কিরে বাবুইল্যা, উডোছ না অহনো? গরু লইয়া বন্দে (মাঠে) যাবি কহন? উট তাড়তাড়ি।
মায়ের এমন চিৎকারেই প্রতিদিন ঘুম ভাঙে বাবুলের। শীতের দিন। কিন্তু ভোরে গরু মাঠে না নিয়ে গেলে চলবে না।
গরম কাপড়ের অভাব। তিন চার বছরের পুরাতন যা আছে তাই গায়ে দিয়ে মাঠে যায় বাবুল। নয়টার দিকে বাড়ি ফিরে খেয়ে আবার চলে যায় মাঠে। সারাদিন বোরো ধানের চারা রোপন, গরু চরানোতে কেটে যায়।
পাশের বাড়ির কবির সকালে ৭ টায় ওঠে। নয়টায় খেয়ে স্কুলে যায়। ৩ টায় ফিরে খেয়ে গরম কাপড় পরে ঘোরাঘুরি করে।
বাবুল আর কবির। পাশাপাশি বাড়ি। কিন্তু তাদের দেখা খুব কমই হয়।
বাবুল। সারাদিন মাঠে কাজ করে। তার কাছে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। প্রতিদিন সে ঘুম থেকে উঠে কাজ নিয়ে, ঘুমায় কাজের চিন্তা নিয়ে। সে কেবল প্রতিদিনের চিন্তা করে। বেসুরো গলায় হিন্দি গান গায়, কাজ করে।
কবির। সকালে কিছু পড়াশুনা করে। স্কুলে যায়। বিকেলে ঘুরে।রাতে পড়ে, নিশ্চিন্তে ঘুমায়। ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখে। একটা লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যায়।
বাবুল। তার জীবন নিয়ে সে সুখীও নয়, দুঃখীও নয়। সে কলের পুতুল। কাজ করবে, খাবে। জীবনে দ্বিতীয় কোনো উদ্দেশ্য নেই। কবিরের জীবন নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই।
কবির। জীবনে তার বিরাট স্বপ্ন। তারই পথ ধরে সে হাটছে। সেখানে বাবুলের কোনো অস্তিত্ব নেই।
বাবুল ও কবির। পাশাপাশি থাকে। কিন্তু তাদের মধ্যে অসীম দূরত্ব।
২০ বছর পরে।
বাবুল ক্ষেতে হাল চাষ করছে। আলে বসা তার ছেলে সাবু। বাবুলের জানা নেই কবির কোথায় আছে। শুধু মনে আছে সে যখন খেয়ে মাঠে যেত তখন কবির ইসকুল না কোথায় বইটই নিয়ে গিয়ে বসে থাকতো।
কবির তার অফিসে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে। তার একমাত্র মেয়ে শহরের সবচেয়ে ভালো স্কুলে লেখাপড়া করছে। কবিরের মনে নেই বাবুল বলে কেউ তার প্রতিবেশী ছিলো।