আমরা স্বভাবতই বিশ্বাসী প্রাণী। যা শুনি তাই বিশ্বাস করি। তেমনই কিছু বিশ্বাস নিম্নরূপঃ
আমরা আমাদের মস্তিষ্কের ১০% ব্যবহার করিঃ
একটি পূর্ণ গাঁজাখুঁড়ি গল্প। মস্তিষ্ক প্রায় মোট শরীরের ২০% এর বেশি শক্তি ও অক্সিজেন খরচ করে। যদি কেবল ১০% আমরা ব্যবহার করি তো এই শক্তি কোথায় যায়? কারো মাথায় টিউমার হলে কোনো ডক্টর কি বলে কংগ্রাচুলেশন, আপনার টিউমারটা মস্তিষ্কের এমন জায়গায় হয়েছে যেটা আপনি ব্যবহার করেন না? কারো মাথায় গুলি ঢুকলে খুব কম সংখ্যকই বেঁচে থাকে। তাও যারা বেঁচে থাকে তাদের সিরিয়াস কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেই যায়। যদি ১০% ই আমরা ব্যবহার করে থাকি তো গুলিটা অব্যবহৃত মস্তিষ্ক অংশে প্রবেশের সম্ভাবনা বেশি। তা কেন বাস্তবে হয় না?
আসলে মস্তিষ্কের পুরোটাই আমরা ব্যবহার করি। তবে একসাথে নয়। মস্তিষ্কের বিশেষ অংশ দেহের বিশেষ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই আমরা যখন যে কাজ করি তখন মস্তিষ্কের ঐ অংশ ব্যবহার করি। অর্থাৎ পুরো একটি দিনের বিভিন্ন কাজে গড়ে আমরা মস্তিষ্কের প্রায় পুরোটাই ব্যবহার করি। কাজেই ১০% থিওরি একটি গর্দভ উপযোগী থিওরি।
চন্দ্রের একটি কালো পৃষ্ঠ আছেঃ
আমরা পৃথিবী থেকে সবসময়ই চাঁদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দেখি। আমাদের এই দৃশ্যমান পৃষ্ঠের অপর পৃষ্ঠ আপাতভাবে অন্ধকারে থাকলেও তা সব সময় অন্ধকারে থাকে না। চন্দ্রের নিজ অক্ষে আবর্তন বেগ পৃথিবীর চারপাশে পরিক্রমণের সমান। তাই আমরা সব সময় চাঁদের এক পৃষ্ঠাই দেখি। তবে আমরা যখন চাঁদ দেখি না (অমাবস্যা বা চন্দ্রগ্রহণের সময়) তখন ঐ অন্ধকার পৃষ্ঠই আলোকিত থাকে। চাঁদের এক পৃষ্ঠ চির অন্ধকার থাকতে হলে কোনো আহ্নিক বেগ বা নিজ অক্ষে আবর্তন থাকতে পারবে না। আর কোনো আবর্তনহীন কোন মহাকাশীয় বস্তু সম্বন্ধে আমি অন্তত কিছু জানি না। (আছে নাকি?)
