অগোছালো লোকের এলোমেলো কাজের সীমা পরিসীমা নেই । নীজের সম্পর্কে অগোছালো এ সব শব্দ শুনতে শুনতে রীতিমতো নিজের প্রতিই অনেক সময় অগোছালো ব্যক্তিদের বিতৃষ্না জম্মে যায় । তবে কারো হতাশ হওয়ার তেমন কারণ নেই । নিউরোসাইকোলজিষ্টদের সাম্প্রতিক গবেষনায় দেখা গেছে এ রকম এলোমেলো-অগোছালো প্রকৃতির মানুষরা বেশ বুদ্ধিমান এবং সৃজনশীল হন।
গবেষনায় দেখা গেছে যে :
ক) অগোছালো ব্যক্তিরা কোনও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে কাজ করেন।
খ) অগোছালো ব্যক্তিদের সৃজনশীলতা একটু বেশি কারণ তারা কল্পনাও করেন একটু অন্য আংগিকে। ফলে তাদের স্বাভাবিক কর্ম কিছুটা অগোছালো হয়ে যায়।
গ) তাদের আগ্রহের সীমানাও অনেক বিস্তৃত। রোজকার কাজের পাশাপাশি একটু অন্য ধরনের সৃজনশীল কাজ যেমন, লেখালিখি, ছবি আঁকার মতো কাজও তাঁরা করে থাকেন।
ঘ) অগোছালো ব্যক্তিরা মস্তিস্কের স্বাভাবিক পথে চিন্তা-ভাবনা করেন না। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, আমাদের মস্তিষ্কের বামদিকের অংশ সরলরেখা পথে চিন্তা-ভাবনা করে আর ডানদিকের অংশ ভাবে একটু ভিন্ন ভাবে। অগোছালো ব্যক্তিরা কোনও তথ্যকে বিশ্লেষণ করার সময় তাদের মস্তিষ্কের ডানদিকের অংশ দিয়ে সে কাজ করেন।
ঙ) মনোবিজ্ঞানিরা জানাচ্ছেন, মুক্ত মনের অধিকারী হওয়ায় এবং সহজ গ্রহণ প্রবনতা থাকায় এ ধরনের ব্যক্তিরা সমাজের সকল স্তরের মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালবাসেন। যার ফলে তাঁরা নানা কিছু শিখতে পারেন ফলে অভিজ্ঞতার ঝুলিও হয় সমৃদ্ধ ।
চ) শেখার আগ্রহ, জানার ইচ্ছা অগোছালো ব্যক্তিদের অনেক বেশি হয় বলেই মনোবিদরা দেখতে পেয়েছেন।
ছ) এই ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত সময় জ্ঞান মেইনটেন করতে পারেননা । এর কারণ হিসাবে মনোবিদরা জানাচ্ছেন, আগের কাজটি এতো মন দিয়ে করতে থাকেন যে পরের কাজের জায়গায় সময়মত পৌঁছতে পারেন না।
জ) মনোবিদদের একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই ধরনের ব্যক্তিগন একটু দৃঢ় হন এবং নিজের বক্তব্যকে দৃঢ় ভাবে প্রকাশ করেন।
তবে যতই সৃজনশীল হননা কেন ,নিউরোসাইকোলজিক্যাল গবেষণায় জানা যায় স্নায়ুবৈকল্পই (Nurotic disorder) মূলত একজন মানুষের অগোছালো হওয়ার অন্যতম কারণ। তবে স্নায়ুবৈকল্পগ্রস্তরা অগোছাল হলেও তারা বেশ কল্পনাপ্রবন ও সৃজনশীল, এটা স্বিকৃত । লন্ডনের কিংস কলেজের মনোবিজ্ঞানিরা তাদের একটি গবেষনায় দেখিয়েছেন যে সৃজনশীল চিন্তাবিদ যথা ভিনসেন্ট ভেন গঘ ( একজন ওলন্দাজ ইমপ্রেশনালিষ্ট পেইনটার যার সৃজনশীল কাজের তালিকায় রয়েছে অসংখ portraits, self portraits, landscapes, still lifes প্রভৃতি , নীচে তার স্বঅংকিত ছবি দেখুন )।
এ গবেষণা কর্মে উঠে এসেসে উডি এলেন এর নাম , যিনি একজন আমিরিকান অভিনেতা, কমেডুয়ান, ছবি নির্মাতা, ও কাহিণী লিখক এবং সাত দশক ধরে সৃজনশীল জগতে বিচরণ করেছেন অত্যন্ত সফলতার সহিত (প্রচ্ছদের ছবিটি উডি এলেন এর) ।
