আমি জানি তুমি একটা ডাবল লাইফ লীড
করছো।
শুধু তুমি না, আমাদের বর্তমান সমাজ
জীবনের ট্রাজেডী হলো
বেশীরভাগ টীনেজ
ছেলেমেয়েরাই, চাক বা না চাক, টু
সাম এক্সটেন্ট একটা ডাবল লাইফ
লীড করতে বাধ্য হয়/ হচ্ছে।
.
যে মা হয়তো তুমি মেয়ে হলে
স্কুল/কলেজে যাওয়ার সময়
ঠোঁটে লিপষ্টিক কেনো
দিয়েছো তাইই নিয়ে চরম তুলকালাম
লাগিয়ে দিয়েছে তোমার সাথে, বা
তুমি ছেলে হলে টাখনুর উপরে
প্যান্ট না পরে নীচে কেনো
পড়েছো তাই নিয়ে তোমাকে
প্রতিদিন কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান
করে যাচ্ছে, তার ঘুনাক্ষরেও ধারনা
নেই ঠোঁটে লিপষ্টিক দেয়া বা
টাখনুর নীচে প্যান্ট পড়া তো কিছুই
না, তুমি হয়তো অলরেডী কারো
সাথে ফিজিক্যাল রিলেশানশীপেও
জড়িয়ে গেছো!
শুধু তাই না, মেয়ে হলে হয়তো
তোমার এক/দুইটা এবরশনও
করিয়েছো, যা মোটেও
অস্বাভাবিক না।
ছেলে হলে হয়তো তুমি তোমার
গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে শহরের
আশেপাশে হোটেলে থেকে
ঘুরেও এসেছো, মোটেও
অস্বাভাবিক না।
তোমার বাবা যখন রাতে অফিস
থেকে ফিরে জিজ্ঞেস করছে
'সব নামাজ পড়েছো আজকে?',
তখন হয়তো তুমি সারাদিন ব্যস্ত ছিলে
বন্ধুদের সাথে আড্ডায়, ঘুরাঘুরিতে,
ফাষ্টফুড শপে হৈ চৈ খাওয়া দাওয়াও, আর
এক্সটেন্টটা আরেকটু টানলে
হয়তো তুমি সিগারেট বা কোনো
ধরনের ড্রাগসও ধরে
ফেলেছো এর মধ্যে। অথবা
রেগুলার পর্ণ না দেখলে তুমি এখন
থাকতে পারোনা।
এমনও হতে পারে, খুবই স্বাভাবিক, তুমি
অলরেডী একের অধিক ফিজিক্যাল
রিলেশানশীপে জড়িয়ে
গেছো।
.
আমি এটা বলছিনা তুমি খারাপ করছো কি
ভাল করছো। who am I to judge
you?!
আমি এটাও বলছিনা তুমি এমনটাই
করেছো বা করছো।
বা হতে পারে আমি যা যা বললাম তার
কিছুই না।
তোমার লাইফের জটিলতা হয়তো
সম্পূর্ণ ভিন্নরকম।
অন্যরকম।
এমন রকম, যার সম্পর্কে আমার
কোনো ধারনাই নেই।
তোমার এবং তোমাদের লাইফের
(ডাবল) লাইফের জটিলতা সম্পর্কে
আমার বিন্দুমাত্র আইডিয়া না থাকাটাও খুবই
সম্ভব।
ঠিক যেমনটা আমাদের সময়ে
আমাদের বাবা-মাদেরকে দেখেছি।
আমার এবং আমাদের অনেক
টীনেজ জটিলতাই উনারা টোটালি
বুঝতেন না। উনারা যা নিয়ে
ঘ্যানঘ্যানাতেন, তাতে হাসি পেতো
অনেক সময়। আমরা যে অন্য কী
ধরনের জটিলতার ভিতর দিয়ে
যাচ্ছিলাম, জানলে হয়তো উনারা হার্ট
এটাকেই মরে যেতেন!
.
ঠিক যেমনটা আমাদের বাবা-মাদের
সময়ে আমাদের দাদা-দাদী, নানা-
নানীরা বাবা-মা'দের অনেক জটিলতা
বুঝতেন না।
.