সুতরাং চাঁদের একপৃষ্ঠে অন্ধকার ইমপসিবল।
পূর্ণচন্দ্র মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করেঃ
আরেকটি গাঁজাখুঁড়ি গল্প। এ বিষয়ে কিছু কুখ্যাত পানডিট লোগোকা কেহনাঃ পূর্ণচন্দ্রের প্রভাবে সাগরে তেজ কটাল বা পূর্ণ জোয়ার আসে। পূর্ণচন্দ্রের আকর্ষণে এটা হয়। (আঈ একমত)। মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় ৯০% পানি। অতএব চাঁদের আকর্ষণে সেখানেও জোয়ার আসতে বাধ্য ( এসব পানডিটদের নোবেল দেওয়া হচ্ছে না কেন সেটাই আমার প্রশ্ন।) আর মাথার ভিতর এই জোয়ারের প্রভাবেই মানুষ নানারকম গায়ের কানুনি কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। ইংল্যান্ডে নাকি ভরা পূর্ণিমায় অাইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যায় অপরাধ দমন করতে। (পূর্ণিমায় হয়ত তাদের মাথায়ই জোয়ারের প্রথম প্রভাব শুরু হয়।)
কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো গবেষণাই এটা প্রমাণ করতে পারে নি।
এক জায়গায় দুইবার বজ্রপাত হয় নাঃ
এ সম্পর্কে প্রবাদই আছে, ঠাটা এক জায়গায় দুইবার পড়ে না। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে এক জায়গায় দুইবার নয় বহুবার পড়ার সম্ভাবনাই বেশি যদি না আক্রান্ত স্থানটা ভেঙে পড়ে। (যেমন উঁচু নারকেল গাছে ঠাটা পড়ার পর যদি ভেঙে ছোট হয়ে না যায় তবে ঐ গাছেই আবার ঠাটা পড়ার চান্স বেশি।) বজ্রপাত সাধারণত চার্জিত মেঘের কারণে ঘটে থাকে। বাতাসের ঘর্ষণে মেঘ চার্জিত হয়ে যায়। চার্জের পরিমাণ বেড়ে গেলে মেঘের আশেপাশের বাতাসও চার্জিত হয়ে যায়। ফলে তখন বাতাস বিদ্যুৎ পরিবাহী হিসেবে কাজ করে। (সাধারণ বাতাস বিদ্যুৎ অপরিবাহী)। মেঘের চার্জের বিশালত্বের কারণে ভূপৃষ্ঠে মেঘের বিপরীত অাধানের চার্জের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই ঘটনাকে তড়িৎ আহিতকরণ বলে। ভূপৃষ্ঠের ঐ চার্জ ভূপৃষ্ঠের কোনো উঁচু বস্তুর আগায় জমা হয়। বাতাসের মধ্য দিয়ে মেঘের বিদ্যুৎ ঐ উঁচু বস্তুর (হতে পারে সেটা মাঠে দাড়িয়ে থাকা মানুষের মাথা) মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে চলে যায়। ঘটনাটা খুব তাড়াতাড়ি ঘটে তাই কারেন্টের শর্ট সার্কিটের মত আগুনের স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়। হঠাৎ তাপ পেয়ে চারপাশের বায়ু প্রসারিত হয়ে যায়। ফলে ঐ স্থানে বায়ুর চাপ অত্যন্ত কমে যায়। চারপাশের বায়ু তখন ঐ স্থানে ছুটে যায়। ঘটনাটা অত্যন্ত অল্প সময়ে সংঘটিত হয় বলে আমরা প্রচন্ড শব্দ শুনতে পাই।
এভাবে কোনো উঁচু স্থানে বারবার বজ্রপাত হতে পারে। (যতখন পর্যন্ত ঐ স্থান আশেপাশের স্থানের চেয়ে উঁচুতে আছে।)
উঁচু বিল্ডিং থেকে পড়ন্ত পয়সা মানুষকে মেরে ফেলতে পারেঃ
ধরি ২০০ মিটার উঁচু একটি বিল্ডিং থেকে একটি পয়সা নিচে পড়ছে। মাটিতে দাড়ানো এক ব্যক্তির মাথায় সেটি পড়লো। লোকটি সাথে সাথে মারা যাবে। তাই না?
একদম নয়। একটি পয়সা বড়জোড় ১০ গ্রাম হবে। ২০০ মিটার উঁচু থেকে পড়লে এর গতিশক্তি হবেঃ ৩১২ জুল। আর ৩১২ জুল প্রকৃতপক্ষে হবে না। কারণ বাতাসের বাধার কারণে পয়সাটির গতি কমে যাবে। মানলাম বাতাসের বাধা নেই। তবুও ৩১২ জুল শক্তির একটি পয়সা কোনো মানুষ দূরে থাক বিড়ালও মারতে পারবে না।
আঙ্গুল ফোটালে আর্থ্রাইটিস হয়ঃ
এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। আঙ্গুলের হাড়ের সন্ধিস্থলে সাইনোভিয়াল ফ্লুইড নামের এক প্রকার পিচ্ছিল রস থাকে যা হাড়ের ঘর্ষণ রোধ করে। আঙুল বাঁকালে এই ফ্লুইড বাবল তৈরি করে। হটাৎ চাপ দিলে বাবলটা ফেটে যায় এবং শব্দ হয়। এর সাথে আর্থ্রাইটিসের কোনো সম্পর্ক নেই।
খোদা হাফেজ। পরে কোনো দিন অন্য বিষয় নিয়ে হাজির হব ইনশা আল্লাহ্।
তথ্যসূত্রঃ ক্লিক মারেন। আরো জানতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০২