ছাত্রছাত্রীদের উপর চড়াও হয়েছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষিকা। তার এমনটা করার কথা নয়। সুনামগঞ্জ শহরতলীতে তিনি সবার কাছে সুপরিচিত ভাল মানুষ হিসেবে। ভাল শিক্ষক হিসেবে। দীর্ঘদিনের সুনাম। তারপর হঠাৎ একদিন অদ্ভুত আচরন করলেন।কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না। কেন এমন করলেন--সেটা বিশ্লেষন করে দেখা দরকার। মধ্যবয়সী তিনি। কেন তিনি নিজের ওপর নিয়ন্ত্র হারালেন। কি হতে পারে তার!
পত্রিকান্তরে জানা যায় ৫০এর কোঠার এই নারী শিক্ষক হঠাৎ তার ছাত্রছাত্রীদের সাথে অদ্ভুত আচরণ করেছেন।
বাসায় অঙ্ক করতে দেওয়া হয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। তারা তা করেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ৪৮ শিক্ষার্থীর হাতে ব্লেড ধরিয়ে দেন শিক্ষিকা৷ এরপর নির্দেশ দেন নিজেদের হাত-পা কেটে রক্তাক্ত করতে। কোমলমতি শিশুরা বাধ্য হয়ে নিজেদের হাত-পা কেটে করল রক্তাক্ত।
সুনামগঞ্জ শহরতলির ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে গত বুধবার।
উনি কেন এমন আচরণ করলেন তা কি আমরা একবারও ভেবে দেখেছি? উনি যা করেছেন তা অবশ্যই বিচারযোগ্য আইনের নজরে। । কিন্তু এই অনাকাঙ্খিত ব্যবহারের পিছনের মানসিক / পরিবারিক / শারিরীক জটিলতা গুলো যদি একবার পরীক্ষা করে দেখা যেতো। তার সমস্যা সমাধানের পথ বের করার চেষ্টা করা দরকার। তাই নয় কি? এমনটা যে তিনি একা করলেন তা নয়। এই সমস্যায় আমরা আরও অনেকে ভুগতে পারি। উনি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে আজ অপরাধ কর্মের মুখোমুখি। এজন্য দরকার নিজেকে জানা। কোন বয়েসে কোন সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে_ তা ধারনা থাকলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রন রাখা সহজ হয়।
হ্যাঁ, একথা সত্যি যে এই কোমলমতি শিশুদের মনে এই আচরণ একটা বড় দাগ কেটে যাবে। । এই স্মৃতি তারা হয়তোবা কখনও ভুলবে না । এদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো আতঙ্কজনিত ,উদ্বেগজনিত রোগে ভুগতে পারে ।
তবে আমাদের সবার অলক্ষ্যে থেকে যায় ৫০ এর কোঠার নারীদের মানসিক সমস্যা । যা এই বয়সের নারীদের জন্য অনাকাঙ্খিত কিন্তু এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। পরিবারের সবাই ছেলেমেয়ে ,স্বামী--যার যার ব্যক্তিগত পরিমন্ডলে ব্যস্ত থাকে। ফলে মা / স্ত্রী হয়ে পড়েন একা। একাকীত্ব পেয়ে বসে । সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা ,¯স্বামীর উপেক্ষা চেপে বসে।
এ বয়সে শরীরে হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন মানসিক / শারীরিক জটিলতা গুলো অনেকের মধ্যে প্রকট ভাবে দেখা দেয় । জ্বালাপোড়া, হট ফ্লাশ, ঘাম দেয়া ,অস্থিরতা, ,ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া ,হাত-পা-কোমড় কামড়ানো, চিবানো / ব্যথা করা প্রায় প্রতিদিনের সমস্যা হয়ে দাড়ায় । বিরক্তিবোধ ,কাজে অনীহা পেছনই ছাড়ে না । সবাই বাড়ী ফিরে প্রতিদিন একই কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে যান। এড়িয়ে চলেন। সমবেদনা জানানোর জন্য কাউকে পাওয়া যায় না । সেক্সুয়াল লাইফের ক্ষেত্রেও আসে অনীহা । ফলে ¯স্বামীর সাথে শারীরিক পাশাপাশি মানসিক দূরত্ব বাড়তে থাকে।
ডায়বেটিস,উচ্চরক্তচাপ,হৃদরোগ,কিডনী সমস্যা ,থাইরয়েড সমস্যা তো লেগেই আছে। ওই শিক্ষিকার তাই ছিল বলে রিপোর্টে জেনেছি। এতদিন সংসারের সবাইকে উনি দেখে এসেছেন। অথচ আজ তাকে দেখার কেউ নেই। কথা বলার কেউ নেই।
মনোচিকিৎসক হিসেবে আমি নারী ও শিশু কাউকেই সেবা শুশ্রুষার বাইরে রাখতে পারছি না। কারও সেবা পাওয়ার অধিকারকে অস্বীকার করতে পারছি না। প্রত্যেকের পাশে আজ আমাদেরকে দাঁড়াতে হবে। মেডিসিন দিয়ে, সাইকোথেরাপী দিয়ে সঠিক সমাধানের ক্ষেত্র তৈরী করতে এগিয়ে আসতে হবে মনে করি। স্কুল প্রশাসন, শিক্ষাদফতর,রাষ্ট্র ও আইনী ব্যবস্থা তার বিরুদ্ধে কি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবে জানি না। তার এই কাজঅবশ্যই পানিশমেন্ট যোগ্য তাও ঠিক। কিন্তু এটাও নিবেদন অবশ্যই দরকার মনোসেবাও দরকার। তিনি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে যা করেছেন_ সেটারও চিকিৎসা দরকার।
সামাজিক আলোচনার ডামাডোলে আমরা এই গুরুত্বপূর্ন মানবিক দিকটি ভুলে যেন না যাই। চলুন তার কাছে যাই। অবশ্যই ধারনা করতে পারি-- তিনি ভীষন মানসিক চাপে ছিলেন। তার স্বামী জানান, গুরুতর রোগে ভুগছেন তিনি।
চিকিৎসার পয়সাপাতি নিয়ে টেনশন। পরিবারে আরও অনেক সমস্যা থাকে। সেসব নিয়ে তাকে মনোসমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে। সেটা যেন আমরা অবহেলা না করি।
