তারপরে কি জানি কি হলো,একদল লোক এসে পাওনাদার দাবি করে ব্যবসা টা হাতিয়ে নিয়েছে। বাবার কথা ভাবতেই ইরার চোখ ভিজে যায়। গাইবান্ধা জেলার মেয়ে ঢাকায় এসে খুব একটা পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারলো না। দুই মাস হয়েছে চাকুরী পেয়েছে। রমযান মাস চলে আসলো। ইরা কে সাফায়েত নামে একটা ছেলে পছন্দ করতো। কিন্ত ইরা সুমন নামে একজনকে ভালবাসতো বলে কখনো সাফায়েত কে পাত্তা দেয়নি। ইরা ঢাকায় আসার প্রধান কারন সুমন। সুমন এখানে ইরা কে একটা চাকুরী দিয়েছে। আর তারা একে অপরকে খুব ভালবাসে। এই সুবিধায় স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে তারা দুজনেই একসাথে থাকতে আরম্ভ করেছিলো। প্রতিবছর ঈদের বাবা অনেক কিছু কিনে দিতো। যেহেতু এবার বাবা নেই,তাই নিজের চাহিদা দুরে রেখে ছোট ভাই বোনের জন্য অনেক কিছু নেওয়ার ইচ্ছা পোষন করেছিলো সুমনের সাথে। কিছু টাকা চেয়েছিলো, কিন্ত সুমন অন্য খরচের কথা বলে আর দেয়নি। সুমন এক সময়ে ইরার বাবার সাথেই রাজনীতি করতো। ইরার বাবার মৃত্যুর পর, সুমন নিজের রক্ষায় ঢাকায় আসে।
'
ঈদের আর তিনদিন বাকি। ইরা বাসায় মায়ের কাছে ফিরে যাবে। ঈদের কেনাকাটা শেষ। রাতে রওনা দিলো,অফিস শেষ করে। ট্রেনে একাই যাচ্ছিলো ইরা। ইরা হঠাৎ একটু ফ্রেশ হওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো। পাশের বগি টা ছিলে কেভিন বগি। ইরা যখন টয়লেটে প্রবেশ করবে কিছু ছেলে ট্রেনের দরজা খুলে সিগারেট সেবন করতে ব্যস্ত ছিলো আর খুব হাসাহাসি করছিলো। কিন্ত ইরা কে দেখার পর তারা চুপ হয়ে গেলো। ইরা ফ্রেশ হয়ে বের হতেই তারা ইরা কে ঘিরে ধরলো। তাদের ভিতরে একজন ইরা কে পিছন থেকে জড়িয়ে পাশের বগিতে টেনে নিয়ে গেলো। ইরা বাসায় ফিরে গেলো। রাতের কথা কাউকে বললো না। ঈদের খুশি শেষ। ইরা এখনো সেই স্মৃতি ঘিরে আছে। ঈদের দিন বিকেলবেলা ইরা সুমন কে ফোন দিয়েছিলো। সেদিনের দুর্ঘটনা সব বলেছিলো। কিন্ত সুমনের পরিবার এমন মেয়ের সাথে কখনো তাকে মেনে নিবে না। সুমন যোগাযোগ করতে বারন করে দিয়ে ছিলো। ইরা আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো,কিন্ত পরিবার টা ধ্বংস হয়ে যাবে একারনে সে মুখ বুজে সয়ে নিলো সব।
সত্যিকারের ভালবাসা যখন ইরার সামনে প্রমাণিত তখন আর কিছুই করার নেই তার। ভালবাসার নামে শরীর ভোগে এই সমাজে কিছুই হয় না। ভালবাসায় শরীর ভোগ এর মানে আধুনিক সভ্যতা। যে মেয়ে যত আধুনিক তার মর্যাদা সমাজে তত বেশি। কিন্ত যে মেয়ে কিছু পিচাশ দ্বারা সব হারায়,তখন সে সমাজের চক্ষে নষ্টা মেয়ে বা পতিতা হয়ে যায়। ইরা গ্রামের পুকুরপাড়ে বসে কথা গুলো কে ভাবতেই কেঁদে দিলো। নিজের ভুল বুঝতে পারলো। আস্তে আস্তে গ্রামের সবাই এখন ইরার সাথে হয়ে যাওয়া ঘটনা জেনে গেছে। ধিক্কার জানাচ্ছে আর ঘৃণার চোখে দেখে ইরাদের। ইরা পুকুরপাড়ে বসে কাঁদছিলো। অনুমতি নিয়ে সাফায়েত পাশে বসলো। হাত দিয়ে চোখ মুছে দিলো ইরার। আর সে ইরার ব্যাপারে সব জেনে এখানে এসেছে,শুধু মাত্র তার ভালবাসার মানুষের বিপদে তার পাশে থাকতে। সাফায়েত ইরা কে আবারো এগিয়ে যাবার উৎসাহ দিলো। সব ভুলে এগিয়ে যেতে আগ্রহী করলো। আর সাফায়েত ইরার হাত ধরে ইরা কে অচেনা পথ পাড়ি দেওয়ার শপথ করলো।
সাফায়েতঃ তুমি চাইলে তোমার মাথা,আমার কাধে রাখতে পারো।
গল্প :-Nezam U Khan
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৪:১২