somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো সঙ্গী হতে...

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুগ্ধতা যেন থাকে সব সময়, অনাবিল হয়ে ওঠে দাম্পত্য। মডেল: বাপ্পা ও অর্পিতা। ছবি: সুমন ইউসুফ‘ মরসঙ্গী হওয়ার তাগিদ দিলে হয়তো রোমান্টিকতার বাড়াবাড়িই হবে। তবে আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী?... সফল ও ভালো জীবনসঙ্গী সবারই চাওয়া থাকে।;সঙ্গী রোমান্টিক হবে। আমার সব কথা বুঝবে। দারুণ সুন্দর সময় কাটাব।প্রত্যেকেই ভাবেন, তাঁর সঙ্গী তাঁকে ঘিরেই নতুন জীবন রচনা করবেন;জীবন কাটাবেন। তাঁর রাজ্যে তিনি একাই রাজত্ব করবেন। এখানে অন্য কেউ অপরের ভাবনায়, প্রকাশ্যে, ফেসবুক অথবা মোবাইলে কাজে-অকাজে ভাগ বসাবে না। দুজনের পারস্পরিক মুগ্ধতা যেন সারা জীবন থাকে।
আবার পারিবারিক সম্বন্ধ করে হওয়া বিয়ের ক্ষেত্রে বিয়ের পর এই ভালোবাসাবাসীর পর্বটা শুরু হয়। বিয়ের মূল লক্ষ্য যেটা থাকে সেটা হলো, মনের মধ্যে যে মিলনের আকাঙ্ক্ষা তার নান্দনিক বাস্তবায়নে নিজেকে প্রকাশ করা, রোমান্টিকতা। আর এসব ঘিরে রয়েছে সামাজিকতা। এসব নিয়েই তো বিয়ে।
মার্কিন লেখক মিগনন-ম্যাকফলিন যেমনটা বলেছেন, দায়িত্ব দু-তরফেরই। সম্পর্ক হবে এ রকম; একজীবনেই বারবার প্রেমে পড়া চাই একে অপরের। শুধু তো দায়িত্ববোধ না, পরস্পরের প্রতি মুগ্ধতা না থাকলে ভালো সঙ্গী হয়ে ওঠা দুষ্কর। আগে থেকে পরিচয় না থাকলে পারিবারিক সম্বন্ধ করা বিয়েতে আরেকটু কাঠখড় তো পোড়াতেই হয়। মার্কিন দুঁদে মঞ্চকর্মী রবার্ট ব্রল্টের কথাটাই বা বলি না কেন! সংসার রঙ্গমঞ্চে দুজনকে হতে হবে দুজনার। আর ভালোবাসার প্রশ্নে সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধে দরকারে এককাট্টা হয়ে লড়াই।
রম্যলেখক রবার্ট কুইলেন বলেছেন, সুখী ও ভালো সম্পর্ক হলো;যুগলের দুজনই একে অপরের প্রতি;আস্থাশীল, সহৃদয়, সদয় এবং সংবেদনশীল।

বাস্তবে কী হচ্ছে?
সংসার জীবনে প্রবেশ করার পর পারস্পরিক রুচিবোধ, আচার আচরণ, শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীলতা প্রত্যেকের কাছেই ধরা পড়ে ইতি বা নেতিবাচকভাবে। সবাই শুরুতে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ পরে হার মেনে যান।
বাসররাতের অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করা যাক। কিছু পুরুষ আছেন, যাঁরা বিড়ালের মতো ওই রাতে ওত পেতে থাকেন তাঁর স্ত্রীর কৌমার্য হরণ করতে হবে এই অপেক্ষায়। কথা নাই বার্তা নাই হামলে পড়েন। ফল কী? বিয়ের বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই মা-বাবা হওয়ার মতো গুরুদায়িত্ব নিতে হয়। নিজেদের বোঝাবুঝিটাও হলো না। সেক্স যে উপভোগের বিষয় তা বোঝার সময় কোথায়?
অথচ সুখী সেক্সুয়াল লাইফ সুখী জুটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নারীর জীবনে এ বিষয়টির মানে হচ্ছে প্রজনন-প্রক্রিয়ার অংশ;বাচ্চা জন্ম দেওয়া।
অনেক সঙ্গী বিয়ের পরপরই জানিয়ে দেন যে তাঁর মা-বাবা, ভাইবোন সবার দায়িত্ব এখন থেকে মেয়েটির। তাঁদের যেন কোনো রকম অযত্ন না হয়। আবার আত্মীয়স্বজনের হ্যাপাও তাঁকে নিতে হয়। যে স্ত্রী এই গুরুদায়িত্ব পালন করছেন তাঁর সুখ-দুঃখের দিকে নজর দেওয়ার মতো সময় স্বামীর বা তাঁর পরিবারের কারও মনে থাকে না।
অনেক স্ত্রীর হাতে কোনো পকেটমানি থাকে না। ফলে নিজের প্রয়োজনে কোনো কেনাকাটা বা খরচ করতে গেলে কেমন যেন লজ্জার পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। অনেক পুরুষকে বলতে শুনি ;বউ আমার প্রতিদিনই পকেট কাটে;। বউকে সমাজে ;পকেটমার; আখ্যা দিয়ে আদরের সে কি আদিখ্যেতা। স্বামী বলতে থাকে, o;আমি টের পাই কিছু বলি না।; বউ লাজুক হেসে উত্তর দেয়, ;ওই টাকা তো আামি সংসারে খরচ করি।o; নারীকে হেয় করার এবং দাবিয়ে রাখার প্রবণতা অনেক পুরুষেরই আছে। তা থেকে বের হওয়া প্রয়োজন।
স্ত্রীর সাজগোজ, বাইরে চলাফেরা; সবকিছুতেই কেমন যেন বাধা। উল্টোটাও আছে। আমার কাছে আসা একজন রোগী সেদিন বললেন, ;আগে কত মেয়ের সাথে ঘুরতাম; টাকাপয়সা খরচ করতাম। এখন সবকিছুতেই কড়াকড়ি। এমনকি বউয়ের দিকের কোনো অনুষ্ঠানেও উনি যেতে দিতে নারাজ।; অবশ্য পরক্ষণেই বলেছেন এখন আমাকে বদলাতে হবে। বিয়ে করেছি একটা বাচ্চাও আছে। সেই আগের প্রেম নেই। কোথায় যেন কী নেই।
দুজনের খাওয়া-দাওয়ার রুচি ভিন্ন হতেই পারে। ভিন্ন এলাকা, পরিবেশ, পরিবার থেকে আসা দুজন ব্যক্তি। এ নিয়ে অশান্তির কথা প্রায়ই শোনা যায়। নিজের পছন্দ-অপছন্দ অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এটা পরিহার করতে হবে।

