এক.
প্যাকেটটি একটু আগে গেট থেকে দিয়ে গেলো। মেয়েদের পাঠানো ভালোবাসা।
হ্যা! ভালোবাসা যখন অনুভবের বিষয় থাকে না, তখন সেটা দেখানোর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
বৃদ্ধাশ্রমের আপাত নিরাপদ কক্ষে বসে ভাবছে শিহাব। জীবনের এই মোড়টিতে এসে ফেলে আসা পেছনের জীবন, ছানি পড়া ডান চোখের ঝাপসা জীবনের মত অস্পষ্ট.. অবোধ্য অনুভবে অসার অনুভূত হয়। যে চোখটি ওর নিজের নয়, সেটি দিয়েই সব কিছু দেখে আজকাল। আর দেখারই বা রয়েছে কি?
এই যে, দুই মেয়ে বিশেষ বিশেষ দিনে ভালোবাসা পাঠায়.. সাত সমুদ্র আর তের নদী পার হয়ে প্যাকেটবন্দী ভালোবাসা বাসি হয়ে কাছে আসে!
আদৌ আসে কী?
নাহ! কেবলি সামনে আসে।
সামনের আয়নায় নিজেকে দেখে শিহাব। যার যার জীবনে অভ্যস্ত মেয়েরা নিজেদের কাছের মানুষদের নিয়ে সুখী হতে চাইল। দেশের বাইরে তাদের আলাদা ভূবনে, ওদের মা চলে যাবার পর, কেন জানি শিহাব মানাতে চাইল না। একজন মহিলা আর একটি চোখ, আক্ষরিক অর্থেই শিহাবকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল, সেই ছেলেবেলা থেকেই। তখন অবচেতন মনে.. এর আসল অনুভব হলো বিয়ের আরো অনেক পরে। সবকিছু মিলিয়ে বউটা একা রেখে যাবার পরে, মেয়েদের কাছে একজন বাবার বাবা থাকাটা ম্লান হতে দেখে। অনুভব করে। আর সেই পিছু তাড়া করা অনুভব তখন তীব্র হতেই, নিজের একসময়ের চাকরীর সুত্রে এই আশ্রমের সাথে ঝুলে থাকা লিংকের সুবিধাটুকু কাজে লাগিয়ে, নিজের জন্য আপাত নিরাপদ জায়গাটিতে ঠাই নিয়েছে। এদের গ্রুপে চাকরি করত একসময় শিহাব।
মেয়েদের পাঠানো গিফটের ওপর হাত বুলিয়ে বাবু দুটিকে অনুভব করতে থাকে এক বাবা! দৃষ্টি তার দেয়ালের আয়নায়.. সেখানে পরিচিত শিহাবের অপরিচিত এক চোখের ভেতরে তাকিয়ে থেকে এক বাবা পেছনে হারাতে থাকেন.. সময়ের এক একটি লেয়ার দ্রুত সব অনুভব সমেত ওর সামনে পলকের তরে থেমে সামনে আগায়! বাবা পিছায়.. বাবা থেকে স্বামী.. স্বামী ব্যাচেলর যুবক.. এভাবে কখন যেন স্কুলের মাঠে বন্ধুদের সামনে দাঁড়ানো সেই বাবুবেলায় ফিরে যায়!
সেখানে একজন মহিলা শিহাবের সামনে। মুখোমুখী একই ভূবনে একমাত্র সংগী এমন দুজন মানব-মানবী।
নিজের মনে ভাবনার ভ্রান্তিবিলাসে ডুবে থাকে ষাটোর্ধ একজন শিহাব। একজন বাবা তার বাবুবেলায় ফিরে গিয়ে, নিজের সাথে কথা বলে। যে মহিলাটির সামনে দাঁড়ানো শিহাব, তিনি- সেই মহিলাটি শিহাবের মা ছিলেন!
( আগামী পর্বে সমাপ্য)
★ মামুনের ছোটগল্প
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১:২৫