একটা জেনারেশন আরেকটা
জেনারেশনকে (কম-বেশী)
বুঝবেনা এবং এই না বুঝাটা আগের
জেনারেশনকে আতংকিত করে
তুলবে, তারা পরের
জেনারেশনকে যেভাবেই হোক
কন্ট্রোল করতে চাইবে, অনবরত
বলে যাবে 'আমরা কি তোর শত্রু?
বাবা-মা কি সন্তানের কখনো খারাপ
চায়?', আর পরের জেনারেশন
কোনো না কোনোভাবে
আগের জেনারেশনের
কন্ট্রোলিং এটিচ্যুডকে বাইপাস
করে পাশ কাটাবে, খানিকটা বা
অনেকটা ডাবল লাইফ লীড করবে-
এসব অনেকটা পূর্ব দিকে সূর্য
উঠে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়' এর
মতই স্বাভাবিক।
.
কিন্তু যা অস্বাভাবিক তা হলো,
আমাদের বাবা-মা'দের জেনারেশন
পর্যন্ত এই জেনারেশন গ্যাপ একটা
সহনীয় মাত্রা পর্যন্ত ছিলো।
অনেকটা প্রেডিক্টেড ছিলো
ছেলেটা বা মেয়েটা বাইরে ডাবল
লাইফ লীড করলেও কতটুকু
করতে পারে।
অনেকটা আন্দাজ করা যেতো
ছেলেটা বা মেয়েটা কোনো
ধরনের জটিলতায় জড়িয়ে গেলে
কতটুকু জড়াতে পারে।
.
কিন্তু বাবা-মা'দের জেনারেশন
পেরিয়ে আমাদের জেনারেশনে
এসে globalization, media,
technological advancement এসব
এমনভাবে জেনারেশন গ্যাপটাকে
বড় করে তুলেছে, আমাদের বাবা-
মা'দের পক্ষে কল্পনা করাই সম্ভব
ছিলোনা আমাদের জীবনের
জটিলতার ধরন-ধারন।
আমাদের বাইরের জীবন।
আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের
আড্ডার ন্যাচার।
আমাদের চিন্তা-ভাবনা।
.
দাদাদাদু নানানানুদের সময়ে যখন
রেডিও এসেছিলো, শুনেছি এক
বাড়িতে রেডিও থাকলে গ্রামের
সম্মানিত পরিবারগুলোর বাবা'রা সন্ধার
পর সে বাড়িতে গিয়ে দল বেঁধে
রেডিও শুনতেন।
তারপর...
বাবা-মা'দের সময়ে যখন টিভি এলো,
তখন কোনো বাসায় টিভি থাকা মানে
ছিলো বেশ বড়লোকি কাজ কারবার।
শুক্রবার হলেই আশেপাশের বাড়ির
বৌ-ঝিরা দল বেঁধে সেই টিভিওয়ালা
বাড়িতে গিয়ে শুক্রবার বিকেলের
ছায়াছবি দেখতে বসতেন।
এরপর...
আমাদের সময়ে এইসব কিছু ডিংগিয়ে
ধুম করে একসাথে চলে এলো
অনেক কিছু!
মোবাইল!
ইন্টারনেট!
ডেস্কটপ!
.
এরপর থেকে এই আসাটা আর
থামেনি।
ডেস্কটপ ছোট হতে হতে এখন
তোমাদের সময়ে এসে
মোবাইলে ইন্টারনেট না থাকলে,
হাতে আইফোন না থাকলে
বন্ধুবান্ধবরা চোখ বড় বড় করে
তাকায়!
ভাবটা এমন যেন তুমি কোন মধ্যযুগ
থেকে এসেছো!
.
আমাদের বাবা-মাদের সময়ে জলসা
সিনেমা হলে লুকিয়ে গিয়ে শাবানার
নাকের পানি চোখের পানি এক করা
সিনেমা দেখাই ছিলো বিশাল 'সমাজ
বিরোধী' কাজ করে ফেলা!
.
