** সময় থাকলে প্রত্যেকটা মেয়ের
লেখাটা পড়া উচিত। **
---------------------------------------------------
বাংলাদেশে এমন নারী খুঁজে পাওয়া
দুস্কর যে কখনো কোনো দিন
ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়নি!
সে
√বোরকার নিচেই থাকুক আর
তথাকথিত আধুনিকাই হোক না কেন।
√ফেস-টু-ফেস কিংবা ভার্চুয়াল, নারী
পরিচিত-অপরিচিতদের কাছ থেকে
কখনো নোংরা কথা কিংবা কখনো
‘হাই সুন্দরী’,
এই জাতীয়
প্রশংসাসূচক কথার মাধ্যমেও
টিজিংয়ের শিকার হয়ে থাকে।
যে বলে,
‘কই আমার মা-বোনেরা
তো কোনো দিন টিজিংয়ের
শিকার হয়নি!’
√কিছু না জেনেই আবার
যে বলে, ‘টিজিং করছে, নিশ্চয়
মেয়েটার দোষ ছিল।
••••এক হাতেতো বাপু তালি বাজে না। আরও
তো মেয়ে আছে, তাদের
তো কেউ টিজ করে না।’
আমি
তাদের বলব, ‘আপনি সত্য থেকে
বহু দূরে! টিজিংয়ের জন্য
সুন্দরী-অসুন্দরী, হিজাব-নেকাব কোনটাই
কাজে আসে না।
ওই যে
★‘নিনজা’ যায় কিংবা ‘বোরকাওয়ালি’ আইছে★
এটাও তো টিজিং বা বুলিংয়ের
পর্যায়েই পড়ে।
আর তালি আজকাল
••এক হাতেও বাজে বটে, দরকার শুধু
একটা ড্রাম বা ঢোল জাতীয় কিছু।
.
তবে এ কথাও সত্যি যে, আজকাল
ছেলেরাও নাকি টিজিং-বুলিং এসবের
শিকার হয়ে থাকেন। ***
তো সে
ছেলে হোক বা মেয়ে হোক,
টিজিং অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছালে
শুনেছি কেউ আত্মহত্যা করেন,
কেউ নেশা করেন, কেউ
লেখাপড়া বাদ দিয়ে ঘরে বসে
থেকে মানবেতর জীবন যাপন
করে থাকেন।
.
আমি আজকে লিখছি তাদের জন্য,
যারা সর্বদাই ‘টিজিং’ নামক নোংরামির
সাথে পথ চলতে বাধ্য হচ্ছে।
হতাশায় ভুগে জীবনের লক্ষ্য
থেকে নিজেকে গুটিয়ে
নিচ্ছে। #জীবনের_গল্প থেকে
নেওয়া এ লেখা শুধুই তাদের জন্য।
.((মেয়েটির ভাষায়))
তখন
আমি মাত্র অনার্স শেষ করে
মাস্টার্সের জন্য ফাইনান্স
ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছি।
কিছুদিন পর জানতে পারলাম
ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক নিয়োগ
হবে।
সত্যি বলতে কি, শৈশব-
কৈশোরে বড় হয়ে অনেক কিছু
হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও কখনো
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার
স্বপ্ন আমি দেখিনি। সারা জীবন
নিজে পড়ো আর অন্যদের পড়াও,
ভাবতেই কেন যেন দম বন্ধ
হয়ে আসত। কিন্তু নিয়তি বলে অন্য
কথা!
প্রশাসনিক দপ্তরে যথাসময়ে
দরখাস্ত জমা দিলাম। প্রথম
শ্রেণিতে প্রথম হওয়ার কারণে,
সব থেকে যোগ্য প্রার্থী
হিসেবে সবার আগে আমার নাম
শুনতে পেলাম। তবে অনেকের
কাছে এ কথাও শুনলাম, ওপর মহল
থেকে ফোন না এলে নাকি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া যায় না।
বাবা-মা-আত্মীয়স্বজন
১৪
গোষ্ঠীর মধ্যে ‘তথাকথিত ওপর
মহলে’ কেউই অবস্থান করেন না
বিধায় ওপর মহলের চিন্তা বাদ দিয়ে
বরাবরের মতোই ওপরওয়ালার ওপর
সব ছেড়ে দিলাম। ভাগ্যে লেখা
থাকলে হবে, না থাকলে নাই—এই
দর্শনের ওপর ভিত্তি করে নিজের
মেধা-যোগ্যতার ওপর পূর্ণ আস্থা
রাখলাম।
শিক্ষক নিয়োগের ভাইভার আর কিছু
দিন বাকি আছে। হঠাৎ করেই
আবিষ্কার করলাম ক্যাম্পাসে
যেখানেই যাচ্ছি, ছেলেরা
আজেবাজে টিজ করছে। মাথায়
ঢুকছে না কেন আমাকে নিয়ে
সবাই আজেবাজে কথা বলছে।
কাহিনি কী? ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের
কাছে জানতে পারলাম আমি যাতে
শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পাই, তাই
কোনো একটি মহল আমাকে
নিয়ে হরেক রকম গল্প বানাচ্ছে
এবং তা সচেতনভাবেই ছড়িয়ে
দিচ্ছে ক্যাম্পাসের আনাচকানাচে।
সেই মহলের ইচ্ছে শক্ত
রাজনৈতিক খুঁটির ওপর দাঁড়ানো
১২তমকে নিয়োগ দেওয়ার। কিন্তু
তার আগে তো ফার্স্ট ক্লাস
ফার্স্টকে হটাতে হবে! আর
যেহেতু আমি মেয়ে, কাজেই
আমার নামে নোংরা কিছু ছড়িয়ে
দিলেই হলো। জনগণ গুজব
(রিউমার) শুনতে পছন্দ এবং নিজের
মতো করে গল্প বানাতে পছন্দ
করে। কাজেই কোনো কিছু
যাচাই না করে অনেকেই মুখে যা
আসে তা-ই বলা শুরু করল। আমি
ধীরে ধীরে নিজেকে.গুটিয়ে নিতে থাকলাম।
সত্যি বলতে কী, সে সময়
মানসিকভাবে আমি খুব ভেঙে
পড়েছিলাম। হলের ছাদ থেকে
লাফিয়ে পড়ে মরার চিন্তাও যে
মাথায় আসে নাই, বললে মিথ্যা বলা
হবে। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় একদিন
ভেবে দেখেছি, আমার
আত্মহত্যা কি এর সঠিক সমাধান? আমি
মরলে এদের কী? কিন্তু আমার
বাবা-মা-ভাইবোন যারা আমাকে বড়
করেছেন, ওদের কী হবে?
