শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন নিয়ে বিএনপির নেতারা একেকবার একেক রকম বক্তব্য দিলেও খালেদা জিয়া দীর্ঘ তের দিন পার হলেও কোন রকম বক্তব্য দেননি । তরুণ প্রজন্ম রোদে পুড়ে , বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে না খেয়ে কি দাবী জানল , কি তাদের বক্তব্য তার ব্যপারে কোন সহমর্মিতা নেই । এত দিন পর উনি শাহ বাগ সম্পর্কে যে বিবৃতিটি দিলেন আসুন তার কিয়দাংশ উল্লেখ করি ।
"বিবৃতিতে বলা হয় ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পিয়াস করিমের বিরুদ্ধে শাহবাগ সমাবেশ থেকে হুমকির বিষয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে যেসব হুমকির কথা বলা হয়েছে, তাতে গভীর উদ্বেগ জানান বিরোধীদলীয় নেতা।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া আরও বলেন, তাঁদের মঞ্চে (শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর) ক্ষমতাসীন জোটের কর্মীদের তত্পরতা থাকলে মানুষের সন্দেহ তৈরি হবে। ওই মঞ্চ থেকে যদি ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পিয়াস করিমের মতো দেশ ও দশের প্রতি সহমর্মী, সত্যনিষ্ঠ ও দৃঢ়চেতা সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদদের হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে শাহবাগ আন্দোলনের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন হবে বলে জনগণ মনে করে।"
খালেদা জিয়ার উল্লেখিত , দেশ ও দশের প্রতি সহমর্মী, সত্যনিষ্ঠ ও দৃঢ়চেতা সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ এই ত্রয়ীর জন্য যে দরদ উথলে উঠেছে । কিন্তু এই ত্রয়ী টিভি ,পত্রিকায় শাহ বাগ আন্দোলন সম্পর্কে যে কুৎসা রচনা করে চলেছেন তার সম্পর্কে একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে দায়িত্বশীল বিরোধীদলীয় নেতা কি অবহিত । আসুন দেখা যাক মাহমুদূর রহমান গতকাল তার আমার দেশ পত্রিকায় স্বনামে গতকাল কি লিখেছেন ।
তিনি লিখেছেন
"সরকারবান্ধব তাবত্ মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়লো একটি অনুল্লেখ্য জমায়েতকে মহিমান্বিত করার গুরুদায়িত্ব পালনে। খাদ্য, পানীয়, আনন্দ উপকরণের ছড়াছড়ি পড়ে গেল। নীতি ও আদর্শের ধ্বজাধারী একশ্রেণীর বাম তরুণরা লুটেরা, লুম্পেন, ভূমি দস্যুদের পাঠানো যাবতীয় খাদ্যসামগ্রী গো-গ্রাসে গলাধঃকরণ করতে করতে ‘গণবিপ্লবের’ প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। আড়ালের ইন্ধনদাতারা ঘন ঘন পলিটব্যুরোর বৈঠকে বসতে লাগলেন। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র নেমে গেল আন্দোলনকারীদের সহায়তা প্রদানে, আরাম-আয়েশের বন্দোবস্তে। এই প্রথম দেখলাম সরকার কিংবা এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে তরুণদের কোনো প্রতিবাদ, কোনো আন্দোলন হচ্ছে না। আমাদের তারুণ্যের সঙ্গে এ যুগের প্রজন্মের কোনো মিল খুঁজে পেলাম না। মহাজোটের সঙ্গী-সাথী আর স্বঘোষিত তরুণ প্রজন্মের নেতৃবৃন্দের এক এবং অদ্বিতীয় লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ালো দেশ থেকে সব ভিন্নমত বিতাড়ন। আবেগের জোয়ারে জ্ঞানবুদ্ধি হারিয়ে অনেকে শাহবাগ পিকনিককে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করারও ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। একবিংশ শতাব্দীর মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা শহরে পুলিশি প্রহরায় নাচানাচি করছেন, গান গাইছেন, হাতে হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট ঘুরছে, রাত নামলে আলো-আঁধারিতে একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব বিনিময় হচ্ছে। এই পরিবেশের সঙ্গে কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রের চার দশক আগের পাকিস্তানি বর্বরদের বিরুদ্ধে সেই অবিস্মরণীয় সংগ্রামের তুলনা শুনলে গা গুলিয়ে ওঠে, বমনেচ্ছা হয়।
এমন প্রতিক্রিয়াশীল , ইতর , অভদ্র নীচ প্রকৃতির মানুষের লেখা নিয়ে মন্তব্য করতে আমার ভাণ্ডারে কোন শব্দ তো নেইই আমার মনে হয় বাংলা ভাষায়ও নেই । লক্ষ লোকের সমাবেশকে বলছে অনুল্লেখ্য । এখানে অংশগ্রহনকারী তরুণদের ঘরে যেন আরাম আয়েশ নেই। আছে পিচ ঢালা পথে । ঘরে যেন বিরানী নেই । আছে রাস্তায় । সারাদিন অনাহারে অর্ধাহারে তরুণদের আন্দোলনকে এভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা একমাত্র পশু প্রবৃত্তির মানুষের পক্ষেই সম্ভব ।
এখানে উত্তরা অন্দ্বকারের ষড়যন্ত্রকারী এহেন ইতরের জন্য খালেদার দরদ দেখে আমার বমি পাচ্ছে ।
মাহমুদুর রহমানের সম্পূর্ণ নিবন্দ্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০২