দৈনিক জনকন্ঠের সংবাদে প্রকাশ বগুড়ার একেবারে নিভৃত গ্রামে প্রায় দেড় একর জায়গার ওপর বহু কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ শ্বেতপাথরের রাজপ্রাসাদ। ২০০৭ সালে এই প্রাসাদের কাজ শুরু হলেও নয় বছরেও শেষ হয়নি এর পুর্ণ নির্মান কাজ । আরও অনেকটা সময় লাগবে। প্রাসাদটি ঘিরে রয়েছে অনেক কৌতূহলী প্রশ্নের সমাহার । উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেও কোন সদুত্তর মিলছে না তার ।
বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে শিবগঞ্জ উপজেলার নিভৃত গ্রাম দেউলী। এলাকার লোকের কাছে বাড়িটি টুটুলের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। মালিক টুটুল সপরিবারে থাকেন ঢাকায় । বাড়িটিকে দূর থেকে মনে হবে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। মূল ফটকটিতে রয়েছে নাটোরের উত্তরা গণভবনের নকশার বাহার । চার তলা প্রাসাদের প্রথম ইউনিট ও দ্বিতীয় ইউনিটের ওপরে চৌকোনা চারটি গম্বুজ উত্তরা গণভবনের মতো। মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পরই হাতের বাঁয়ে চোখে পড়বে শ্বেত পাথরের হংস ফোয়ারার চার ধারে পাথরের সান বাঁধানো পুকুর। প্রাসাদের প্রথম ইউনিটে বড় দরোজা দিয়ে প্রবেশের পর বিরাট হল রুম। দেয়ালের পরতে পরতে নকশা। দ্বিতীয় ইউনিটে প্রবেশের পর সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় নজরে আসবে পোড়ামাটির ফলক (টেরাকোটা)। প্রতিটি ফলকে প্রাচীন ইতিহাসের চিত্র ফুটিয়ে তোলা । দোতলার ঘরগুলো সুপরিসর। এখানে ফাইভ স্টার হোটেলের লাউঞ্জ ও রিসেপসনিস্টদের মতো ডিজাইন করে রাখা হয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে চতুর্থ তলায় গিয়ে মনে হবে বিদেশী হোটেলগুলোর মতো যে কোন অনুষ্ঠান ও আয়োজন সেখানে করা সম্ভব।
নিভৃত গ্রামে পুরোটাই শ্বেতপাথরে নির্মিত এত বিলাসবহুল বাড়ি দেশের আর কোথাও আছে এমনটি জানা নেই( তবে ইদানিং সিলেটে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অআরো এক ধনকুবেরের বাড়ী নির্মান হয়েছে বলে জানা যায় ) । এ বাড়ির মালিক মাঝে মধ্যে যখন আসেন তখন ঘরগুলো খুলে দেয়া হয়। তিনি তিনি যাওয়ার পর কেয়ারটেকার ছাড়া কেউ থাকে না।প্রাসাদের মালিকের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে। ঢাকায় ধানমন্ডিতে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, গাজীপুরে টাটকা ফুড প্রডাকশন ফ্যাক্টরি, প্রাসাদের অল্প দূরে এএইচজেড কোল্ড স্টোরেজ, একটি ইটভাঁটি ও এএইচজেড ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। মালিকের ইচ্ছা প্রকল্পটিকে আরও সম্প্রসারণ করার। ভূমিটি তাদের পৈত্রিক। দিনে দিনে আশপাশের ভূমি কিনে প্রাসদটি নির্মিত হচ্ছে। এএইচজেড ওয়েলফেয়ারের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বর্মণ জানালেন, এই প্রাসাদ গড়ার পেছনে মালিকের যে ইচ্ছা কাজ করেছে তা হলো, গ্রামের বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে বড় হওয়ার আকাংখা জাগিয়ে তোলা। এলাকার মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন হয়ে উন্নত হবে। ঘরগুলো এমনভাবে নির্মিত হয়েছে যে প্রতিটি ঘরেই টেরাকোটায় জানার ও শেখার অনেক উপাদান আছে। তিনি এই প্রাসাদের মালিককে একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে দাবি করেন। তিনি যে অনেক বড় শিক্ষা অনুরাগী তাকি কি আর বলতে ! ঢাকায় রয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম অক্সফোর্ড যা মানুষকে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য দিবে শিক্ষা , বগুরার নিবৃত পল্লীতে সুদৃশ্য দামী ভবনে এখন হল পোতা টেরাকোটার উপর শৈল্পিক লিখা , গ্রামীন কুটীর শিল্পীদেরকে দিবে অনুপ্রেরনা কুড়েঘর ছেড়ে নীজেদের জন্য সুন্দর আবাসন করতে রচনা !!! দারিদ্র পিড়িত গ্রামীন জনপদে সকলের জন্য এ রকম নান্দনিক শ্বেত পাথরের বড় বড় প্রাসাদ হোক এটাই কামনা তবে করতে পুরণ এ কামনা বাসনা দেশের উৎপাদন ও আয় বন্টন ব্যবস্থাপনায় সকলের জন্য করে তৈরী সম সুযোগ ও সম্ভাবনা ।
যাহোক, যে কথা হচ্ছিল বলা, এই দেউড়ি গ্রামের বাসিন্দা ফখরে আলম বললেন, গ্রামের এই জায়গায় আগে কুঁড়েঘর এ্বং টিনের চালা ছিল, মালিক টুটুল সেগুলি নিয়েছেন কিনে । প্রাসাদ দেখার তরে দুর হতে আসা আগন্তকগন পায়না চেয়ে ভেতরে দেখার অনুমোদন । কেন দেখতে হয় না দেয়া সে প্রশ্নে প্রাসাদ প্রকল্পের কর্মকর্তা জানান , ‘এটি তো একটি বসত বাড়ি তাই বাড়ির ভেতর দেখতে রয়েছে কিছুটা মানা।
এই প্রাসাদ বাড়ি ঘিরে তাই সাধারণে জন্মিছে নানা প্রশ্ন । খালি চোখেই দেখা যায় শুধু শ্বেত পাথরেই লেগেছে বহু কোটি টাকা। বাড়ির মালিক এত কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামে এই প্রাসাদ বানিয়েছেন কি শুধুই থাকার জন্য ! তাহলে ভেতেরে ঢুকতে কেনই বা এত রাখঢাক ! বলা হয় বাড়ির মালিক জমিদার পরিবারের ছেলে। তাই এই বিলাস। বিলাসের এত টাকার উৎসই বা কোথায়! যে কয়টি প্রতিষ্ঠান আছে তা দিয়ে কি এত বড় প্রাসাদ নির্মাণ সম্ভব! যদি সম্ভব হয় তাহলে সরকারকে কত টাকা আয়কর হয়েছে দেয়া ! এমন অনেক প্রশ্ন...। তবে পাশেই যে তাল শাখে ঝুলে আছে ছোট ছোট ঘর , তাদের নিয়ে নেই কোন প্রশ্ন , শ্বেত মর্মর পাথরের না হলেও তাদেরকে নিয়ে রচিত হয় শিল্প সাহিত্য , তাদের গুণ গাথা বেচে থাকে হাজার বছর । এটাই যে গ্রামীন বাংলার চিরায়ীত সৌন্দর্য , কর্ম ,শিল্প ও শিক্ষার প্রেরণা সর্ব সাধারনের জন্য , এর জন্য হয়না প্রয়োজন কোন নান্দনিক দামী ভবন , যদিও মাথা গুজার ঠাই সেতো সকলেই চাই ,হয় যদি তা দামী ভবন তাহলে তো কথাই নাই !!!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:৩৩