বাংলাদেশের মোবাইলফোন সেক্টরের জন্য একটি ঘটনা বহুল ছিলো ২০১০। নতুন ব্রান্ড এবং নতুন নাম , নতুন বন্ধন এমনকি নতুন আইন সবমিলিয়ে গতবছর ছিলো বাংলাদেশের মোবাইল শিল্পের জন্য একটি টার্নিং বছর। বারো বছর আগে যেখানে বাংলাদেশের মোবাইলফোন গ্রাহক সংখ্যা ছিলো প্রায় ৯৮,৬৩৩ জন (সূত্র :১৩ মে ,১৯৯৮ প্রথম আলো ) সেখানে সর্বশেষ মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৬৬ লক্ষ ১৯ হাজার (সূত্র: সর্বশেষ মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা ) ।, গত এক বছরে গ্রাহক বেড়েছে প্রায় ১কোটি ৬০ লক্ষ ৫৯ হাজার (সুত্র : এখানে বিস্তারিত )।
গত বছরই আমরা ২টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মালিকানা ও নাম পরিবর্তন দেখতে পাই।দেশের অনেক মানুষের হাতে মোবাইল থাকলেও গ্রামের অধিকাংশ মানুষের হাতে মোবাইল শূন্য রয়ে গিয়েচে।মোবাইল সেবাদাতাদের জন্য এক বিশাল বাজার রয়েছে গ্রামে। সেকারনে অনেক মোবাইল দেবাদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের মার্কেট সেগমেন্টে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছেন ।বলা হয়ে থাকে যে আগামী ৫বছরের মধ্য বাংলাদেশের মোবাইলফোন গ্রাহক সংখ্যা ১২ কোটিতে গিয়ে পৌছুবে। এক কথায় বুম !
গত বছর মোবাইলফোন সেক্টরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা এখানে উল্লেখ করা হলো :
*এয়ারটেলের পদচিহ্ন : বছরটি শুরু হয় একটি বিস্ফোরিত ঘটনার মধ্য দিয়ে। ইন্দিয়ান জায়ান্ট মোবাইল কোম্পানি এয়ারটেল বাংলাদেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। ১০০% মালিকানাধিন দুবাই ভিত্তিক ধাবিগ্রুপের ওয়ারিডের ৭০% স্টেক শেয়ার এয়ারটেল ৭০ লক্ষ টাকার টোকেন মুল্য কিনে নেয়। যদিও বলা হয়ে থাকে ভ্যাট ফাকি দেওয়ার জন্য এই টোকেন মুল্য দেখানো হয়েছে।এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে এয়ারটেল দাবী করে দিনকে দিন লসের খাতে চলে যাওয়া ওয়ারিদে তারা পুনরায় বিনিয়োগ করেছেন ।
* অবকাঠামো ভাগাভাগি : এয়ারটেলের বাংলাদেশে পদার্পনের ঘোষনায় অন্যান্য অপারেটর গুলো একটু নড়েচড়ে বসে।তারা আন্ত নির্ধারিত ব্যায় কমানোর জন্য একে অপরের সাথে অবকাঠামো ভাগাভাগি চুক্তি করে। প্রথমে দুই জায়ান্ট গ্রামীনফোন ও বাংলালিংক তাদের মধ্যকার অবকাঠামো ভাগাভাগির জন্য বৃহৎ চুক্তি করে (বিস্তারিত এখানে। ) পরবর্তিতে গ্রামীন একটেল ও ওয়ারিডের সাথেও প্রায় একই ধরনে চুক্তি করে তবে তা প্রথম চুক্তিটির মত ব্যাপক ও বিস্তারিত নয়। কিছুদিন পর ওয়ারিড (পরবর্তিতে এয়ারটেল) ও সিটিসেল অবকাঠামো ভাগাভাগি চুক্তিবদ্ধ হয়।
* টেলিকম আইন : জুন মাসের দিকে ঘোষনা দেওয়া হয় টেলিকম আইন'২০০১ এর পুর্নবিবেচনা করা হবে। যেকোনো অনিয়মের জন্য মাত্রা ভেদে ১০ লক্ষ টাকা থেকে ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোম্পানির সিইও এর গ্রেফতারী পরোয়োনা জারি করা ক্ষমতা রেখে নতুন আইনটি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গ্রামীণফোন সিইও ওদভার হেশজেদাল এর সাক্ষাৎকার এখানে।
* একটেল এখন রবি : " জ্বলে উঠুন আপন শক্তিতে " নতুন শ্লোগান নিয়ে নতুন রুপে হাজির হয় একটেল (বিস্তারিত এখানে। ) নতুন নাম দেওয়া হয় রবি। মুলত গ্রামীন জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে তাদের নতুন ব্রান্ডিং করা হয়েছে।