আমাদের সময়ে এসে সেই 'সমাজ
বিরোধী' কাজ সব সংজ্ঞাই বদলে
ফেলেছিলো।
'বিংশ শতাব্দী' বলে একটা ফ্রেইজ
শুনো না প্রায় সময়, সেই বিংশ
শতাব্দীর শেষের দিকে দাঁড়িয়ে
আমাদের জীবনের সব ধরাবাঁধা নিয়ম
উলটে পালটে গিয়েছিলো।
আমাদের সময়ে এসে তাই
এফেয়ার ম্যারেজ খুব স্বাভাবিক একটা
ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। বাবা-মা'রা
মোটামুটি এসবকে এক্সেপ্ট
করে নিতেও শিখে গেছে এখন।
.
কিন্তু তোমাদের সময়ে এসে?!
তোমাদের সময়টা হলো 'বিংশ
শতাব্দী' থেকে 'একবিংশ
শতাব্দী'তে ট্রানজিশন পিরিয়ড।
যে কোনো ট্রানজিশন পিরিয়ড
প্রচন্ড রকমের টালমাটাল হয়।
পরিবর্তন মানেই ট্রায়াল এন্ড এরর।
পরিবর্তন মানেই নতুন নতুন জিনিষ
আসতে থাকা। পুরানো জিনিষ ভাংগতে
থাকা।
পরিবর্তন মানেই পুরানো সব তার/
তাদের সাধ্যমত শক্তি দিয়ে নতুনকে
ঠেকানোর চেষ্টা।
তার অর্থ 'কনফ্লিক্ট'।
তার অর্থ যেখানে নতুন পুরাতনকে
বুঝাতে অক্ষম, সেখানে বাইপাস!
সেখানে লুকিয়ে চুরিয়ে
এডভেঞ্চার। সেখানেই কেমন
যেন রক্তে নিয়ম ভাংগার নেশা
জাগে।
নেশা জাগে সমাজকে বুড়ো আংগুল
দেখানোর। হোক না তা যতই
সবাইকে লুকিয়ে।
.
এরকম সময়গুলোতে সমাজ, মানুষ
এবং তাদের জীবন- সব খুব দ্রুত
বদলাতে থাকে।
আর আমাদের সময়ের বদলানো
যদি একশ আশি মাইল বেগে হয়ে
থাকে, সে বেগ বাড়তে বাড়তে
তোমাদের সময়ে এসে এখন
স্পীডমিটারের লাষ্ট দাগ ছাড়িয়ে
যাচ্ছে প্রায়।
সমাজবিজ্ঞানীরা আতংকিত হয়ে
বলছেন, 'যে হারে বিজ্ঞান এবং এর
প্রভাবে আমাদের way of life
বদলাচ্ছে, মানব সভ্যতা as a whole
এর জন্য প্রস্তুত না। আমরা এমন
সুপারসনিক গতিতে আগাচ্ছি, ভয়াবহ
রকমের ক্র্যাশ করা থেকে
বাঁচানোর মত ব্রেক আমাদের
হাতে এখনো নেই!'
.
ঠিক কোন বিজ্ঞানী এটা
বলেছিলেন মনে করতে পারছিনা,
কিন্তু আমারো ইদানিং তোমাকে আর
তোমাদেরকে দেখে প্রায়ই
মনে হয়, আমরা চরম দ্রুত ঘটতে
থাকা যেসব অনেক অনেক
পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি, এই
পরিবর্তনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ
তৃতীয় বিশ্বের সদস্য হিসেবে
একবিংশ শতাব্দীর
গ্লোবালাইজেশানের যে চরম
ট্রায়ালের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে, এবং
আমরা, পুরো সমাজটা, বলতে
গেলে যেভাবে অপ্রস্তুত
অবস্থায় এই ট্রায়ালে ধরা খেয়েছি,
এর মাশূল শুধু তুমি বা তোমার
জেনারেশনই দিবা না, আসছে
আরো কয়েক জেনারেশনকে
দিতে হবে।
.
