্তিকতাবাদ অর্থাৎ তারা খুব ধূর্ততার সহিত তাদের কথায় বা আচরণে বা কলমের কালিতে উগ্র হিংস্রতার মাধ্যমে আস্তিকদের বিশ্বাসের উপর তথা সৃষ্টিকর্তা ও ধর্ম নিয়ে কটুক্তি ও আজেবাজে মন্তব্য করে। তাদের এই কর্মকান্ড উগ্র আস্তিকতাবাদকে উষ্কে দেয় বা উগ্র নাস্তিকতাবাদীরা উগ্র আস্তিকতাবাদীদেরকে তাদের শত্রু হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়। আর তখনই সংঘাত তৈরী হয়। যা কখনোই সমর্থনযোগ্য বা কাম্য নয়।
আমার মতে, উগ্র নাস্তিকতাবাদী ও উগ্র আস্তিকতাবাদী উভয়েই সন্ত্রাসী। উভয়েই যার যার সামর্থমত কথ্য ভাষা, লিখিত ভাষা, শরীরি ভাষা, দেশী-বিদেশী অস্র ইত্যাদির মাধ্যমে একে অন্যকে আঘাত করে। এটাকে বন্ধ করতে হবে। পৃথিবীতে ধর্ম এসেছে মানুষের কল্যানে। কোন ধর্মেই খারাপ কিছু নেই। কোন ধর্মেই উগ্রতার স্থান নেই। উগ্রতা তৈরী করেছে ধর্ম ব্যবসায়ী বা সন্ত্রাসীরা। তাই কোন উগ্রবাদীর কর্মকান্ডের জন্য উগ্রবাদীদের সমালোচনা করুন বা শাস্তি দিন। অযথা ধর্মের সমালোচনা করা ঠিক নয়।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদেরকে ধৈর্য্যশীল, সহমর্মী হতে হবে। নিজেদের কথাবার্তা আচার আচরনে অন্যকে আঘাত করা বা অন্যের বিশ্বাসে আঘাত করা হতে বিরত থাকতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে "ভাল - মন্দ" এই দুটি শব্দ আপেক্ষিক ব্যাপার। তাই একজনের কাছে যেটা ভাল, অন্যজনের কাছে সেটা হয়ত খারাপ। আবার অন্যদিকে একজনের কাছে যেটা খারাপ, সেটা হয়ত কারো কাছে ভাল। তাই যার যার বিশ্বাস নিয়ে স্ব স্ব জীবন পরিচালনা করতে হবে। কেউ জোর করে নিজের বিশ্বাস অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না, বা অন্যের বিশ্বাসকে নিয়ে কটুক্তি করবেন না। তবেই সমাজে শান্তি আসবে।