ওয়াদার খেলাফ করা অন্যায় !!!
গল্প - ১
এক হতদরিদ্র কৃষকের একটিমাত্র ছাগলের বাচ্চা হবে। পেটে ব্যথা উঠেছে। ছাগল সেই ব্যথায় ছটফট করছে। কিন্তু বাচ্চা হচ্ছে না। কৃষক ভয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলো এই বলে যে, "হে আল্লাহ! ছাগলটা কষ্ট পাচ্ছে। আপনি ওর প্রসব করিয়ে দিন। বিনিময়ে আমি একটা উট আপনার ওয়াস্তে কোরবানী করব।"
এই দোয়া শুনে এক প্রতিবেশী অবাক হয়ে বলল, "সে কি! তোমার তো আরেকটা ছাগল কেনারই সামর্থ্য নেই! উট কোরবানী কিভাবে দেবে?" কপট হাসি হেসে কৃষক বললো, "আগে তো বাচ্চা হোক। পরে আর দেবনা।"
একথা শুনে আল্লাহ ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি সাথে সাথে ছাগলটির প্রসব করিয়ে দিলেন। ছাগলটির ফুটফুটে চারটি বাচ্চা হলো। তাই দেখে কৃষক মহাখুশী। রাতে শুয়ে কৃষাণী আবার তাকে মনে করিয়ে দিল উট কোরবানীর কথা। সে বলল, "তুমি কিন্তু আল্লাহকে কথা দিয়েছ যে, উট কোরবানী দেবে। না দিলে ওয়াদার খেলাফ হবে। আল্লাহ রুষ্ট হবেন। তখন আমাদের বিপদ হতে পারে।"
কৃষক বললো, "বললেই যে দিতে হবে, একথা কে বলেছে? সামর্থ্য থাকতে হবে না? আমার তো সামর্থ্যই নেই। সামর্থ্য না থাকলে দেব কোত্থেকে? আল্লাহর সেটা বোঝা উচিত।"
কৃষাণী বিরক্ত হয়ে বলল, "সামর্থ্য আছে কি নেই, সেটা কথা দেবার আগে ভাবা উচিত ছিল।"
কৃষক মহাবিরক্ত হয়ে বলল, "তখন তো বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার চিন্তায় অস্থির ছিলাম। যেকোন উপায়ে বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার চিন্তায় ছিলাম। সামর্থ্য আছে কি নেই, সেটা ভাবার সুযোগ ছিলনা। আর ওয়াদা না করলে কি আল্লাহ এত তাড়াতাড়ি ছাগলের প্রসব করিয়ে দিতেন? দ্যাখনি, কি সুন্দর স্বাস্থ্যবান চারটা বাচ্চা হয়েছে?"
কৃষাণী স্বামীর কপটতায় বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। আল্লাহ হতবাক হয়ে তাদের কথা শুনছিলেন। রাতে চোর এসে বাচ্চাসহ ছাগলটি চুরি করে নিয়ে গেল। সকালে চাষী দুঃখে মরে যেতে লাগলো। সে তখন কিভাবে একটা উট কেনা যায়, সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে গেল। কিন্তু কোন উপায় বের করতে পারলো না। রাতে দুশ্চিন্তায় সে ঘুমাতে পারেনা। এর সাতদিন পর কৃষকের একমাত্র ছেলে পুকুরে পরে মারা গেল। চাষী কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে তার ওয়াদা খেলাফের পাপের জন্য ক্ষমা চাইলো। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
গল্প - ২
এক বিখ্যাত বাঈজীর নাচ দেখার জন্য এক রাজা বিশাল আয়োজন করলেন। তাঁর সভাসদ, বন্ধু সবাইকে আমন্ত্রণ জানালেন। বিশাল ভোজের ব্যবস্থা হলো। জলসাঘর নতুন ঝাড়বাতিতে সাজানো হলো। সবাই নাচ দেখার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। এমন সময় বাঈজী জানালো, আজ সে নাচবে না। তার মুড নেই। একথা শুনে রাজার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী জিজ্ঞেস করলো, "একথা আগে বললে না কেন?" বাঈজী বলল, "আগে বললে আমার নাচ দেখার জন্য আপনারা কি এত ব্যাকুল হতেন?"
একথা মন্ত্রী গিযে রাজাকে জানালো। রাজা মহা রাগান্বিত হয়ে জল্লাদকে ডেকে ওয়াদা খেলাফ এবং রাজার সাথে মিথ্যাচার ও ছলনা করার অপরাধে বাঈজীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন।
এগুলো নিছকই গল্প। বাস্তবতার সাথে এসবের কোন যোগসূত্র নেই। বন্ধুরা, আপনারা ওয়াদা করার আগে ভেবেচিন্তে ওয়াদা করবেন এবং কখনোই ওয়াদার খেলাফ করবেন না। কারণ ওয়াদা ভঙ্গ করা পাপ এবং আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গকারীকে পছন্দ করেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:২১