গণজাগরণ মঞ্চ এবং হেফাজতে ইসলাম দুইটি সংগঠন এই মুহূর্তে আন্দোলন করছে । তাদের আদর্শ , উদ্দেশ্য , চিন্তা চেতনা, দাবী দাওয়া সব কিছুই ভিন্ন । আমি তাদের এই আন্দোলনের এই সমস্ত মোটিভ নিয়েও আলোচনা করব না । আমি চেষ্টা করব এই নিবন্ধে উভয়ের আন্দোলনের প্যাটার্ন অর্থাৎ গণজাগরণ মঞ্চ এবং হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের প্রক্রিয়া ,সোজা কথায় উভয়ের আন্দোলনের ধরন ধারন নিয়ে আমার আলোচনা সীমাবদ্ব রাখতে ।
প্রথমেই আসুন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি গুলির দিকে আলোকপাত করি ।তারা সারা দেশে একযোগে নীরবতা পালন , জাতীয় পতাকা উড়ানো , জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া ,মোম বাতি প্রজ্বলন, শহীদের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে বেলুনে বেধে আকাশে উড়ানো । তন্মধ্যে মোম বাতি প্রজ্বলন হিন্দুয়ানী , জাতীয় পতাকা এভাবে উড়ানোর এখতিয়ার এই সমস্ত কর্মসুচী নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে ।এ ব্যাপারে সবার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য থাকতে পারে আমারও আছে । আমি সে দিকে যাচ্ছি না ।তারা একটি হরতাল বা অবরোধও করেছে । আমার বক্তব্য হল এই সমস্ত কর্মসূচি পালন করতে তারা কারও উপর কোন বল প্রয়োগ বা জবরদস্তি করে নাই । গন জাগরণ মঞ্চ কোথায় কোন গাড়ীতে আগুন দেয় নাই , মানুষ পুড়িয়ে মারে নাই । মোট কথা তাদের আন্দোলনে কোথায় কোন প্যানিক সৃষ্টি হয় নাই । নারী, শিশু ,বৃদ্দ্ব সবায় দিনে রাতে শাহ বাগে গিয়েছে , দীর্ঘ দিন আন্দোলন চলছে কিন্তু কোন অঘটন ঘটে নাই ।
আর হেফাজতে ইসলাম একদিন শাপলা চত্বরে আসল ঢাকা তথা সারা বাংলাদেশ আতঙ্ক গ্রস্ত হয়ে পড়ল । মঞ্চে এবং মঞ্চের বাইরে ওদের যে আস্ফালন ,রক্ত চক্ষু বের করে বক্তৃতার যে মহড়া দেখলাম , শান্তির ধর্ম ইসলামের সাথে এটা কতটুকু খাপ খায় ? শশ্রুমণ্ডিত সফেদ পাঞ্জাবী পরিহিত পাড়ার মুরুব্বিদের দেখলে মনের অজান্তেই সালামের জন্য হাত উপরে উঠে আসত , আর বর্তমানে টিভিতে ওদের মুখ ভঙ্গি , অঙ্গভঙ্গি দেখে বাচ্চারা আতঙ্ক গ্রস্ত হয়ে পড়ে
নাম মনে নেই সেদিন খুলনায় হেফাজতের দীনে রেসালতের এক সম্মেলনে ঢাকার এক নেতা যে ভাবে দুহস্ত প্রসারিত করে গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে প্রবল বেগে মাথা দুলিয়ে চোখ রাঙিয়ে যে ভাবে বক্তব্য রাখছিলেন , যদি গণজাগরণ মঞ্চের কাউকে হাতের কাছে পেতেন তাহলে কি অবস্থা হত সেটা কল্পনা করতেও গা শিউরে উঠে ।
অথচ আমি ইমারন সরকারের সাথে হেফাজতের কর্মীদের সাক্ষাতের ছবি এবং একটা নিউজ তুলে ধরছি ।
হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে ইমরানের সাক্ষাত্
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৩-০৪-২০১৩
০ মন্তব্যপ্রিন্ট
ShareThis
« আগের সংবাদ
পল্টনে সমাবেশ শেষে হেফাজতে ইসলামের সমর্থক ও কর্মীরা দল বেঁধে শাহবাগ দিয়ে যাচ্ছিলেন। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ কয়েকজন ব্লগার তখন শাহবাগে অবস্থান করছিলেন। হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের দেখে ইমরান নিজ থেকেই এগিয়ে যান তাঁদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। আজ বুধবার এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হেফাজতের কর্মীদের কাছে ইমরান জানতে চান, আপনারা কোথা থেকে ফিরলেন? এ সময় একজন কর্মী উত্তর দেন, ‘নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে মিছিলে গিয়েছিলাম।’ ইমরান এবার বলে ওঠেন, আচ্ছা, ব্লগার মানে কি জানেন? উত্তরে তাঁরা হেসে ‘না’ সূচক উত্তর দেন।
