দেশ প্রেম কোন জাতির বেশি আর কোন জাতির কম এই দাবী আমি আগে বিশ্বাস করতাম না । মা তার কোন সন্তানকে বেশি স্নেহ করে আর অন্যটাকে কম আদর করে এ কথা যেমন বিশ্বাস করার অযোগ্য তেমনি কোন জাতির দেশ প্রেম বেশি আর কোন জাতির দেশ প্রেম কম এ কথা আগে আমি কখনো মেনে নিতে পারি নি । কিন্তু বয়স ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যখন দুনিয়া দেখার সৌভাগ্য আমার হলো , পৃথিবীর বহু জাতির মানুষের সাথে যখন ওঠা বসা করার সুযোগ পেলাম তখন থেকে বুঝতে পারলাম দেশ প্রেমও আপেক্ষিক । দেশ প্রেম যে আপেক্ষিক তা বুঝার জন্য সুদূর অতিতে যাওয়ার দরকার নেই । বর্তমান বিশ্বেই অনেক জাতি আছে যারা নিজের ব্যক্তিগত সম্পদের চেয়ে দেশের সম্পদকে বেশি প্রধান্য দেয় । ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থ তাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ । আবার এই বিশ্বের বুকে এমন জাতিও বিদ্যমান যারা শুধু ব্যক্তি স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত , তাদের কাছে জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি সুস্পষ্ট নয় । এটা এখনো তাদের কাছে সংগায়িত হয় নি ।
উদাহরণ হিসেবে দঃ এশিয়ার দুটো দেশ ও জাতির কথা আমি এখানে উল্লেখ করেই শেষ করবো । ভারত নামক দেশটির প্রতি আমাদের দেশের কিছু মানুষের প্রচন্ড আকর্ষন রয়েছে আবার অনেকের রয়েছে বিকর্ষন । মাঝামাঝি কিছু আছে কিনা সন্দেহ আছে । আমার কাছে চরম আকর্ষন আবার চরম বিকর্ষন দুটোই অগ্রহনযোগ্য । সে ব্যাখ্যা দিতে গেলে লেখা দীর্ঘায়িত হবে । এখানে যে কথাটি বলা আমার উদ্দেশ্য তা হলো ভারত যে শুধু আয়তনে একটি বিশাল দেশ তাই নয় বরং ভারত বর্তমানে বিশ্বের একটি উদীয়মান অথনৈতিক ও সামরিক শক্তি । দিন দিনই ভারত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । কিভাবে ? কিসের জোরে ? জন সংখ্যা ও দারিদ্রের ভাড়ে নুহ্যমান দেশ ও জাতিটি কোন শক্তির বলে অপ্রতিরোধ্য ভাবে এগিয়ে চলেছে ? আমি বলবো সেই শক্তিটি হলো দেশটির নেতা নেত্রীদের প্রচন্ড দেশ প্রেম এবং আত্মপর্যাদা ও আত্মসম্মান বোধ । এই তিনটি বিষয় বাংলাদেশে অস্বাভাবিকভাবে অনুপস্থিত । বাংলাদেশের নেতা নেত্রীদের মধ্যে দেশ প্রেম আছে কি না তা লেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না । কারন আমার এই দাবীর স্বপক্ষে প্রতি দিনের পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য উপাদান মিলবে । শুধু নিরপেক্ষভাবে চক্ষু মেলিয়া দেখার চেষ্টা করলেই ধরা পড়বে ।
বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের মন্ত্রী এবং কিছু এমপি ভারতের স্বার্থের পক্ষে যেভাবে কথা বলেন তাতে সন্দেহ জাগে এরা কি বাংলাদেশের নাগরিক না কি ভারতের নাগরিক । আওয়ামীলীগের ভারত প্রীতি এবং ভারত তোষণের ফল হিসেবে আমরা আজ ফারাক্কার করাল গ্রাসে পরিণত হয়েছি । দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় পর আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় । তাদের ভারত তোষণের পরিণতিতে আমরা টিপাই মুখ বাধেঁর মরণ ফাঁদে আটকা পড়তে যাচ্ছি । ট্রানজিট , চট্টগ্রাম বন্দর , টাস্কফোর্স , পানি বন্টন , টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাণিজ্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রিদ্বয় যে সব মন্তব্য করেছেন , মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা তা শুনে বা পড়ে আশ্বস্ত হতে পারি নি যে বর্তমান সরকার ভারতের স্বার্থের চেয়ে বাংলাদেশর স্বার্থকে বড় করে দেখতে পারবে । আমরা আওয়ামীলীগ সরকারের কর্ণধারদের মধ্যে দেশ প্রেম, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদবোধ আছে কি না তা নিয়ে সন্দিগ্ধ । আওয়ামীলীগ নেতা- নেত্রীরা মানুষকে বুঝাবার চেষ্টা করছেন ভারত একটি শক্তিশালী দেশ তাদের সাথে ঝগড়া করে তো পারা যাবে না ! কাজেই তাদের দয়ার উপরই আমাদেরকে নির্ভর করতে হবে । বিশ্বের বহু ছোট দেশ অনেক শক্তিশালী বড় দেশের প্রতিবেশী কিন্তু কেউ কারো দয়ায নয় বরং বৈধ অধিকার ও আত্মসম্মান নিয়ে বসবাস করছে । কিন্তু আমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে অধিকার আদায়ের চেষ্টা নয় বরং দয়া ও করুনা পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত । কাজেই যে দেশের রাজনৈতিক নেতা ও সরকারের এমন নতজানু মানসিকতা সেদেশের যে কোন উন্নতি অগ্রগতি হবে না , সে দেশ যে একদিন ফারাক্কা এবং টিপাইমুখ বাধেঁর করাল গ্রাসে অস্তিত্বের সংকটে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই ।
বিএনপি এ ব্যপারে সোচ্চার হয়েছে , ভারতের স্বার্থের পক্ষে সরকারের কূটকৌশলগুলো অনেকটাই তারা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে । যেমন গত কাল প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন , টিপাইমুখ বাঁধ বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সংসদীয় কমিটি গঠন করা হবে । আজ মিডিয়ায় দেখলাম বিএনপি বলেছে সংসদীয় কমিটি নয় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে হবে । বিএনপির এই বক্তব্যে এটা মনে হয়েছে যে তারা সরকারের কূটকৌশলগুলো ধরতে পারছে । সংসদীয় কমিটি মানে কি ? মনে হচ্ছে , কিছু অশিক্ষিত ভারতীয় দালালদের ফোরাম । যারা টিপাইমুখ বাঁধকে বৈধতা প্রদান করবে । কাজেই এক্ষেত্রে বিএনপি যে দাবী জানিয়েছে তা যৌক্তিক এবং তা আমাদের মনে আশার আলো জাগিয়েছে ।