ষড়ঋতুর বাংলাদেশে পহেলা ভাদ্র থেকে শরতের সূচনা।
ভাদ্রের তালপাকা গরম, বৃষ্টি যখন তখন, রাস্তায় কাদা জল ।
ছবি-১: তাল গাছ
এরপরও শরতের অপরুপ সৌন্দর্য উপেক্ষা করে সে কোন জনা
ষড়ঋতুর দেশে বছর ঘুরে শরত এসেছে ফিরে নিয়ে নতুন বাসনা
বদলাচ্ছে প্রকৃতি, নীল আকাশে চলছে সাদা মেঘের আনাগুনা
ছবি -২ : নীল আকাশে সাদা মেঘ
আর নদীর কূলে কাশবন মৃদুবায়ু দোলে শরতকে করছে অভিবাদন।
ছবি -৩ : কাশবন
প্রিয় শরতের রং রূপে নিজেকেই খুঁজি শত অভিধায়
যেমন খুঁজেছেন কবি ও শিল্পীগন শত গান কবিতায়
শরতকে স্বাগত জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ রচেছেন কথামালা
আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, গেঁথেছি শেফালীমালা
নবীন ধানের মঞ্জরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।
এসো গো শারদলক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে,
নির্মল নীলপথে বকশালীকেরা গিয়েছে যে পথে।
ছবি-৪: ধান ক্ষেতের পাশে বক
শরতের সাথে মিলে যায় কবিগুরুর সব বর্ণনা এখন
কাশফুল শেফালীমালা নবীন ধানের মঞ্জরি হয় দৃশ্যমান
দেশের প্রান্ত হতে প্রান্তরে মাঠে ময়দানে সবখানে
গ্রামে তো বটেই রাজধানী শহরের আকাশেও
সুন্দর নীল মেঘ গুচ্ছ ভাসে মৃদুমন্দ হাওয়ায়
গাছে ফুটছে সুগন্ধী শিউলি যা দেখে প্রেমের কবি নজরুল হয়েছিলেন মুগ্ধ ।
ছবি-৫: শিউলি ফুল
শরত দেখতে গিয়ে শিউলি আর শিউলি দেখতে গিয়ে শরত দেখেছেন কবি।
মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে।
এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে...।
ছবি-৬: চরণ শিশিরে এসেছে অরুণ-কিরণ
শুধু কি তাই, বলেছেন তিনি শিউলিতলায় ভোর বেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা।
শেফালি পুলকে ঝ’রে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা...।
ছবি-৭: শেফালী পুলকে পল্লী-বালা
আকাশেও শরতের রং রূপ কত বদলায় মাথা তুলে
উপরের দিকে তাকালে চোখ মুগ্ধ হয় মন ভরে যায়।
গ্রামের সবুজ বন চিরহরিত বৃক্ষের ফাঁক দিয়ে সুন্দর আকাশ
শহড়ের ভিড়েও চোখে পরে নীল আকাশ সাদা মেঘের পাল ।
ছবি-৮: নীল আকাশ সাদা মেঘের পাল
কবিগুরুর ভাষায় আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়
লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা
নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই লুকোচুরি খেলা।
শরতে শুধু প্রকৃতি বদলায় না, মানুষের মনও বদলায়
আর মনের পরিবর্তনের কথা জানিয়ে কবিগুরু লিখেন-
শরতে আজ কোন্ অতিথি এল প্রাণের দ্বারে।
আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দগান গা রে।
ছবি-৯ : প্রাণের দ্বারে আনন্দগান
আনন্দের উপলক্ষ হয়ে আসে শরত মনকে দেয় ভরিয়ে ।
তবে কিছু লুকোনো বেদনাও হৃদয় খুঁড়ে তুলে আনে শরত
তা না হলে নজরুল কেন লিখবেন শিউলি ফুলের মালা
দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ
এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথি কই।
ছবি-১০ : রাত জাগা সাথী
শুধু কি তাই বিরহের প্রকাশ ঘটিয়ে কবি আরো লিখেন
দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে আজ শরতের ভোর হাওয়ায়
শিশির-ভেজা শিউলি ফুলের গন্ধে কেন কান্না পায়...।
ছবি-১১: দুর প্রবাসে কাঁদে প্রান
কবিগুরুর কণ্ঠেও আকুতি শোনা যায়
তিনি লিখেন আজি শরত তপনে
প্রভাতস্বপনে কী জানি পরান কী যে চায়।
ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে
বিহগ বিহগী কী যে গায় গো...।
ছবি-১২ :বিহগ বিহগী
তবে শরত বন্দনা এখানেই নেই থেমে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে
শরৎ উৎসবের আয়োজন হয় নিয়মিত ভাবে
চারুকলার বকুল তলার আয়োজনটাও চ্লছে
অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে শিল্পীরা গাইছেন শরতের গান।
ছবি-১৩ : চারুকলার বকুল তলায় নৃত্যানুষ্ঠান
প্রিয় ঋতু ঘিরে তাই কত যে আবেগের অবগাহন
নৃত্যশিল্পীদের আবেগের প্রকাশ হতেছে মঞ্চায়ন ।
কবিদের চোখ দিয়ে দেখা শরতের নেই যে কোন তুলনা
তবু নব প্রজন্মকে ঋতু বৈচিত্র্য সম্পর্কে দিতে চাই ধারণা
শরত উৎসব বাঙালীর একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনা
শরত উৎসব বেশী বেশী হওয়া উচিত বলে করি কামনা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৫০