ইমরান এ সময় নিজের পরিচয় দিলে হেফাজতের কর্মীরা কিছুটা বিস্মিত হয়ে জানতে চান, ‘আপনিই ব্লগার ইমরান’? ইমরান তখন বলেন, ‘হ্যাঁ ভাই, আমি তো একজন মুসলমান। নামাজ পড়ি। আল্লাহর ওপরে আমার পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা আছে।’
এরপর ইমরান হেফাজতের কর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তো কাফেরদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। কিন্তু আপনাদের হুজুর আমাদেরকে ভুল বুঝে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হচ্ছেন না। আপনাদের হুজুরকে গিয়ে বলবেন। আমরাও মুসলমান। আমরা ওনার সঙ্গে আলোচনা করে ভুল ভাঙাতে চাই। উনি যাতে আমাদের সেই সুযোগ দেন।’ এই অনুরোধের পর হেফাজতের কর্মীরা গণজাগরণ মঞ্চের এই মুখপাত্রকে আশ্বাস দেন যে, তাঁরা আল্লামা শাহ আহমেদ শাফির কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেবেন।
এ প্রসঙ্গে ইমরান এইচ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণজাগরণ মঞ্চের কোনো বক্তৃতা ও আলোচনায় ইসলাম বা মহানবী (সা.) নিয়ে কোনো ধরনের কটূক্তি করা হয়নি। আমরা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
বর্তমান প্রজন্মের বিরুদ্বে একটা অভিযোগ যে তারা আলেম ওলামাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে না । এ কথাটার সত্যতা কিছু না কিছু অবশ্যই আছে । কিন্তু দায়টা কার ? আগে মানুষ মুরগির প্রথম ডিমটা , গাছের প্রথম লাউটা মসজিদে দিত , কিন্তু এই রীতি রেওয়াজ আর এখন দেখিনা বললেই চলে । আমাদের ভাবতে হবে এই অবস্থার জন্য বর্তমান প্রজন্মের পাশাপাশি হুজুরদেরও কোন দায় ভার আছে কিনা ?
আর জামাতের কথা বাদই দিলাম । তাদের মানুষ পুড়ানো , গাড়ি পুড়ানো , ট্রেন লাইন উপরে ফেলা ,রাষ্ট্র যন্ত্রকে এইভাবে চ্যালেঞ্জ করে যে তাণ্ডব তারা চালাচ্ছে তা দেখে যদি কেউ দাড়ি টুপির ব্যপারে বিরূপ ধারনা পোষণ করে তাহলে এর দায় দায়িত্ব ধারনা পোষণ কারীর না ,আমি মনে করি এই দোষ সেই দাড়ি টুপি ওয়ালার । সে কেন দাড়ি টুপি পড়ে এই উন্মত্ত আচরণ করল ? দোষের মাত্রা আরও বেড়ে যায় যদি কেউ অপকর্ম ঢাকার জন্য দাড়ি টুপির আশ্রয় নেয় ।
আসুন যারা ধর্মের বিরুদ্বে লেখালেখি করে তাদের বিরুদ্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি আরও বেশী সোচ্চার হই তাদের বিরুদ্বে যারা ধর্মকে আশ্রয় করে তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার পায়তারা করছে ।
আমি উপরে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সাথে হেফাজত কর্মীদের একটি সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়েছি । আজ আবার হেফাজতের কর্মীদের সাথে গণজাগরণ মঞ্চের আর একটি সাক্ষাতের বর্ণনা দেয়া হল ।
গণজাগরণ মঞ্চের সেবায় ধন্য অসুস্থ হেফাজত কর্মী ।
এখন আপনারাই তুলনামূলক বিচার করুন যারা নিজেদেরকে ইসলামের ঠিকাদার মনে করে তাদের আচার আচরণ আর যাদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে প্রতি নিয়ত মুণ্ডপাত করা হয় উভয়ের মধ্যে কে বা কারা ইসলাম শান্তির ধর্ম এই শাশ্বত বাণী লালন করে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:২৫