তখন মাত্র বুয়েটে ঢুকছি।
মন সবসময় উড়ুউড়ু। গায়ে ভার্সিটির রোমান্টিক বাতাস। উড়ু উড়ু করতে করতেই ধুম করে একটা প্রেম করে ফেললাম।
প্রেম তো করলাম! কিন্তু, এ তো নতুন যন্ত্রনা!
সারাক্ষণ প্রেমিকার সাথে কথা বলতে মন চায়। রাতে তিতুমির হলের কার্ডফোন থেকে ফোন করি (অবশ্যই রাত ১১ টার আগে)। দশ মিনিট ধরে দু'দশটা ছোট, বড়, মাঝারি সাইজের ইন্টারভ্যু পার হয়ে দু'মিনিটের জন্য রাজকন্যাকে পাই। মন ভরে না।
ওর মন তো আরো ভরে না। আমাকে প্রতিদিন বলে একটা মোবাইল কেনো।
বউ বলে কথা!
অনুরোধে মন গলে যায়। টিউশনি শুরু করি। টাকা জমাতে হবে। খুব দ্রুত।
২০০০ সালের জুন মাস। এক বিকেলে টিউশনী শেষে রাস্তায় নামলাম। হলে ফিরব।
আকাশ কাল করে মেঘ জমেছে। জুন মাসে এরকম একটু আধটা জমতেই পারে। অবাক হবার কিছু নেই। পাত্তা দেয়ারও কিছু নেই। আমি হাঁটতে লাগলাম বাস স্ট্যান্ডের দিকে।
হুট করে গরম একটা হাওয়া খেলে গেল। কী আশ্চর্য! তারপরই ঠাণ্ডা হাওয়া। বলা নেই, কওয়া নেই শো শো শব্দ চারদিকে। বিকেলের আকাশ, অথচ নিমিষে অন্ধকার! ঝুম বৃষ্টি!
'ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি আম কুড়াতে সুখ টাইপ' ঝড় নয় - যা শুরু হলো তা রীতিমত তাণ্ডব। শাট শাট করে দোকানের শাটার পড়ে গেল। একটা গাছের ডাল ভেঙে আমার ঠিক পায়ের কাছে পড়ল। হিসাবে একটু এদিক ওদিক হলেই এ লেখা আর আজ লিখতে হত না।
সেদিন হলে পৌঁছলাম রাত ১০ টায়। ভিজে চুপচুপ। সেই অবস্থাতেই কার্ড ফোনের লাইনে দাঁড়ালাম। রসিয়ে রসিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার গল্প বলতে লাগলাম।
ওর কি রাগ শুনে!
ওকে কেন ভেজার সময় সাথে নিলাম না। সবটুকু মজা আমি কেন একাই করলাম!
দিনগুলো সত্যিই হয়ত মজার ছিল!
২০০৭ সালের মে মাস।
কয়েকদিন আগের কথা। সন্ধ্যাবেলা।
খামারবাড়ি থেকে রিকশা করে মিরপুর যচ্ছি। ঝুম বৃষ্টি নামল। একইরকম!
রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, পর্দা আছে কি না?
রিকশাওয়ালা নির্বিকারভাবে না বলল।
আমি হুটটা টেনে দিলাম। দুই পকেটে দুটো মোবাইল। বাঁচাতে হবে ওদেরকে। যে করেই হোক, বৃষ্টির পানি লাগতে দেয়া যাবে না।
অনেক চেষ্টা করেও একটা মোবাইল সেদিন বাঁচাতে পারিনি। সেই রাতে আমার দুচোখের পাতা এক হয়নি। দু:খটা এখনও আছে।
যন্ত্রজীবনে বৃষ্টিভেজা'র মত ফালতু জিনিসের কোনো স্থান নেই।
প্রত্যুত্পন্নমতির সম্পূরক পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০০৭ রাত ১১:২৮