তোমার বা তোমাদের সাথে তাই
তোমার বা তোমাদের বাবা-মা'দের
জেনারেশনের গ্যাপ এতই ভয়াবহ
রকমের বড় হবে (বা অলরেডী
হয়ে গেছে), যা দেখে
সমাজবিজ্ঞানীরাও আঁতকে উঠবে
(বা উঠছে)।
কারন সহনীয় মাত্রায় জেনারেশন
গ্যাপ সমাজ এবং সময়ের জন্য
দরকারী। কিন্তু তা যদি অসহনীয়
আর অকল্পনীয় মাত্রায় চলে যায়,
তখন তা সমাজের প্রত্যেকটা
মানুষের জন্য ভয়ংকর।
এই ভয়ংকরের একটা উদাহরন
তোমাদের 'রেইনবো' এটিচ্যুড।
শুনেছি এখনকার ফ্রেন্ড
সার্কেলে এটা একটা নতুন ট্রেন্ড,
নতুন ফ্যাশন, নতুন এডভেঞ্চার, নতুন
স্ট্যাটাস সিম্বল, নতুন 'আধুনিকতা'।
অপজিট সেক্সের পরিবর্তে
সেইম সেক্স রিলেশানশীপ।
অলরেডী তোমাদের
ফ্রেন্ডসার্কেল যখন এই
'আধুনিকতা'কে এডপ্ট করতে শুরু
করে দিয়েছে, এজ আ সোসাইটি,
আমরা এখনো এওও জানিনা কিভাবে
আমরা রিএক্ট করবো, বা কিভাবে করা
উচিত!
.
সমস্যাটা কোথায়, আমি জানিনা।
তাই অনেকেই আমাকে বার বার
বললেও, আমি তোমার সাথে
তোমার লাইফ নিয়ে, তোমার
ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে টোটালি কথা
বলিনা।
কারন আমি খুব ভাল করেই জানি,
আমাকে যখন ডেকে ডেকে
মুরুব্বীরা বুঝাতে চেষ্টা করতেন,
মেজাজ কেমন খিঁচে যেতো।
খালি মনে হতো, 'বলে যান, বলে
যান। নিজে আমার জায়গায় থাকলে
তারপর বুঝতেন!'
এখনো মনে আছে, কেমন একটা
রিয়েল ড্যাম-কেয়ার ফীলিংস কাজ
করতো মনের ভিতর। আর কখনো
কখনো বুকের অনেক গভীরে
কোথাও খুব চিকন করে দুঃখবোধ
হতো, কেউ কেনো বুঝলোনা
আমাকে তাই ভেবে!
কখনো কখনো আকাশের দিকে
তাকিয়ে কোথাও মেঘ খুঁজে না
পেলে মনে হতো আকাশের সব
মেঘ আমার বুকের ভিতর ঢুকে
জমে গেছে। সেসব মেঘ কান্না
হয়ে বেরুতে চাইতো। কিন্তু
কাঁদতাম না। মনে হতো কান্নাটাও
বেহুদা। কেঁদে কী হবে।
.
অনেক সমস্যার মধ্যে এটাও একটা
সমস্যা।
টীনেজ সময়টাই এমন, সে তার
সাথে করে নিয়ে আসে অদ্ভুত
ধরনের এক দুঃখবোধ।
ঠিক বাংলাটা খুঁজে পাচ্ছিনা, ইংলিশে
একে বলতে পারো melancholy.
এই অচেনা, সংজ্ঞাহীন, ঠিক কারন
খুঁজে না পাওয়া দুঃখবোধের সাথে
যখন বাবা-মা, সমাজ, মুরুব্বীরা যোগ
হয় কানের কাছে সারাক্ষন এটা না হয়
ওটা নিয়ে ঘ্যানঘ্যানাতে, আমি জানি
তখন কেমন লাগে।
প্রথমে বিরক্তি।
তারপর হতাশা।
তারপর রাগ।
তারপর মনে হয়, ধুর যা! সব
জাহান্নামে যাক! who cares?!
.
কষ্টগুলো, বা দুঃখবোধগুলো
এখনো ভুলে না গেলেও, সমস্যা
হলো, আমি যেহেতু আর
টীনেজ নেই, আর আমার/
আমাদের সময়ের context
তোমাদের থেকে অনেক ভিন্ন
ছিলো, অনেক ব্যাকডেটেড
ছিলো, আমার পক্ষে আসলে
তোমার কষ্টগুলো, তোমার
চিন্তাগুলো ধরতে পারা অনেকটা
অসম্ভব।
আমি চাইলেও তাই তোমার জায়গায়
দাঁড়িয়ে তোমার মত করে ভাবতে
পারিনা।
স্রেফ অন্ধের মত আন্দাজ
করতে চেষ্টা করি শুধু।
তাই তোমার মা-বাবা, মুরুব্বীরা যখন
তোমার খুব ছোট ছোট
বিষয়গুলো নিয়ে বেশ চরম চিন্তিত,
দুনিয়াদারী এক করে ফেলছেন
তোমার পরীক্ষার খারাপ রেজাল্ট
নিয়ে, আমার তখন টু সাম এক্সটেন্ট
বিরক্তই লাগে।
মানুষগুলো অন্ধ নাকি?
