বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। ব্রাম্মনবাড়িয়া থেকে আসা এক মহাতঙ্কগ্রস্ত মানসিকভাবে বিপর্যয়-পড়া শিশুর পরিবারের কাছে বিষয়টি জেনেছি। সেখানে কোন কোন কিন্ডারগার্টেন তথা কথিত ক্যাডেট-মাদ্রাসা স্কুলে শিশু শিক্ষার্থীদের মনে ধর্মভাব ও ধর্মভয় ঢোকানোর জন্য বিশেষ উপায়ে তৈরী কবর আজাবের ভিডিও দেখানো হয়। সেখানকার কিছু ভিডিও সিডি দোকানে এসব কবর আজাব ভিডিও পাওয়া যায়। কোন কোন অভিভাবক তার সন্তান ও পরিবারের সন্তানদের এই ভীতিকর জিনিষ দেখিয়ে থাকেন।
সমাজে আমাদের চোখের আড়ালে কত কিছুই না ঘটছে। বিবরণে শুনেছিলাম-- ওই সব ভিডিওতে কবর আজাবের নানা দৃশ্য চিত্রায়ন করে দেখান হয়। অত্যন্ত কাচাভাবে সেইসব চিত্রায়ন করা। কালো পর্দা দিয়ে ভীতিভয়ংকর কবর বানানো হয়েছে। মরনের পর কিভাবে মউতের ফেরেস্তা আসেন, জাম্বুটাইপ হো হো করে আওয়াজ দিয়ে ভয় দেখায়; সাপ খোপ কামড় সহ নানা আতঙ্ককর কাজ করে। ওই রোগীর কাছে সেই বিবরন শুনে মনে হয়েছে কোথায় আছি। আমাদের চারপাশে একদল লোক এইসব তৈরীও করে।তা দিয়ে কবর আজাব প্রচার করে ভাবে বেশ ধর্ম প্রচার হল। যা হোক-- এ বিষয়ে বিস্তারিত আলপের মধ্যে যেতে চাই না। আমি মানসিক সমস্যা র মধ্যে থাকতে চাই। রোগীর আত্মীয় স্বজনের কাছে জানলাম-- অনেক দিন ধরেই কিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুলে এই কান্ড চলছে। এসব দেখে শিশুরা কৌতুহলীও হচ্ছে। আতংকগ্রস্তও হচ্ছে। কিছু শিশু ওই রোগীর মত ভয়ে প্রায় আধমরা হয়ে পড়ছে। অভিভাবকদের যেটা সমস্যা --তারা প্রথমে সমস্যাটি ধরতে পারেন নি। সন্তান কথা বলে না। চোখের সামনে জ্বীন ভুত--মউতের ফেরেস্তাকে দেখে। তারা ধরে নিয়েছিলেন সন্তানকে জ্বীন ভুতে পেয়েছে। ওঝা দেখান হয়েছে।মসজিদের ইমাম হুজুরের পানি পড়া খাওয়াণো হয়েছে।
তাতে কোন লাভ হয় নি। একসময় রোগীর অবস্থা বেশী খারাপ হওয়ায় মানসিক ডাক্তারের
শরন নিয়েছেন। এমনটাই হয়। গ্রামের অনেক রোগী এখনও পীর ভন্ডবাবা, ওঝা-পানি পড়াসহ কয়েক হাত ঘুরে তবে্ এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় আসে। সে যাই হোক-- শিশুকে এমন ভয় দেখানর ভয়াবহ নিকট প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী লাইফ টাইম প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থায়ী সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে। হরর ফিল্ম তাও আবার কবর আজাবের মত হরর ফিল্ম।
এই ভয় নিয়ে ৩০ এপ্রিল তারিখে আমাদের সুযোগ্য সহকর্মী বিএসএমএমইউর মানসিক রোগবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব চমৎকার লেখা লিখেছেন কালের কন্ঠ পত্রিকায়।
বিষয়টি বোঝার জন্যে তার লেখা থেকে উদ্ধৃত করছি---
""ভয়ের সত্যিকার কারণ থেকে শুরু করে বিষয় বা ঘটনাগুলোকে সঠিকভাবে অনুভব করার পদ্ধতিতেও (মিসপারসেপশান) ভুল হতে পারে। ভুল হতে পারে সঠিক তথ্য না জানার কারণেও। পূর্ব অভিজ্ঞতাও অনেক সময় বড় ভূমিকা রাখে।
তবে এসবের বাইরেও কিছু কিছু বিষয় থাকে যেসবের কারণ আপাত পর্যবেক্ষণে বর্ণনা করা যায় না। বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়া এর অন্তর্ভুক্ত। আমাদের চারপাশের পরিবেশ এসবের সঠিক কারণ না খুঁজে পেলেও রসায়নে এসবের ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। দেখা গেছে, কোনো না কোনো ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষের রক্তে সেরোটিনন, এড্রেনালিন, থাইরয়েডসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তুর তারতম্য রয়েছে।
স্কুল ফোবিয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। সেটা টিচার, নির্দিষ্ট সাবজেক্ট, যাতায়াতসহ কোনো একটি বিষয়ের ওপর ভয় বা অপছন্দও হতে পারে। ডিলুশনের কারণে যে ভয় হয়, সেসবের কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থাৎ সাইকোটিক কোনো রোগের সরাসরি প্রভাবেই এ ধরনের ভয় কাজ করতে পারে।"" :#> :#> :#>
অত্যন্ত সুন্দর বিশ্লেষন। এবার ভাবুন ওই সব কবর আজাব ভিডিও দেখিয়ে কোমলমতি শিশুদের কি ভয়ংকর ক্ষতি করা হচ্ছে। সমাজে ধর্মশিক্ষা দিবেন আলেমগন। নামাজ রোজা বিশ্বাস অনেকসময় মনোবল যোগায়। বিশ্বাস একধরনের মানসিক ভারসাম্যের মধ্যে রাখে বিশ্বাসীকে । কিন্তু তাই বলে কবর আজাবের কল্পিত মিথ- ভিডিও--মৃত্যু আতঙ্ক এসব কাম্য নয়। এগুলো মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তোলে মানুষকে। আজাব ভয়- মৃত্যুভয় নিয়ে বাড়াবাড়ি ঘটলে অনেকে প্যানিক ডিস অর্ডারের রোগী তে পরিনত হন। এটা কখনওই কাম্য হতে পারে না।