বাসে করে মিরপুরের দিকে যাচ্ছিলাম। মোটামুটি লম্বা জার্নি। তাই মাছি মারা কেরানির মত ঝিমুচ্ছিলাম। হঠাৎ একটু গবেষণায় মত্ত হলাম।
গবেষণা, আজকাল প্রচুর গবেষণা হয়। বিজ্ঞানীরা নিরন্তর গবেষণা করছে এবং করবে। তাই আমিও একটু গবেষণা নিয়ে ''গবেষণা'' করলাম।
আইন্নেরা হগ্গলেই জানেন যে গবেষণা শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ হচ্ছে গো+এষণা। ''গো'' শব্দটা হিন্দুদের কাছে প্রাচীনকাল থেকেই বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত শব্দ। তারা এই গোমাতাকে প্রাচিনকাল থেকেই খুবই সম্মান করে। আপ্পোনাদের কারোও অজানা নয় যে প্রাচিনকালে বঙ্গবাসীর গোলা ভরা ধানের সাথে গোয়াল ভরা গরুও ছিল। আর সেসব গরু অনায়াসেই প্রায় সময় হারিয়ে যেত। মানে অন্য গ্রামে বা অন্য কারো বাড়িতে চলে যেত। তখন সেই গরুকে খোঁজা যে কত মুস্কিল ছিল তা এখন আমরা কেবল অনুমান করতে পারি (অনেকে পারি ও না)। তখন আবার এখনকার মত এত ঘনঘন বাড়িঘর ছিলো না। তাই বাড়ি বাড়ি খোঁজাটা আরো বেশি ঝামেলা ছিলো। রাত বিরাতে নাওয়া খাওয়া ভুলে গরু খুঁজতে হত। গরু হারানো নিয়ে মজার গল্পটি নিশ্চই পড়েছেন।
একলোক গরু হারিয়ে ফেলে। ঠিক ফেলে নয়, হারিয়ে যায়। তো সারাদিন খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে বেচারা বাড়ি ফেরে। সারাদিন সে একফোঁটা পানিও খায়নি (দুঃখিত, এটা হবে পান করেনি।) তাই বাড়িতে এসেই ধপ করে বসে পরে। সামনে ছেলেকে দেখে বলে, একগ্লাস পানি দে না ভাই। তার স্ত্রী এটা শুনে বলে, চোখের মাথা খেয়েছো? ছেলেকে কেউ ভাই বলে? লোকটি তখন জবাব দেয় যে গরু হারালে এমনই হয় মা।
এতেই বোঝা যায় গরু হারানো কত ভয়ঙ্কর ছিলো। যাক সেসব। বলছিলাম গরু নিয়ে। এবার আসি ''এষণা''র দিকে। এষণা শব্দের অর্থ হচ্ছে খোঁজা, অনুসন্ধান করা ইত্যাদি। সুতরাং গো+এষণা অর্থ হচ্ছে গরু খোঁজা বা অনুসন্ধান।করা। আর প্রাচীন পণ্ডিতরা গরু এর বদলে গো শব্দটির ব্যাবহার করতো। (NB: ব্যবহার এবং ব্যাবহার - দুটি বানানই সঠিক।) সেই বাংলার মানুষের কষ্ট অনুধাবন (এটা গুরুচণ্ডালি। তবু সবাই ব্যবহার করে।) করে পণ্ডিতরা গরু খোঁজা অর্থাৎ গো+এষণা কে গবেষণায় রুপ দেয়। সেই থেকেই কোনকিছু বিশেষভাবে অনুসন্ধান করাকে গবেষণা বলে। অতএব দাঁড়ালো যে গরু থেকেই "গবেষণার উৎপত্তি।
গোবর, আমাদের অতি পরিচিত জিনিস। ছোটবেলায় ক্লাসে পড়া না পারলে কার মাথায় কতটুকু গোবর আছে তা শিক্ষক মহোদয় অত্যন্ত সুন্দর ভাবে নির্ণয় করে দিতেন। আমরা জানি গোবরের উৎপত্তি গো বা গরু থেকে। গোবর শব্দটি দুই মাত্রার (পদার্থবিজ্ঞানের মাত্রা নয়। কবিতার মাত্রা।)। গো এবং বর। এই বর সেই বর নয় যে বিয়ে করতে যায়। এটা সেই বর যা বিভিন্ন মুনি ঋষি এবং দেবতারা মানুষকে দিয়ে থাকে। আর গোবর হিন্দুদের কাছে পবিত্র জিনিস। গরু এটাকে "বর" বা আশির্বাদস্বরুপ দিয়ে থাকে। তাই কাউডাং → গো মাতা প্রদত্ত বর →"গোবর" হয়ে যায়।
অর্থাৎ "গবেষণা" এবং "গোবর" নিত্য ব্যবহার্য দুটি শব্দ এসেছে "গো" থেকে।
অর্থাৎ এদুটি গরু থেকে উৎপন্ন।
এই আজাইরা গবেষণার কারণে আমাকে সবাই বকাঝকা করে উৎসাহ দিবেন।
চাইলে এর উপর পিএইচডি ডিগ্রিও দিতে পারেন।
বানান সতর্কতা:
অনেকেই "ডিগ্রি" কে "ডিগ্রী " লিখে। যা বাংলা একাডেমি প্রদত্ত বাংলা বানানের নিয়মের পরিপন্থী।
নিয়ম#: সংস্কৃত ব্যতিত সকল দেশি ও বিদেশি শব্দে দীর্ঘ ঈ কার বর্জনীয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