somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রানার কলেজে ভর্তির টাকা গেল হেরোইনের পেছনে

২৭ শে জুন, ২০১০ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এসএসসি পাসের পর দীর্ঘ অবসর রানা আলমের (ছদ্মনাম)। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর ঘোরাফেরার মধ্যে দিনগুলো কাটছে। এমনি সময় এক প্রবাসী বন্ধু এল দেশে। ঢাকা থেকে এল আরেক বন্ধু। তারা বায়না ধরল রানাকে একটি নতুন জিনিস খাওয়াবে। তাদের নানা প্রলোভনে অবশেষে রানা রাজি হলো। তিনবার হেরোইন স্ল্যাশ করাল। রানা গাল ভরে বমি করে দিলেন। দ্বিতীয় দিন আর আড্ডায় যেতে চাইল না রানা। তখন তারা বলল, `তিন দিন পর মজা বুঝবি।' তৃতীয় দিন হেরোইনের আগে ফেনসিডিল খাইয়ে দিল তারা। চতুর্থ দিন ঘরের বের হলেন না রানা। পঞ্চম দিন প্রবাসী বন্ধুটি খবর পাঠাল, সে বিদেশ চলে যাচ্ছে রানা যেন তার সঙ্গে দেখা করে। দেখা করতে গেলেই জোর করে আবার হেরোইন সেবন করানো হলো। সপ্তম দিন রানাকে কদমতলির অভিশপ্ত বরিশাল কলোনির বড় বাড়ি নিয়ে গেল তারা। হেরোইন কেনার জায়গা, দরদাম সব শিখে নিলেন রানা। তারপর নিজেই কিনতে লাগলেন ২০ টাকায় হেরোইনের পুরিয়া। নিজের মাদকাসক্তির প্রথম দিনগুলোর কথা বললেন রানা।
অবশেষে এল কলেজ ভর্তির মেৌসুম। সরকারি সিটি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন। কিন্তু সেখানে পড়াশোনার চাপের কথা শুনে ভর্তি হলেন পাহাড়তলী কলেজে। কিছু টাকা কলেজে জমা দিয়ে বাকি টাকা খরচ করলেন হেরোইনের পেছনে। একসময় পাড়ার লোকদের বিরাগভাজন হলেন। তারা জড়িয়ে দিলেন একটি হত্যা মামলায়। নেশার পুরিয়া নিয়ে আসার সময় গ্রপ্তোর করল পুলিশ। জেলে ছিলেন টানা তিন মাস। পরে অনেক চষ্টো করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) থেকে মুক্ত হলেন তিনি। তখন রানার বাবা বললেন, `তোমার আর পড়াশোনা করে কাজ নেই। তুমি আমার ব্যবসা-বাণিজ্যে মন দাও।' এরপরের কাহিনি শুনুন রানার মুখেই: `এ সময় বাবার ব্যবসার একটি অংশ দেখাশোনা করতাম আমি। কাজ একটি প্রতিষ্ঠানে অর্ডার সাপ্লাই করা। হাতে আসতে লাগল টাকা। নেশাও জমতে লাগল বেশ। একা একা নেশা তো আর জমছে না দেখে বন্ধু জোটালাম জনা বিশেক। একদিন প্রতিষ্ঠানের মালিক আমার পকেটে হেরোইনের পুরিয়া দেখতে পান। এক ঘণ্টার মধ্যে সব বিল পরিশোধ করে বলে দিলেন আর যেন ওই প্রতিষ্ঠানের ত্রিসীমানায় না যাই। ব্যবসাটা হাতছাড়া হলো দেখে বাবা অনেক গালাগাল দিলেন। বললেন, আমি বাসায় খেতে-পরতে পারব কিন্তু কোনো খরচার টাকা পাব না। চোখেমুখে অন্ধকার দেখলাম। ধারদেনা করে নেশার খরচ জোগাড় করতে লাগলাম। একসময় ধার নেওয়ার মতো লোক খঁুজে পেলাম না। বাধ্য হয়ে পোশাক কারখানায় চাকরি নিলাম। দুই বছর কাজ করলাম। একদিন সেই চাকরিও গেল।'
কীভাবে ফিরে এলেন সুস্থ জীবনে?
রানা বলেন, ``পোশাক কারখানার চাকরি চলে যাবার পর একদিন বড় ভাই পতর্ুগাল থেকে ফোন দিলেন। বললেন, `তোমার জন্য কি আমি দেশে আসতে পারব না?' আমি বললাম, `আমি আবার কী করলাম!' তিনি বললেন, `তুমি যা করে বেড়াচ্ছ তাতে আর মান তো বাকি নেই কিছু। আমার বন্ধুর এক ভাই তোমাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাবে। তুমি সেখানে ভর্তি হলে আমি দেশে আসব।' রাজি হয়ে গেলাম। ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর বেলা আড়াইটায় আমাদের পাড়ারই এক ছেলে সিএনজি অটোরিকশায় করে নিয়ে গেল সিলিমপুরের আর্ক মাদকাসক্তি পুর্নবাসনকেন্দ্রে। গিয়ে দেখলাম সবাই ফুটবল খেলছে। ইমতিয়াজ ভাই আমাকে রিসিভ করলেন। পরদিন সকাল নয়টায় আমার চুল কামিয়ে দেওয়া হলো। চার মাস টানা রুটিন কাজ চলল। ধীরে ধীরে আলোর পথে ফিরে এলাম। বুঝতে পারলাম, ভুল পথে পা বাড়িয়েছিলাম। অমানুষ হয়ে যাচ্ছিলাম। এখন প্রায় চার বছর সুস্থ আছি। সুখে আছি। ভালো আছি।'
পরিবারের সদস্যরা কি বিশ্বাস করলেন আপনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেন?
রানার জবাব, `প্রথম দুই বছর তঁারা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেননি। পরে আমার আচরণ, বিবেক-বিবেচনা, বুদ্ধিমত্তা, আন্তরিকতা দেখে তঁারা বিশ্বাস করলেন। এখন তো পুরো পরিবারের দায়িত্ব আমার ওপর।'
আমাদের আলোচনার প্রায় শেষ পর্যায়ে রানা বললেন, `আসলে যারা মাদকাসক্ত তারা অন্য জগতে চলে যান। নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। তঁারা ভালো-মন্দ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সর্বনাশা নেশার জন্য যেকোনো কাজই করতে পারেন। তাই সমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে সচেতনতা সৃষ্টির।'

১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×