সবশেষে বড় সমস্যাটা বলি--অন্যান্য সব কিছু আমরা আমলে নেই কিন্তু এই যে নিয়ন্ত্রন হারানোর মানসিক সমস্যা সেটা আমরা সমাজের বেশীর ভাগ মানুষ একদমই পাত্তা দেই না গোড়াতে। যখন সেটির ফলশ্রুতিতে বড় ধরণের বিকৃতি/ অসঙ্গতি/ অপরাধের প্রকাশ ঘটে_ তখন ঝাপিয়ে পড়ি সবাই। পরিবার, মিডিয়া সমাজ রাষ্ট্র প্রশাসন সকলে। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে কেউ গুরুত্ব দেই না। এই জিনিসটাই নজরে দিলাম সকলের।
যে খবরটি নিয়ে এই মন্তব্য করলাম তা হল-----
রক্তাক্ত ৪৮ শিক্ষার্থী
ব্লেড ধরিয়ে দিয়ে শিক্ষিকা বললেন হাত-পা কাট
সুনামগঞ্জ অফিস | প্রথম আলো----
বাসায় অঙ্ক করতে দেওয়া হয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। তারা তা করেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ৪৮ শিক্ষার্থীর হাতে ব্লেড ধরিয়ে দেন শিক্ষিকা৷ এরপর নির্দেশ দেন নিজেদের হাত-পা কেটে রক্তাক্ত করতে। কোমলমতি শিশুরা বাধ্য হয়ে নিজেদের হাত-পা কেটে করল রক্তাক্ত।
সুনামগঞ্জ শহরতলির ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে গত বুধবার। এলাকার শতাধিক অভিভাবক গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তাঁদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে পরিস্থিতি শান্ত করে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী মঙ্গলবার অভিযুক্ত শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
গতকাল বেলা ১১টার দিকে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের দোতলার একটি কক্ষে ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করছে পরিচালনা কমিটি। কিন্তু যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সহকারী শিক্ষিকা স্কুলে আসেননি।
এরপর প্রধান শিক্ষক এই প্রতিবেদককে নিয়ে গেলেন পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে। তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ব্লেড দিয়ে নিজেদের হাত-পা কেটে রক্তাক্ত করেছে, তাদের দাঁড়াতে বললেন। সঙ্গে সঙ্গে ২০ থেকে ২৫ জন ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তারা তাদের হাত, পা, পায়ের পাতা, হাতের আঙুল ও নখে ছোট ছোট কাটার চিহ্ন দেখায়। কারও কারও গায়ে একাধিক কাটার দাগও রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বুধবার বিকেলে শিক্ষিকা ক্লাসে এসে জানতে চান, বাসায় করার জন্য যে ৩০টি অঙ্ক দেওয়া হয়েছিল সেগুলো সবাই করেছে কি না? এ সময় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ‘না’ বলে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে তিনি এক শিক্ষার্থীকে পার্শ্ববর্তী বাজারের সেলুন থেকে তাঁর কথা বলে পরিত্যক্ত ব্লেডের টুকরা নিয়ে আসতে বলেন। ওই শিক্ষার্থী গিয়ে ৪৮টি ব্লেডের টুকরা নিয়ে আসে। পরে সেগুলো ৪৮ জন শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিয়ে নিজেদের হাত-পা রক্তাক্ত করতে বলেন শিক্ষিকা। পরে বাধ্য হয়ে তারা এই কাজ করে। ক্লাসে মোট ৫২ জন উপস্থিত থাকলেও ব্লেডের টুকরো কম হওয়ায় চারজন রক্ষা পায়৷
ঘটনাটি গ্রামে জানাজানি হলে অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ইব্রাহিমপুর গ্রামের অভিভাবক ফিরোজ আহমদ বলেন, তাঁর ছেলে নূর ফয়েজ রাজু আঙুল কেটেছে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে এ রকম শাস্তির কথা জীবনে শুনিনি। এ জন্য ওই শিক্ষিকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, মধ্যবয়স্ক শিক্ষিকা ওই বিদ্যালয়ে ২২ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। কেন তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ করলেন তা কেউ বুঝতে পারছেন না।
প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম ঘটনার সময় শহরে একটি বৈঠকে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছে, এটা অস্বীকার করছি না। ওই শিক্ষিকা বয়স্ক মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছেন। তাই সবাইকে নিয়ে বিষয়টির একটা সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমির হোসেন জানান, অভিভাবকসহ সবাইকে নিয়ে বসে ঘটনাটির একটা মীমাংসা করা হয়েছে। ওই শিক্ষিকার প্রতি আর কারও কোনো অভিযোগ নেই।
শিক্ষিকার বাসায় গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি৷ তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়৷ তবে তাঁর স্বামী জানান, তাঁর স্ত্রী অসুস্থ৷ তাঁর হৃদ্যন্ত্র ও কিডনিতে সম্প্রতি সমস্যা ধরা পড়েছে৷ চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিলেটে পাঠানো হয়েছে।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, তাঁকে কেউ বিষয়টি জানায়নি। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
:#> :#> :#>