বাহারী সিলকের শাড়িটি পরিধানের সাথে এর জম্ম বৃত্তান্তটা একটু জানার আগ্রহটাই স্বাভাবিক
মথ জাতীয় রেশম পোকাটিই মুলত রেশমী বস্রজাত পণ্যের মুল কেন্দ্র বিন্দু । তুত গাছ কেন্দ্র করেই এদের জীবন চক্র । এখানেই জনম এখানেই খতম । আসুন নীচে একটু ধারাবাহিক ভাবে দেখি রেশম প্রজাপতি তার নীজের জীবনখানি কুরবানী দিয়ে কি মনোরম সাজে সেজেছে ।
তুঁত গাছ
বাংলাদেশের সর্বত্র জম্মে । তবে রাজশাহী অঞ্চলে বেশী । বাংলাদেশ সেরিকালচার বোর্ড রেশম চাষ ও বিকাশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে ।
তুঁতগাছ ফসলের মাঠে, পথের ধারে ও বাড়ীর আঙগীনায় চাষ করা হয়
রেশমপোকারা এর পাতা খায়।
গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে ডালায় রেখে তাতে রেশম মথের ডিম ছেড়ে দেয়া হয় । বাংলাদেশে রেশম উন্নয়ন বোর্ড দেশের রেশম চাষীদেরকে ডিম সরবরাহ করে থাকে।
পাতার বুকে ডিম রাখার পরে এগুলি ফুটে পোকার জম্ম হয় । পুকাগুলি জম্মের পর থেকেই এরা পাতা খাওয়া শুরু করে ও দ্রুত বড় হতে থাকে।
পোকাগুলি বড় হলে তাদেরকে রাখা হয় বিশেষভাবে তৈরী একটি চন্দ্রকী ডালে । এটাকে ঘরের কোণে রেখে দেয়া হয় যতন করে ।
রেশম পোকা থেকে গুটি পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি একেবারে কুঠির শিল্প। গ্রামীন গৃহবধুরা এ শিল্পের সাথে বেশী জড়িত। ঘরে বসেই কাজটি করা যায় ।
পোকা একটু বড় হওয়ার পরে এর পায়ুপথে নির্গমিত কশ থেকে গুটি পেচানো শুরু হয় । নীজ কশ নিশৃত আশ বা ফিলামেন্ট এর সমাহারে গঠীত গুটির ভিতরে পোকাটি আবদ্ধ হয়। জম্ম নেয় রেশমগুটির। গুটিগুলি সাদা ও রঙগীন হয় নীচে দেখুন :
গুটি অভ্যন্তরে আপন আলয়ে পুর্ণতা এলে গুটি কেটে প্রজাপতি বা মথ আকারে বেরিয়ে এসে উড়ে যায় বনবিহারে যদি সুযোগ পায়।
কিন্তু গুটি কেটে মথ হয়ে বের হয়ে গেলে গুটি বা কোকন থেকে টেনে বের করা রেশম সুতা কোন কাজে লাগেনা কারণ এর ফিলামেন্ট তখন কাটা পরে যায়, ফিলামেন্টের ধারাবাহিকতা থাকেনা । একটি গুটি থেকে প্রায় হাজার ফুট লম্বা ফিলামেন্ট পাওয়া যায় ।
তাই পোকাটি গুটি কেটে বের হয়ে যাওয়ার পুর্বেই একে ফুটন্ত গরম পানিতে ডুবিয়ে নিষ্ঠূরভাবে হত্যা করা হয় যেন গুটি কেটে তারা বেরিয়ে যেতে না পারে । ভিয়েতনাম ও চীনে অবশ্য গুটির ভিতর থাকা মরা পোকাটাকে রেশম চাষীরা পাক করে খায় মজা করে ।
ভিতরে থাকা পোকাগুলিকে হত্যা করার পর গুটি গুলিকে হাতে বা মেশিনে রিলিং করে রেশম সুতা বের করা হয়।
প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী রঙ্গীন ও বয়ন উপযোগী সুতায় পরিনত করা হয় ।
তারপর রেশশী সুতা দিয়ে হস্তচালিত তাতে বাহারী শাড়ি বুনা হয়।
রেশমী সুতায় তৈরী একটি দামী কাঞ্চিভরম শাড়ি পরিহিতা
একটি ভাল দামী খাটি রেশমী শাড়ি তৈরির জন্য যে পরিমান রেশম সুতার প্রয়োজন হয় তা পেতে হলে কয়েক হাজার গুটি সেই সাথে রেশম পোকার জীবনহানী অত্যাবশ্যক । এত গুলি প্রজাপতি হত্যা করে তাদের জীবনের বিনিময়ে তৈরী শাড়ি পরে মনের সুখে গান গাই তাকে নিয়ে কবিতা লিখি , প্রজাপতি হয়ে আকাশে উড়তে চাই , ভুলে যাই তার মৃত দেহটাকে শাড়ি ও ওরনায় জড়িয়ে রেখেছি নীজ গায়ে । আসুননা মনের সুখে প্রজাপতি নিয়ে কবিতা ও গান লিখার সাথে সাথে মানুষের হাতে তার জীবনের করুন পরিনতির কথাটি ভেবে তার জন্য একটু দু:খ প্রকাশ করি । কত ভাবেই না প্রজাপতিরা আমাদের জীবনকে ভরিয়ে দিচ্ছে ফুলে ফুলে ঘুরে পরাগায়ন সহায়তায় ফলে পরিনত করে আর মরে গিয়ে গায়ে আদর করে জড়িয়ে থেকে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:০৭