এরা পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে
ঘ্যানঘ্যানাচ্ছে অথচ দেখতেই
পাচ্ছেনা তুমি আর তোমরা একটা পুরা
জেনারেশন কী বিশাল রকম একটা
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের ভিতর দিয়ে
যাচ্ছো!
বেড়ে উঠছে একটা শংকর
জেনারেশন।
যারা না পারছে এদিকে ফিট হতে, না
পারছে ওদিকে ফিট হতে।
তোমাদের বাবা-মা'রা, পরিবার এবং
সমাজের মূল বোধ যেহেতু
এখনো 'ইষ্টার্ন' মানসিকতার,
তোমাদের ওয়েষ্টার্ন এবং
গ্লোবাল কালচারাল এডপশান তাই
অনবরত কনফ্লিক্ট করে যাচ্ছে
সবকিছুর সাথে।
দুইয়ের কনফ্লিক্টের মাঝখানে
পরে তোমাদের তাই ছ্যাড়াব্যাড়া
অবস্থা!
তোমাদের এই ছ্যাড়াব্যাড়া অবস্থার
পিছনে কাকে রেখে কাকে
দায়ী করবো বুঝে পাইনা।
তোমাদেরকে? তোমাদের বাবা-
মা, পরিবারদেরকে? সমাজকে? নাকি
এই অসম্ভব রকম দ্রুত
পরিবর্তনশীল
গ্লোবালাইজেশনকে?
কিন্তু একটা জিনিষ বুঝি- কে দায়ী না
দায়ী এসব সমাজ ঠিকই খুঁজে বের
করবে, এবং এসব পরিবর্তনের সাথে
সমাজ কোনো না কোনোভাবে
cope করেও নিবে, কিন্তু মাঝখানে
লুজার হবা তুমি আর তোমার
ফ্রেন্ডসরা।
আমি অলরেডী দেখতে পাচ্ছি তুমি
আর তোমার ফ্রেন্ডসরা কিভাবে
'পরিবারের নষ্ট সন্তান' হওয়ার খাতায়
নাম লেখাচ্ছো!
উপদেশ দিবোনা। কারন উপদেশ
দেয়ার মত জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা আমার
নেই।
কিন্তু আমি নিজের বেলায় কী
করেছিলাম, কী ভাবতাম তার খানিকটা
শেয়ার করি তোমার সাথে।
-----------
চিন্তা নাম্বার ১.
জীবনের কোনো সময়ই
'জীবনের শেষ সময়' না।
যে কোনো পরিস্থিতিতে বা
কষ্টে তোমার যখন মনে হচ্ছে
'দ্যাটস ইট, কান্ট টেইক ইট
এনিমোর', এটাকে কী বলে,
উমম, emotional exhaustion.
ইমোশনালি তুমি এতই ক্লান্ত যে
তোমার মনে হচ্ছে তুমি আর
পারবানা।
কিন্তু তারপরও মানুষ পারে।
এজন্যেই দেখবে যে অনেক
বাবা-মা'র মাত্র এক সন্তানও কোনো
দূর্ঘটনায় মরে যাওয়ার পরও সেই
বাবা-মা বেঁচে থাকে!
এজন্যেই দেখবে যুদ্ধে এত এত
ভয়ংকর, অবিশ্বাস্য রকমের অমানবিক,
হিংস্র ঘটনা ঘটার পরও ভিক্টীমরা ঠিকই
সার্ভাইভ করে।
বেঁচে থাকে।
মানুষ সবকিছুর ভিতর দিয়ে বেঁচে
থাকে। মানুষের সার্ভাইভিং পাওয়ার
অসম্ভব রকম শক্ত।
তাই যখনই তোমার মনে হবে
That's it, can't take it anymore,
নিজেই নিজেকে মনে করিয়ে
দিও- সময়ের ব্যপার মাত্র, তুমি নিজেই
এই ইমোশনাল ক্লান্তি কাটিয়ে
উঠবে। There is always a day
waiting after a dark night.
