এক সংখ্যালঘু গোষ্ঠী যারা কেবল তাদের গ্রামেই দেশের তূলনায় সংখ্যাগুরু, এরকম এক গ্রামে আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। মোল্লাবাড়ি-শিকদারবাড়ি-ব্যাপারিবাড়ি-ঋষিবাড়ি-মন্ডলবাড়ি.. পাশাপাশি এসবই ছিল আমার উঠান। ঋষিবাড়ির ভাগল মামা ও অনুভবে নিজের মামার অনুভবে-ই আসতেন। ছোট খালার সাথে শ্রীরামকাঠী হাইস্কুলে পড়তেন। নানুর কাছে ভাগল ভাগলই ছিলেন, হারুন হারুনই ছিলেন। দুজনেই এক ছিলেন।
বাবরি মসজিদ নিয়ে অস্থিরতার সময়, শহরের ভাগল আর হারুনদেরকে, অচেনা রুপে একে অপরের সামনে দাঁড়াতে দেখে চিন্তায় পড়েছিলাম। এতদিনের সংষ্কার-ধ্যান ধারণা, তবে কি অলীক স্বপ্ন ছিল?
ফিরে গেলাম ততক্ষনাত জন্মস্থানে।
নাহ! সব ঠিক আছে। মাটির থেকে পাওয়া সংষ্কার এত সহজেই কি নি:শেষ হয়? হয় না..।
কিছু অমানুষ অন্যান্য সময়ের মত, নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করায়, ভাগল-হারুনকে হিন্দু-মুসলমান রুপে এক চরম বৈরী মুহুর্তে মুখোমুখি করিয়েছিল।
হ্যা, ঠিকই ধরেছেন! আমি শহরের ভাগল এবং হারুনদের কে-ই বুঝিয়েছি। ওরা অমানুষদের নিয়ন্ত্রণে থাকত। তাই কি মানুষ হতে চায়নি?
আমার জন্মস্থান সংখ্যালঘু কি সংখ্যাগুরু - শব্দদুটির কোনোটি দ্বারা ই প্রভাবিত নয়, ছিল ও না খারাপ সময়গুলির কোনোটিতে।
ছবির মত গ্রামে হিন্দু-মুসলমান দেখা যেত না। কারণ ওখানের মাটিতে মানুষ মরে আবার মানুষই জন্মাতো।
তাই মানুষ কিভাবে নিজেকে মারে? সেজন্য আমার জন্মস্থানে দাংগা হত না।
আমি এখনো এই ইটপাথরের ছায়াজীবনে, নিরন্তর বুকের মাঝে, কংক্রিট বিষন্নতাকে অনুভব করে করে, যখন বড্ড ক্লান্ত হই, আমি আমার মাটির মানুষের কাছে ফিরে যাই। অনুভবে- কল্পনায়ই হোক না কেন!
অমানুষদের সাথে থেকে থেকে নিজেও কখন যেন...!
তাই সময়ে অসময়ে, অনুভবে-কল্পনায়, মানুষ হতে খালের পার ধরে ফিরে চলি.. প্রচন্ড এক বৈশাখী খরদুপুরে.. বৈচি ফলের ঝোপ পাশ কাটাতেই সামনে দৃশ্যমান সোজা পথ। সেই পথকে সাথে রেখে, শৈশবের প্রিয় খালটি কিভাবে কালীগংগা নদীতে গিয়ে আত্মবিসর্জন দিয়েছে, হেটে হেটে অনুভব করি! তৃপ্তি মিটে?
আজ একজন মানুষের, বিশেষ একটি রংগে, অক্ষরকে উপস্থাপনের অতি সাধারণ (অসাধারণ!) দৃশ্য দেখে, এতগুলো বছরের নিচে চাপা পরা, মানুষ-অমানুষের সেই চিরন্তন লড়াইয়ের কথা মনে পড়ে.. বড্ড প্রকট হয় উভয়ে!
তীব্র একটি রংগের মাঝে, অক্ষরগুলির ডুবে ডুবে ভেসে থাকা, অমানুষের মাঝে মানুষকে অতি সহজে চেনার মত.. চোখে লাগে!
★ মামুনের অণুগল্প
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:০৩