somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যালো বাগেরহাটঃ পর্ব – ১

১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কথায় আছে, মক্কার মানুষ হজ্জ পায় না। আমার অবস্থাও সেই রকম। নানুর বাসা, খালামনির বাসা সহ অন্যান্য বহু আত্মীয় স্বজনদের বাসা বাগেরহাট হওয়া সত্ত্বেও কখনো কেন যেন বাগেরহাটের দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বাগেরহাটে কারো বাসায় গেলে পথিমধ্যে এক ঝলক দেখে নিতাম ষাট গম্বুজ মসজিদ। কিন্তু নেমে আর ঘুরে দেখা হয়নি। এবারের ঈদের ছুটিতে সময় বের করে ঘুরে এলাম বাগেরহাটের সব দর্শনীয় স্থান থেকে।

ষাট গম্বুজ মসজিদ



বাগেরহাট থেকে ৭ কিলোকিটার দুরে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাশে ষাট সুন্দরঘোনা গ্রামে অবস্থিত ষাট গম্বুজ মসজিদ । খানজাহান আলী পনেরোশ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট এবং ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা আর পূর্ব পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট এবং ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেওয়ালগুলো প্রায় ৮•৫ ফুট।





মসজিদটির পূর্ব দিকে দেওয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর তুলনায় বেশ বড়। উত্তর এবং দক্ষিণ দেওয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। আর মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনারও আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড এবং চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ এবং চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ।







মসজিদটির নাম ৬০ গম্বুজ হলেও এখানে মোট ৭৭টি গম্বুজ রয়েছে। আর মিনারের ৪ টি গম্বুজ হিসেব করলে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৮১ তে। তবুও এর নাম হয়েছে ষাটগম্বুজ। ঐতিহাসিকরা মনে করেন সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজ সারি আছে বলে এ মসজিদের সাত গম্বুজ এবং তা থেকে ষাট গম্বুজ নাম হয়েছে। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন গম্বুজগুলো ৬০ টি প্রস্তর নির্মিত স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলেই নাম ষাট গম্বুজ হয়েছে।



জনপ্রতি টিকিটের দাম বিশ টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকিটের দরকার পড়েনা। যেকোনো বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য দুইশত টাকা করে।



গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা ২.০০ থেকে খোলা থাকে।







খানজাহানের অজ্ঞাত ভক্তদের কবর



খানজাহানের রোপন করা বট বৃক্ষ



দীঘিতে পদ্ম - শাপলা



দুরন্ত শৈশব



নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা



দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বিশ্রাম ছাউনি



চাইলে থাকার জন্য রয়েছে অতিথিশালা



এক গম্বুজ মসজিদ



এটি একটি বর্গাকার মসজিদ। তৈরির প্রধান উপকরন হিসেবে ইটের ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য তিনটি খিলান পথ বা দরজা রয়েছে যা উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত । এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণের খিলান পথ গুলি বর্তমানে বন্ধ রাখা হয়েছে। মসজিদে মিহরাবের সংখ্যা একটি। মিহরাবের অবস্থান পূর্বদিকের খিলান পথ বরাবর এবং এটি অর্ধ-বৃত্তাকার। মসজিদের বাইরে চারপাশে রয়েছে বক্রাকার কার্নিশ এবং চারটি গোলাকার কর্নার টাওয়ার। বর্গাকার কক্ষের উপরিভাগের প্রায় বেশিরভাগ অংশজুড়ে রয়েছে একটি গোলার্ধ আকৃতির ইটের তৈরি গম্বুজ। খান জাহান আলীর সমাধি থেকে যে লিপি পাওয়া গেছে সেই হিসেবে ২৫ অক্টোবর ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরন করেন । ধারণা করা হয় এই সমাধি তিনি মৃত্যুর পূর্বেই নির্মাণ করেছিলেন।

নয় গম্বুজ মসজিদ



জীন্দাপীর মসজিদের দক্ষিণদিকে এবং ঠাকুরদীঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত নয় গম্বুজ মসজিদ। প্রথাগতভাবেই মসজিদটির পশ্চিম দিকের দেয়াল মক্কার দিকে মুখ করে আছে এবং এই দেয়ালের ভেতরের অংশেই বসানো হয়েছে মিহরাব। পশ্চিম দিকের দেয়ালে মিহিরাবের চারপাশে ফুলের নকশার টেরাকোটা দেখা যায়। মসজিদটির চারটি কোণায় মিনার বা সুউচ্চ গোলাকার টাওয়ার আছে। পুরো মসজিদের গায়ে পোড়ামাটির কারুকাজ খচিত। মসজিদের দেয়ালগুলো বিশাল একটি গম্বুজ ধারণ করে যার চারপাশে আটটি অপেক্ষাকৃত ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের ভিতরে দুসারি পাথরের থাম দিয়ে মোট নয়টি চৌকো খন্ডে বিভক্ত। প্রতিটি খন্ডের উপর মসজিদের ছাদের নয় নয় গম্বুজ নির্মিত। সামনের দিকে ৩টি মাঝে ৩টি এবং পেছনের দিকে ৩টি মোট নয়টি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলি ধারাবাহিকভাবে সাজানো যাতে যেদিক দিয়েই দেখা হোক না কেন মনে হবে প্রতিটি গম্বুজের একটি গম্বুজ থেকে আরেকটি গম্বুজের দূরত্ব সমান। পশ্চিমের কিবলা দেয়ালে নির্দিষট দূরত্ব পরপর একটি করে মোট ৩টি অবতল মিহরাব আছে। মসজিদের সামনের দিকে মোট ৩টি দরজা রয়েছে।







খানজাহান আলীর মাজার



খাঞ্জেলী দীঘির উত্তর পাড়ে এক উচ্চ ভূমিতে খানজাহান আলীর মাজার নির্মিত। মাজারটি বর্গাকৃতি, এর আয়তন ৪২ফুট X৪২ ফুট এবং প্রাচীরের উচ্চতা ২৫ ফুট, এর ছাদে একটি গম্বুজ আছে। মাজারের ভিতর একটি প্রস্তর নির্মিত বেদিতে খানজাহান আলীর সমাধি মাজার অবস্থিত । মাজারের শিলালিপিতে মৃত্যু তারিখ, দাফন তারিখ ছাড়াও আল্লাহর নাম,কোরআনের কয়েকটি সূরা এবং তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক ইত্যাদি লিপিবদ্ধ আছে।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:১৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×