অপরাধ অর্থাৎ যাকে সাধারনত আমরা ইংরেজিতে Crime বলে জানি এটি হচ্ছে কোন ব্যক্তি কর্তৃক আইনবিরুদ্ধ যেকোন কাজ। দেশ বা বিভিন্ন অঞ্চলের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রণীত আইনের পরিপন্থী কার্যকলাপই হলো অপরাধ বা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। অপরাধ গুরুতর কিংবা লঘু উভয় ধরনেরই হতে পারে। অপরাধের ফলে ব্যক্তিকে অর্থদণ্ড বা হাজতবাস অথবা কারাগারে প্রেরণসহ উভয় দণ্ড কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণদণ্ডও প্রদান করা হতে পারে। যে বা যিনি অপরাধ করেন অথবা অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেন তিনি অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে থানাসহ পুলিশ বা গোয়েন্দা রয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী আদালতের মহামান্য বিচারক অপরাধীকে প্রয়োজনীয় এবং যথোপযুক্ত শাস্তি দিয়ে থাকেন।
সাধারণত অসৎ কর্মে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অপরাধের সাথে যুক্ত থাকেন। কিন্তু সাধারণ জনগণও অপরাধের সাথে নিজেকে সংযুক্তি ঘটাতে পারেন। বিপরীতক্রমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী মানব নয় এমন ধরনের প্রাণী অপরাধের সাথে যুক্ত হতে পারে না।সাধারণ ধারণা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তি বা সমাজের সমস্যা সৃষ্টিকল্পে যে সকল কাজ করেন তাই অপরাধ। অপরাধ হিসেবে কোন ব্যক্তিকে খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ধর্ষণ, জালিয়াতি, অর্থপাচার ইত্যাদি রয়েছে যা পৃথিবীর সকল সভ্য দেশেই স্বীকৃত থাকায় দণ্ডনীয়। তাছাড়াও, মদ্যপান কোকেন হেরোইন গাজা সেবন নিষিদ্ধ প্রাণীর মাংস খাওয়াসহ সমাজের বিরুদ্ধ কার্যাবলী সম্পাদন করা অপরাধের আওতাভূক্ত।
আমাদের অপরাধের উৎপত্তি
আগেই বলেছি অপরাধের ইংরেজি প্রতিশব্দ ক্রাইম যাকে ল্যাটিন ভাষায় উদ্ভূত সার্নো বলা হয়ে থাকে । এর অর্থ হচ্ছে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি দণ্ডাজ্ঞা দিব।কিছু ধর্মে পাপ কার্য্যে অংশগ্রহণকে অপরাধরূপে দেখা হয়। আদম এবং ঈভের শয়তানের প্ররোচনায় গন্ধর্বজাতীয় নিষিদ্ধ ফল গ্রহণকে প্রকৃত পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। দল অথবা রাষ্ট্রীয় অপরাধ হিসেবে যুদ্ধ অথবা সংঘর্ষ হয়ে থাকে। আধুনিক সভ্যতার ঊষালগ্নে আইনের কতকগুলো ধারা প্রণীত হয়েছে।বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী রিচার্ড কুইনী সমাজ এবং অপরাধের মধ্যে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন অপরাধ হচ্ছে সামাজিকতার দৃশ্যমান প্রতিফলন। এই কথার মাধ্যমে তিনি মূলত ব্যক্তির অপরাধে সম্পৃক্ততার প্রেক্ষাপট এবং সামাজিক আদর্শ ও ন্যায় নিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের উপলদ্ধিবোধ জাগ্রতকরণ উভয় দিকই বিবেচনা করতে বলেছেন।
অপরাধের কিছু প্রকারভেদও আছে
লঘু অপরাধ, যাতে জরিমানা কিংবা অনধিক এক বছরের জন্যে কারাগারে প্রেরণ করা হতে পারে বা প্রেরণ করা হয়ে থাকে।গুরুতর অপরাধ সাধারণত এক বছরের ঊর্ধ্বে থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।অনেক দেশই তাদের দেশের জন্যে উপযোগী করে অপরাধের বিষয়বস্তু, আকার প্রকৃতি, স্তর ক্ষেত্রগুলো মানদণ্ডে নিয়ে আইন প্রণয়ন করে থাকেন। এক দেশের আইন, অন্য দেশের জন্যে উপযোগী নাও হতে পারে। এখানে ধর্মীয় এবং বিতর্কিত বিষয়গুলোর প্রেক্ষাপটে দ্রুত আইন প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। মোটর সাইকেলে হেলমেট ব্যবহার না করা কিংবা গাড়ীতে চালক কর্তৃক মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে দূর্ঘটনা ঘটায়ও আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে যাত্রীদের জানমালের জন্যে হুমকিস্বরূপ।বই চলচ্চিত্র গান অথবা ওয়েব পৃষ্ঠা তৈরী করার প্রেক্ষাপটেও যদি প্রকৃত রচয়িতা, নির্মাতার অনুমতিবিহীন অবস্থায় হয়, তবে তা কপিরাইট আইনের আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাছাড়াও, অবৈধ এবং নিষিদ্ধঘোষিত মাদকদ্রব্য উৎপাদন, প্রস্তুতকরণ, বহন করা কিংবা বিক্রয় করা হয় তবে তা সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
শাস্তি বিধানঃ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে দক্ষ, প্রশিক্ষিত পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। সে বাহিনীর প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে অপরাধ বন্ধ বা দমন করা এবং অপরাধীকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। সন্দেহের বশবর্তী হয়েও যে কোন ব্যক্তিকেই গ্রেফতার করার প্রবিধান রয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে জেরায় এনে প্রয়োজনীয় তথ্যাদির সাহায্যে অপরাধের শিকড় উৎপাটন করা হয়। আদালতের প্রধান হিসেবে মহামান্য বিচারপতি প্রয়োজনীয় স্বাক্ষ্য উপাত্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেন যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অপরাধী কি না যদি ব্যক্তি অপরাধ করে থাকেন তবে তাকে জরিমানা সহ নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কারাগারে প্রেরণ করা হয় বা হতে পারে। নতুবা বেকসুর খালাশ প্রদান করে থাকেন। অপরাধের মাত্রা ব্যাপক এবং গুরুতর হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কিংবা ফাঁসীকাষ্ঠে ঝোঁলানো হয়ে থাকে। উন্নত দেশসমূহে প্রাণদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:৪২