.
চিন্তা নাম্বার ২.
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের ভিতর দিয়ে
যাওয়া জীবনেরই একটা অংশ।
টীনেজ সময়ের আইডেন্টিটি
ক্রাইসিসের অন্যতম এক ধরনের
কমন চিন্তা হলো 'আমার বাবা মা
কেনো এমন?'
ওরা কেনো অমুকের বাবা-মা'র মত
হলোনা!
শিক্ষিত হয়েও কিভাবে ওরা এমন
অশিক্ষিতের মত আচড়ন করে?!
এমনকি অনেকে নিজের বাবা-মাকে
নিয়ে লজ্জাও পায় তাদের
কোনো নির্দিষ্ট আচড়নের জন্য
বা পোষাক আশাক বা ব্যবহারের
জন্য।
আমি মোটেও বলছিনা বাবা-মা যা করে
তা জাষ্টিফাইড। আমি বরং উল্টাটা বলি।
অনেক বাবা-মা'ই এমন ইর্যাশনাল
আচড়ন করে, এমন ধরনের ব্যবহার
করে, শাসন করতে গিয়ে এমন সব
কমেন্টস করে যা সন্তানের জন্য
অনেক ক্ষেত্রেই খুবই খুবই খুবই
ডিফিকাল্ট ফেইস করা।
কিন্তু যখনই বাবা-মা'কে চরম অসহ্য
লাগবে, নিজেকে স্রেফ একটা
কথা মনে করিয়ে দিও- আল্লাহ না
করুন, আজকে যদি ধরো তোমার
লাইফ থ্রেটেনিং কোনো অসুখ
হয় ।
ধরো তোমার কিডনী লাগবে,
তোমার এই যে এত এত বন্ধু-বান্ধব,
এরা তোমার জন্য বেশীর
থেকে বেশী হলে কনসার্টের
আয়োজন করবে সাহায্যের চাঁদা
তুলতে, তারপর সেই কনসার্টে রক
এন্ড রোল গায়ক গায়িকা এনে
নিজেরা নাঁচবে-গাবে, এর চে'ও
বেশী হলে তোমার রক্ত
লাগলে হয়তো সবাই মিলে কয়েক
ব্যাগ রক্ত দিবে।
দ্যাটস ইট।
একমাত্র তোমার বাবা-মা'ই নিজেদের
নাওয়া খাওয়া ভুলে যাবে।
একমাত্র তোমার মা'ই চব্বিশ ঘন্টা
কাঁদবে।
একমাত্র তোমার বাবা'ই তোমার
সামনে থেকে কারণে অকারনে
সরে যাবে যেনো তুমি তার
চোখের পানি দেখে না
ফেলো।
আর যদি কিডনী দেয়া সম্ভব হয়,
একমাত্র তোমার বাবা-মা'ই নিজের
কিডনী তোমাকে দিয়ে দিবে,
এক বিন্দু নিজের কথা চিন্তা না করে।
অথচ হয়তো এই বাবা-মা'ই এখন
তোমাকে রাগের মাথায় বলছে
--'তোর মত কুলাংগারকে কিভাবে
পেটে ধরেছিলাম?!'
'এত মানুষ মরে তুই মরস না ক্যান? তুই
মরলে আমার হাড় জুড়ায়!'
'তোর মত সন্তান হওয়ার চে না
হওয়াই ভাল!'
জানি, ওদের মুখের একেকটা কথা
তোমার বুকের ভিতর সাপের
বিষের মত ছোবল মারে। ইচ্ছে
হয় ওদের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন
করে যদি কোথাও চলে যেতে
পারতে।
কিন্তু যত খারাপই লাগুক, কিছুতেই
ভুলে যেওনা, আল্টিমেটলি ওরাই
তোমার সত্যিকার শুভাকাংখী।
-
চিন্তা নাম্বার ৩.
