রাত দেড়টা বাজে ড্রয়িংরুমের ঘড়িটায় ।
আয়নায় উল্টো করে ঘড়ি দেখে যদিও সময়টা বুঝতে বেগ পেতে হয়েছে কাজলের ।
বেসিনের আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে সে , ক্লাস এইট থেকে গভীর রাতে চুল আচড়ায় সে , ভূত দেখার আশায় ! ভেবে এখন হাসিই পায় কাজলের ।
" আচ্ছা , 'ও' যদি এখন এভাবে দেখত আমায় ? রাগ করতো কি ? নাকি ... " ভাবতে ভাবতে লজ্জা পেয়ে যায় কাজল। আয়নার দিকে চোখ তুলে তাকাতেও লজ্জা করে তার , কে জানে , হয়তো চেয়ে দেখল পেছনে 'ও'-ই দাড়িয়ে , তাকিয়ে আছে কাজলের দিকে , ঠোটের কোণে সেই রহস্যময় শয়তানি হাসি ... ভাবতে ভাবতে বেণী পাকানো হয়ে যায় , লাইট নিভিয়ে দিয়ে চুপচাপ গিয়ে বিছানায় মায়ের পাশে শুয়ে পড়ে কাজল ।
অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে আগেই হেডফোনটা খুজে এনেছিল , মাথার কাছে রাখা মায়ের ফোনে হেডফোনটা লাগিয়ে গান শোনার পালা এবার । বাজছে " তোমাকে না লেখা চিঠিটা ডাকবাক্সের এক কোণে " , কাজলের খুব প্রিয় গান ... প্রতিবারই গানটা রীতিমত মুগ্ধ হয়ে শোনে সে , ক্লান্তি আসে না কখনো । যেমন ক্লান্তি আসে না 'ও' র কথা ভাবতে , 'ও'-কে ভাবতে , 'ও'-কে কল্পনা করতে । 'ও' ... মানে শুভ্র ... কাজলের শুভ্র । দেড় বছরের সম্পর্ক দুজনের । চোখের সামনে শুভ্রের চেহারাটা ভেসে উঠছে এখন , খুব স্পষ্ট ভাবে ... ভাগ্যিস , এভাবে শুভ্রকে দেখতে পায় , মন কিছুটা শান্ত হয় । শুভ্রের সাথে সামনাসামনি খুব বেশি সময় কাটানো হয়নি কাজলের .. যখনই শুভ্র সামনে থাকে , কাজলের খুব ইচ্ছে করে কেবলি শুভ্রের দিকে বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে , মন ভরে ওকে দেখতে । যদিও স্বাভাবিক নারীসুলভ লজ্জার কারণে কখনোই পারেনি এটা করতে । "আচ্ছা শুভ এখন কি করছে ? ঘুমাচ্ছে নাকি ? ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে দেখতে ভারি নিষ্পাপ লাগবে নিশ্চয়ই " ভাবতে থাকে কাজল ।" শুভ্র চুল সবসময়ই ছোট ছোট রাখে , শুভ্র ঘুমিয়ে থাকলে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দেবে কি কাজল ? যদি শুভ্রের ঘুম ভেংগে যায় ? ওর তো আবার পাতলা ঘুম .... " ইত্যাদি ইত্যাদি ।
এমনি হাজার ভাবনা সারাদিন শুভ্রকে নিয়ে.. অবসরে , কোনো কাজ করতে করতে , যেকোনো সময়ই শুভ্র দূরে থেকেও থেকে যায় কাজলের খুব কাছে । কাজলের অস্তিত্বের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে শুভ্র । কাজল চিরকালই একটা সংক্ষিপ্ত কিন্তু সুন্দর জীবন চেয়ে এসেছে , কিন্তু শুভ্র আসার পর অনেক দিন বাচতে ইচ্ছে করে তার , আলাদা করে সুন্দর জীবনের কামনা অপ্রয়োজনীয় । যে জীবনে শুভ্র আছে তা নি:সন্দেহে সুন্দর , স্বপ্নীল .. শুভ্রকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন কাজলের । সাদা-কালোর জন্জালে ঢাকা মিথ্যে কথার শহরে লাল-নীল সংসার হবে দুজনের , দাম্পত্য যেখানে একঘেয়ে হবে না কখনো । ছোট ছোট চাওয়া-পাওয়া , মান-অভিমান , হাসি-কান্না নিয়ে একসাথে বাচবে ওরা । একসময় দুজনের ছোট্ট ছানাটি আসবে , গুটি গুটি পা ফেলে সারা ঘরে দৌড়ে বেড়াবে সে ... দিন শেষে ছোট্ট পুতুলটার দুষ্টুমি দেখতে দেখতে হঠাত যখন শুভ্র আর কাজলের দৃষ্টি বিনিময় হবে , সেখানে থাকবে দুজনের জন্য অফুরান্ত ভালোবাসা ...
কিন্তু যদি .... যদি শুভ্র কখনোই কাজলের না হয় ? যদি সময়ের প্রয়োজনে বা পারিপার্শ্বিকতার কারণে দূরে সরে যেতে হয় দুজনকে ? কি করে থাকবে তখন কাজল শুভ্রকে ছেড়ে ? শুভ্রও কি পারবে কাজলকে ছাড়া সুখী হতে ? কাজলের প্রতি শুভ্রের শান্ত অথচ গভীর ভালোবাসা , খুব গভীর , তল খুজে পাওয়াই দায় সেখানে । ওদের সুখ তো পরষ্পরের সাথেই .. কি হবে যদি এত ভালোবাসা , এত স্বপ্ন ধুলায় লুটায় ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসেে ?
ভাবতে ভাবতে বিছানা ছেড়ে উঠে এসেছে কাজল নি:শব্দে । পড়ার ঘরের লাইট জ্বালিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বইটা বের করলো সে । বইয়ের ভিতর রাখা শুভ্রের ছবি । হাতে নিয়ে খানিক ক্ষণ চেয়ে থাকলো কাজল ছবিটার দিকে । চোখ থেকে নিরবে ছবিটার উপর গড়িয়ে পড়লো অশ্রুবিন্দু । ছবিটাকে বুকের কাছে চেপে ধরলো কাজল । অনবরত জল গড়াচ্ছে চোখ থেকে । তবু মন বলছে শুভ্র শুধুই তার , একান্তই তার । কক্ষনো আলাদা হতে হবে না দুজনকে , কক্ষনো না ...
চলবে .....
বি:দ্র: পুরো গল্পের অর্ধেক যে , যার কথা না জানলে গল্পটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় ,
তার বয়ান জানতে নিম্নের লিংকে ক্লিক করুন ।
শুভ্র আর তার অপ্রকাশিত জীবন( প্রথম পর্ব): Click This Link