মুগ্ধতা যেন থাকে সব সময়, অনাবিল হয়ে ওঠে দাম্পত্য।তাহলে কী করতে হবে?
বিয়েটা যদি হয় সম্বন্ধ করে:
 দুজনের পছন্দ-অপছন্দ বিয়ের আগে আলোচনা করে নিলেই ভালো হয়।
 কারও বিয়ের আগে প্রেম থাকতেই পারে। সে ব্যাপারটা দুজনেই দুজনের স্মৃতি থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন কি না, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। এই বোঝাপড়া যত আগে হবে ততই ভালো।
 নিজের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করা উচিত নয়। এতে উভয়ের পরিবার ও নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাড়বে।
 নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ যদি না থাকে; তা শোধরানোর মানসিকতা থাকতে হবে।
 পারস্পরিক দুর্বলতাগুলো জানতে ও জানাতে পারলে ভালো। এ কারণে, যাতে সে ব্যাপারে আপনি ;কেয়ারিং; হতে পারেন। আপনার ওপর আপনার সঙ্গীর আস্থা যেন বাড়ে। অযথা সেসব বিষয় নিয়ে জীবনকে তিতকুটে বানানোর কোনো মানে নেই।
 বিবাহিত জীবন টিভির সিরিয়াল;ডেইলি সোপ বা অপেরা নয়। গোপন গল্পগুলো জীবননাট্যের ক্লাইমেক্স বা জটিলতা বাড়ানোর জন্য মজুত রাখবেন না।
 আপনার সঙ্গীর আগ্রহের দিকটায় নজর দিন। তাকে উৎসাহ দিন। দেখবেন সেও আপনার প্রতি তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যেমন: পড়াশোনা করা, বছরে অন্তত একবার বেড়িয়ে আসা, কোনো সামাজিক সচেতনতামূলক কাজ করা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি। আবার কেনাকাটাও হতে পারে। একদিন না হয় গেলেনই সঙ্গীর সঙ্গে।
 শারীরিক ব্যাপারটি উপভোগ্য করে তুলুন। ব্যাপারটি নিয়ে লজ্জা না করে নিজেদের মধ্যে খোলাখুলি আলোচনা করা ভালো। প্রয়োজন হলে নিজেদের পরিতৃপ্তির জন্য চিকিৎসক-পরামর্শ, ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
 অন্যের দোষ-খুঁতগুলো হিসাব না করে সঙ্গীর ইতিবাচক দিক বের করুন। আর সেগুলোর প্রশংসা অব্যাহত রাখতে হবে।
 ঝগড়া নয়, আলোচনায় যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে হবে।

প্রেমের বিয়েতে
প্রেমের সময় অনেক ক্ষেত্রে দুজনের পারিবারিক স্ট্যাটাস, পারিবারিক আবহ, তাদের নিজেদের মতামতের মূল্য কতখানি সেসব দিক অনেকটা অজানাই থেকে যায়, ভাবেন যে পরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আসলে বাস্তবতা ভিন্ন। বিয়ে মানেই হচ্ছে সামাজিকতা। সংসার মানেই একটি সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা। যে যার মাতব্বরি ফলানোর একটা জম্পেশ জায়গা ভেবে নড়েচড়ে বসেন। সংসার রাজনীতির ভালোমন্দ দেখভাল এড়িয়ে গেলে কেমন করে চলবে!
তাহলে উপায়;যখনই ভাবলেন বিয়ে করবেন! একটু ভেবে নিন।
 দুজনই দুজনের পরিবারকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন।
 দুজনই তাঁদের নিজেদের পরিবারে কতখানি প্রভাব রাখতে পারবেন তা পর্যালোচনা করুন।
 পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ অবশ্যই থাকতে হবে। বিয়ের পর ;পারবো না, পারলাম না; বলতে যাতে না হয় সে রকম মানসিক প্রস্তুতি আগেই নেওয়া প্রয়োজন।
 ভুল-বোঝাবুঝির শুরুতেই তা নিরসন করা উচিত ।
 নিজেদের দোষত্রুটিগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন। পরে ডায়েরি দেখে সেসব শোধরাতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

লেখাটি দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত। মুদ্রিত সংখ্যায় দেয়া ছবিও ব্লগপাঠকদের জন্য দেযা হল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১২
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×