তোমার অনেক বন্ধু-বান্ধবের
জীবন তোমার চেয়ে অনেক
smooth. তারা অনেক কিছুই না
চাইতেই পেয়েছে/ পেয়ে যায়
যা তুমি যুদ্ধ করেও পাওনি/ পাচ্ছোনা।
তার মানে এই না যে তুমি বঞ্চিত, বা
তুমি ভিক্টীম।
উপরের দিকে না তাকিয়ে নীচের
দিকে তাকালে দেখবে, সমাজে
তোমার বয়সী হাজার হাজার না শুধু,
লাখ লাখ ছেলে মেয়ে আছে যারা
তুমি যা পেয়েছো বা পাচ্ছো তার
একশভাগের একভাগও পায়নি।
যা পাওনি তা নিয়ে হাহুতাশ করতে
থাকলে, যা পেয়েছো
সেগুলোও কোনো কাজে লাগবেনা।
লুজার তুমি লুজারই থেকে যাবা।
.
চিন্তা নাম্বার ৪.
তোমার লাইফে প্রকাশ্য বা গোপন
যত আপ্স এন্ড ডাউন্স-ই থাকুক না
কেনো, একাডেমিক ভাল
রেজাল্টের সাথে কম্প্রোমাইজ
করাটা হবে চরম বোকামী।
তোমার কিছু ফ্রেন্ডসরা বেশ
স্মার্ট। তোমাদের মত সেইম
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসের ভিতর দিয়ে
যাওয়ার পরও তারা ভাল ভাল ক্রেডিট
আর রেজাল্ট ব্যাগে ভরে
নিজেদের একাডেমিক সাইডটাকে
সেইফ করে রেখেছে।
আর আমাদের সমাজের স্ট্রাকচার
এখনো যেমন, তোমার এই
ফ্রেন্ডসরা ভবিষ্যতে টীনেজ
লাইজের জটীলতা থেকে
বেরিয়ে যখন আফটার-টীনেজ
লাইফ ফেইস করার সময় আসবে,
তখন আর কিছু না পারুক, ব্যাগের ভিতর
থেকে ভাল একাডেমিক রেকর্ড
বের করে দিতে পারবে।
এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা
যায় এরাই ভাল চাকরি বাকরি নিয়ে
অনেক উপরে উঠে যায়। আর
তোমাদের মত কিছু লুজার তখন এসব
ফ্রেন্ডসদের সাথে দেখা করতে
যেতেও লজ্জা পায়।
কারন নিজের টীনেজ জীবনের
জটিলতা তোমার কাছে এত বড় মনে
হয়েছিলো যে তুমি ভেবেছিলে
জীবন বুঝি ঐ টীনেজ সময়েই
শুরু আর শেষ।
জীবনের আর আগে বা পরে কিছু নেই।
তুমি তাই সামনের দিকে তাকাওনি।
এরের জন্যও ভাবোনি ভবিষ্যতের কথা।
কিন্তু ওরা ঠিকই মাথায় রেখেছে,
টীনেজ লাইফের
কমপ্লেক্সিটিতেই জীবনের
শেষ না।
আজকে হয়তো তুমি জীবনে
অনেক বড় কোনো ভুল
করেছো, পরিবার-সমাজ-মুরুব্বীরা
তোমাকে ছি ছি করছে, কিন্তু
তোমার যদি ভাল (বলতে চাচ্ছি খুব
ভাল) একাডেমিক অর্জন থাকে,
কালকে যখন তা তোমাকে ভাল
একটা ক্যারিয়ারে হেল্প করবে, তুমি
যখন এভারেজ থেকে উপরে
উঠে স্বচ্ছল লাইফ লীড করবে,
ঐ পরিবার-সমাজ-মুরুব্বীরাই তখন
তোমাকে দেখিয়ে
অন্যদেরকে বলবে 'ওকে
দেখে শিখ, দেখ, কিভাবে লাইফে
শাইন করতে হয়!'
.
ছোট্ট করে এখানে একটা ঘটনাও
বলি।
এক সময় ক্লাস টেনের দিকে খুব
প্রিয় এক বান্ধবীর মা কোনো
এক কারণে আমাকে উনাদের
ঘরের ভিতরের রুমে ডেকে
নিয়ে বলেছিলেন, 'আমি চাইনা তুমি
ওর সাথে বেশী মিলামিশা করো'।
আমি খুব কষ্ট পেলেও উনার
কথাকে সম্মান করেছিলাম।
প্রিয় বান্ধবী ভুল বুঝেছিলো
কেনো তাকে এভয়েড করে
যেতাম।
সেই বান্ধবীর মা-ই অনার্সের
গ্র্যাডুয়েশান সিরিমনিতে আমাকে
জোড় করে বুকে টেনে নিয়ে
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে
আম্মুকে বলেছিলেন, 'ভাবী,
আপনি কত ভাগ্যবান এমন মেয়ে
পেটে ধরেছেন! আমার
মেয়েটা যদি পড়ালেখায় আপনার
মেয়ের একশভাগের এক ভাগও
হতো!'