মনোবিজ্ঞানীরা এটা ধারণা করেন যে, এ সমস্ত স্নায়ু বৈকল্পগ্রস্ত সৃজনশীল ব্যাক্তিদের মস্তিস্কের ব্রেন অন্য়দের থেকে অনেক বেশী সংবেদনশীল ।
লন্ডনের কিংস কলেজের ব্যক্তিত্ব বিশেযজ্ঞ মনোবিজ্ঞানি ড: এডাম পারকিনস বিষয়টিকে কিভাবে ব্যাখ্যা করেন দেখা যাক তার কথাতেই :
'We're still a long way off from fully explaining neuroticism, and we're not offering all of the answers, but we hope that our new theory will help people make sense of their own experiences, and show that although being highly neurotic is by definition unpleasant, it also has creative benefits.”
স্নায়ুবৈকল্পজনিত অগোছালো দের পাচটি বিশেষ গুন নিউরুমনোবিজ্ঞানীগন কতৃক স্বিকৃত । এর মধ্যে একটি হলো সৃজনশীলতা ও বাকী চারটি হলো মুক্তমন, সুবুদ্ধি, বহির্মুখীনতা ও গ্রহণপ্রবনতা।
তবে এ বিষয়ে ড: পারকিনস বলেন যে :
'High scorers on neuroticism have a highly active imagination, which acts as a built-in threat generator,'. Activity in the medial prefrontal cortex not only produces fear in the neurotic, but is also a powerful creative force, according to the researchers, who explain their theory in the journal Trends in Cognitive Sciences.
তার একথা থেকে দেখা যায় যে, অগোছালোগন সৃজনশীল হলেও এর উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে । এ প্রসংগে কিংস কলেজের গবেষনায় একথাও বলা হয়েছে যে The creativity of Isaac Newton and other neurotics who are randomly cited as neurotic but creative may simply be the result of their tendency to dwell on problems far longer than average people, the research team reports with a picture on Newton.
তাই যদিও গবেষনায় দেখা যায় যে, অনেক বিখ্যাত সৃজনশীল ব্যাক্তি অগোছালো ছিলেন তথাপী অগোছালো জিনিয়াসদের জন্য কিছু নৈরাশ্যজনক বিষয়ও আছে, তা অনস্বিকার্য। যদিও অগোছালো আচরণ নিজস্ব সৃজনশীল কর্মের সাথে হাতে হাত ধরে এগিয়ে চলে বছরের পর বছর এবং মস্তিস্কের ব্রেন থেকে পয়দা করে পজিটিভ সৃজনশীলতা কিন্তু একই সময়ে এটা অন্য বিষয়ে চিন্তার ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতাকে প্রাধান্য় দিয়ে থাকে যা তাদের প্রাত্যহিক কাজকে করতে পারে বিঘ্নিত কিংবা পারিবারিক বা সামাজিক ক্ষেত্রে ডেকে নিয়ে আসতে পারে অনাকাংখীত অনেক বিরম্বনা এমন কি অতিমাত্রায় অগোছালোভাবে সৃজনশীলতার পিছনে ছুটলে পরিনামে (in the long run may experience psycriatic disorders) জীবন চলার পথে মানসিক বিকারের স্বিকার হতে পারে। তাই অগোছালো জিনিয়াস না হয়ে গোছালো জিনিয়াস হলে প্রাপ্তি সকল দিকেই বেশী । যদি স্বাভাবিক ভাবে নীজকে গোছালো ব্যাক্তিত্বের পর্যায়ে না নেয়া যায় তাহলে নিউরোসাইক্রিয়াটিস্টের স্বরনাপন্ন হওয়া অতি জরুরী ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:১০