নাম শুনে প্রথমেই মনে হতে পারে ছবিটি বলিউডের বাম্পার হিট মুভি বডিগার্ডের বাংলা সংস্করণ নয় তো? নাহ, সম্পূর্ণই মৌলিক কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে দেহরক্ষী ছবিটি। তরুণ নির্মাতা ইফতেখার চৌধুরীর দ্বিতীয় ছবি এটি। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোতে রয়েছেন আনিসুর রহমান মিলন, কাজী মারুফ এবং ববি। বলা বাহুল্য, মিলনের দ্বিতীয় ছবি এটি এবং ভিলেন হিসেবে প্রথম ছবি।
২০১৩ সালের ১২ এপ্রিলে মুক্তি পাওয়া ১২৭ মিনিট ব্যাপ্তি ছবিটির কাহিনী আবর্তিত হয় সোহানাকে(ববি) নিয়ে যে তার বাবার চিকিৎসা এবং সংসারের ঘানি টানতে বারে নেচে বেড়ায়। এদিকে সোহানাকে পছন্দ করে আসলাম(মিলন) যে কিনা আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়া ডন। কিন্তু আসলামকে পছন্দ হয় না সোহানার। সোহানাকে তাই জোর করে নিজের বাসায় নিয়ে আসে আর সোহানার বাবাকে আটকে রাখে। এদিকে নিজের কাজে দেশের বাইরে যায় আসলাম। আর তাই সোহানা যেন পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য একজন বিশ্বস্ত দেহরক্ষী নিয়োগ করে আসলাম। দেহরক্ষী আর কেউ নয়, আসলামের ছোটবেলার বন্ধু তীব্র(কাজী মারুফ)। সদা রগচটা তীব্রকে ফাঁকি দিয়ে পালানোর জন্য সোহানা প্রেমের অভিনয় করতে থাকে। কিন্তু অ্যাংরি ম্যান তীব্রর মন গলানোই দুষ্কর। কিন্তু এক সময় ঠিকই বরফ মন গলে উষ্ণ পানি হয়ে যায়। এদিকে ভালবাসার অভিনয় করতে করতে সোহানাও এক পর্যায়ে তীব্রর প্রতি দুর্বল হয়ে পরে। কিছুদিন পর আসলাম দেশে ফিরে আসে। কাহিনী মোড় নেয় অন্যদিকে।
ফ্যাটম্যান ফিল্মস প্রযোজিত ছবিতে ক্যামেরার কাজ এবং সম্পাদনা দুটোই পরিচালক নিজে করেছেন। বর্তমানে বাংলা চলচ্চিত্রে এমন মুনশিয়ানা পরিচালক খুব কমই আছে বলতে হবে। চিত্রায়নটা ভাল লেগেছে ছবির। গানগুলোও শ্রুতি মধুর ছিল। বিশেষ করে অদিত এবং নান্সির কণ্ঠে ভালবাসি তোমায় শিরোনামের গানটি ছিল অসাধারণ। তবে ছবির আইটেম গানের কথা নিয়ে আপত্তি আছে আমার। গানটির একটি লাইনে বলা হয়েছে ‘রাতের রানী আমি সোহানা’। যেখানে নায়িকা শুধু বারে নেচে টাকা উপার্জন করে কিন্তু আর কোন অসামাজিক কর্মে লিপ্ত নেই সেখানে গানের কথায় এই লাইনটি কেন লাগানো হল সেটা আমার বোধগম্য হল না।
অভিনয়ের কথা বললে মিলন এবং ববি দুজনেই ভাল করেছে। কিন্তু নায়ক হিসেবে মারুফকে একদম ভাল লাগেনি। কিংবা বলা যায় পুরো ছবির শিল্পগুণ ম্লান হয়ে গেছে শুধু তার উপস্থিতির কারণেই। বাংলা চলচ্চিত্রের সাথে তার সম্পৃক্ততা অনেক দিনের কিন্তু এত দিন ধরেও তিনি অভিনয়ের অ-ও যে শিখেছেন তা মনে হল না। প্রতিবার সংলাপ বলার সময় মনে হয়েছে যেন বাংলা রচনা মুখস্ত করে সেটা গর গর করে শিক্ষককে পড়া বলছেন। এমনকি রোম্যান্টিক দৃশ্য এবং গানের চিত্রায়নেও সাবলীল ছিলেননা তিনি। মনে হচ্ছিল যেন তাকে জোর করা হয়েছে প্রেম করার জন্য।
যাই হোক, সবশেষে বলবো ভাল মন্দ মিলিয়ে ছবিটি মোটামুটি মানের। দর্শক হিসেবে উপভোগ করবেন। সেই সাথে এটাও উপলব্ধি করবেন যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প আবার জেগে উঠেছে। পরিবারকে নিয়ে দেখার মত ছবি নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৩৯