আমি আস্তে করে সরে
পরেছিলাম।
কারন দেখেছিলাম বান্ধবীর মুখটা
কেমন কালো হয়ে গেছে।
(বাবা-মা'দের এটা আরেকটা কমন ভুল-
অন্যের সাথে ইচ্ছায় অনিচ্ছায়
সন্তানকে তুলনা করা!)
.
ঘটনাটা বললাম, কারন আমি চাই তুমি
বুঝো, যখন তোমার টীনেজ
লাইফের গন্ডি পেরিয়ে
প্রফেশনাল লাইফে ঢুকবে,
ম্যাচিউর হবে, এডাল্ট হবে; তখন-
ট্রাষ্ট মী- তখন নিজের টীনেজ
লাইফের অনেক চিন্তাই তোমার
কাছে হাস্যকর ঠেকবে।
অনেক কাজকর্মের কথা মনে
করে নিজেই লজ্জা পাবে।
অনেক ঘটনার কথা ভেবে কূলকিনারা
পাবেনা কিভাবে তুমি এসব
করেছিলে!
তারমানে এই না যে আমি বলছি তুমি যা
ফীল করছো, বা যার ভিতর দিয়ে
যাচ্ছো তা খুব নগন্য কিছু।
মোটেও না।
কিন্তু, লাষ্ট চিন্তাটার কথা বলি-
।
চিন্তা নাম্বার ৫.
জীবনের মানে অনেক অনেক
অনেক বড়।
আজকে যে সম্পর্কের জটিলতায়,
বা ড্রাগসের জটিলতায়, বা জানিনা-কী-
ধরনের-কত-রকমের-যে-জটিলতা-
আছে, যে জটিলতাতেই পরে তুমি
পড়ালেখায় গোল্লা পাচ্ছো, সবার
কথামত 'উচ্ছন্নে যাচ্ছো',
অনেকেই বলে নষ্ট হয়ে
যাচ্ছো- জীবনের মানে
এসবের থেকেও অনেক
অনেক বড় কিছু।
আমাকে যদি এখন জিজ্ঞেস করো
সেই বড় কিছুটা কী?
আমি উত্তর দিতে পারবোনা।
এই মানেটা প্রত্যেককেই
নিজেকে খুঁজে নিতে হয়।
তুমি নিজেকেই জিজ্ঞেস করো
তোমার জীবনের মানে কী।
কী চাও তুমি তোমার জীবন
থেকে।
এসব ফালতু প্রশ্ন না।
ভাবো।
জানতে চেষ্টা করো। জীবনের
একটা মিনিং তোমাকে খুঁজে
পেতেই হবে। নাহলে ঐ
টীনেজ লাইফের ঐ melancholy
থেকে কিন্তু বেরুতে পারবেনা!
যখন তোমার মনে হবে অ-নে-ক
উঁচু কোনো পাহাড়ের কোণায়
এসে দাঁড়িয়েছো, এই বুঝি পরে
গেলে, এই বুঝি সব শেষ হয়ে
গেলো, তখন ঐ জীবনের
মানে-টাই তোমাকে শক্ত হয়ে
দাঁড়িয়ে থাকতে হেল্প করবে।
তোমাকে মনে করিয়ে দিবে,
জীবন মানে এই সব সমস্যারও
বাইরে অনেক অনেক বড় কিছু
একটা।
যার জন্য বেঁচে থাকতে হবে।?
বেঁচে থাকো।
টীনেজ সময়ের কষ্টগুলো
সার্ভাইভ করে এই সময়ের
কমপ্লেক্সিটিগুলো থেকে
ভালভাবে বেরিয়ে আসো।
ভাল মানুষ হও।
এই দোয়াই করি।
.
ইতি,
তোমার একজন শুভাকাংখী।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১৩