ভেবে দেখলাম, জীবনে এই
চাকরি করতে হবে এমন তো
কোনো কথা নাই। আমার যে
যোগ্যতা, তা দিয়ে আমি
যেকোনো ভালো প্রতিষ্ঠানে
ক্যারিয়ার গড়তে পারব। আর বড় কথা
হলো, আমি যাতে এসব নোংরা
টিজিংয়ের জন্য প্রতিযোগিতা
থেকে ছিটকে যাই, এটাই তো
কেউ কেউ চাইছে। আমি কেন
হেরে গিয়ে ওদের জিতিয়ে
দেব? আমার তো কোনো
দোষ নেই।
আমি নিজেকে বদলাতে শুরু
করলাম। আগের মতো ক্লাস,
লাইব্রেরি, অডিটরিয়াম সবখানে যাওয়া
শুরু করলাম। নোংরা কথাগুলো এক
কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে
বের করে দিতাম। মানুষের
ফিসফিসানি, কানাকানি দেখেও না
দেখার ভান করতে লাগলাম। ভিতরে
ভিতরে পুড়ে গেলেও বাইরে
থেকে এত শক্ত থাকতাম যে
বদমাশগুলো টিজ করে তেমন মজা
পেত না। আমার নিস্পৃহতা ওদের
উত্সাহে পানি ঢেলে দিয়েছিল
বোধ হয়। আমি মুখোমুখি ওদের
কখনোই প্রতিবাদ করিনি। আমার
মতে প্রতিবাদ করা মানে ওদের
আরও উসকে দেওয়া। আমার
নিস্পৃহতা ছিলই আমার প্রতিবাদ।
এত কিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের
চাকরিটা আমি পেয়েছিলাম, আমার
ভালো রেজাল্ট, আমার দৃঢ়
মনোবল আর সততাই আমাকে
জিতিয়ে দিয়েছিল। একদা
ক্যাম্পাসের যে নোংরা বাতাসে
আমার শ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট
হতো, শিগগিরই সেই নোংরা বাতাস
নির্মল বিশুদ্ধ হতে লাগল। জঘন্য
গুজবগুলো হঠাৎই বাতাসে মিলিয়ে
গেল।
তাই মেয়েরা তোমাদের বলছি,
নোংরা কথা নোংরা লোকেরা
বলবেই। আত্মহত্যা কিংবা নিজেকে
সবকিছু থেকে গুটিয়ে নেওয়ার
মতো ভুল সিদ্ধান্ত এর কোনো
সমাধান নয়।
কে কী বলে বলুক,
তুমি শক্ত হয়ে পথ চলো। মাথা উচু
করে হেঁটে যাও। ওদের মিথ্যা
কথায় কষ্ট পাচ্ছ? বুঝতে দিও না।
তোমাকে টুকরো টুকরো
করে ভাঙাই তো ওদের লক্ষ্য।
তুমি যখন নির্বিকার থাকবে, ওরা
এমনিতেই দেখবে একদিন উত্সাহ
হারিয়ে চুপটি মেরে যাবে। আর
তুমি তোমার পড়াশুনায় মন দাও,
ভালো ক্যারিয়ারের স্বপ্ন
দেখো। অমূল্য এই
জীবনটাকে তুমি গড়ে তোলো
তোমার মেধা দিয়ে, তোমার
কর্মগুণে।
পিছু ফিরে দেখতে পাবে, নোংরা
ছেলেগুলো এখনো গলির
মুখে, স্কুল-কলেজের সামনে
দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক আগের
মতো। তবে আরও নোংরা হয়ে।
এবার তারা টিজ করছে তোমার ভাই বা
বোনের মেয়েটিকে। কিংবা
আরও পরে ফুটফুটে তোমার
মেয়েটিকে। ওরা কখনোই
বদলাবে না। কিন্তু তুমি তো
তোমার জীবনটাকে বদলে
দিতে পারো! দরকার শুধু তোমার
ইচ্ছাশক্তি আর সাহসিকতার। রাস্তার
নোংরা ছেলেগুলো থাক না
রাস্তায় পড়ে। তোমার এই অমূল্য
জীবন শুধুই তোমার। তুমি ভয় না
পেয়ে এগিয়ে যাও, অনেক
দূরে—সাফল্যের শিখরে।
.
Powered By:- তন্ময় তনু
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২৫