* ই-টিকিটিং এবং মোবাইল রেমিটেন্স : এবছর প্রথমবারের মত বাংলাদেশে চালু হয় ই-টিকিটিং । বাংলাদেশ রেলওয়ে একইসাথে দুই মোবাইল জায়ান্ট গ্রামীনফোন ও বাংলালিংকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। এর ফলে দেশের নিদির্ষ্ট কিছু বাংলালিংক পয়েন্ট ও গ্রামীনফোন সেন্টার থেকে রেলওয়ের টিকিট কাটা যাবে। মোবাইল রেমিটেন্স ধারনাটা একেবারেই নতুন এবং এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম চালু করে বাংলালিংক । এর জন্য তারা কমভিভা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে। পরবর্তিতে তারা এই সার্ভিসটির জন্য আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করে। বর্তমানে পৃথিবীর ১০০,০০০ বেশী স্পট থেকে বাংলালিংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো যায় এবং ২৫০০ বেশী পয়েন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে যা আগামী ৬মাসের মধ্য ১০,০০০ করা হবে। এজন্য বাংলালিংক কর্তৃপক্ষ ঢাকা ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের সাথে চুক্তি করে। কিছুদিন আগে ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে মোবাইল সেবাদাতা রবি চুক্তি করে জানান দেয় তারাও খুব শীঘ্রই এম রেমিটেন্স সার্ভিস চালু করবে।এ সংক্রান্ত বিস্তারিত এখানে পাওয়া যাবে।
* বাংলালিংকের মাদার কোম্পানির একিভূত হওয়া : অক্টোবোর এর দিকে খবর আসে যে বাংলালিংকের মালিক প্রতিষ্ঠান ওরাসকম , রাশিয়া ভিত্তিক ভিম্পেলকমের সাথে একিভূত হতে যাচ্ছে।এর ফলে বাংলাদেশে ব্যাবসা রত বাংলালিংক ও গ্রামীনফোন এর মধ্য এক আত্নীয়তার সম্পর্ক স্থাপন হয়। যদিও এই একিভূত চুক্তি বর্তমানে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মিমাংসার পথে রয়েছে।
*লাইন্সেস নবায়ন নীতিমালা : আগামী বছর শেষ হবে ৪টি মোবাইল কোম্পানির লাইন্সেসের মেয়াদ।নতুন নীতিমালার ভিত্তিতে তাদের লাইন্সেস নবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে আগামী বছর মোবাইল কোম্পানী গুলোলে মোট ২৮,০০০ কোটি টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিতে হবে।যার মধ্য আগামী বছর একবারে ১৪,০০০ কোটি টাকা ও আগামী ৭বছর পর থেকে তাদের লাভের অংশ থেকে আরও ১৪,০০০ কোটি টাকা ধাপে ধাপে কেটে নেওয়া হবে।
*অবশেষে এলো এয়ারটেল : অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ডিসেম্বর মাসের অর্ধেকে এসে হাজির হয় এয়ারটেল। বর্তমানে তারা " ভালোবাসার টানে কাছে আনে " শোগ্লান নিয়ে তাদের ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে।
এই বছর লাইন্সেন নবায়ন ,৩জি সেবা,মোবাইল ব্যাংকিং ও একটি মোবাইল অপারেটর এর শেয়ার বাজারে লিস্টেড হওয়াটাই প্রধান খবর হবে বলে আশা করা যায়।
কৃতজ্ঞতা : মেহেদি মোশাররফ ভুইয়া , ডেইলি স্টার।
সূত্র :
#ডেইলিস্টার
# প্রথম আলো
# সমকাল
# বাংলানিউজ২৪.কম
#বিডিনিউজ২৪.কম
# সামহয়ারইন ব্লগের কিছু পোষ্ট
এড : ফেসবুকের কিছু ক্রিুয়েটিভ প্রোফাইল পিকচার (পর্ব-২)
দেখে নিন ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের ভেন্যু ।
একটি বল্টু মিয়া প্রোডাকশন
ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১১ রাত ৯:০২