রায়েদের ফোনে ৯ম বারের মত চেষ্টা করে সংযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফোনটা মোটামুটি ছুড়েই ফেললো মিলি। অনেক বদলে গেছে রায়েদ। বিয়ের কেবল ৫ বছরের মাথায় কেউ কি এতটা বদলাতে পারে? ভেবে পায় না মিলি। আগে রায়েদ এমন ছিল না। ৪ বছরের প্রেমে কিংবা বিয়ের পর ও, রায়েদ ন্যাকা ন্যাকা স্বামী না হলেও এতটা কেয়ারলেস ছিল না, অন্তত মিলির প্রতি তো নয় ই। একবার ফোন দেখলেও কলব্যাক করত আর সে কি না এখন নয়বার ফোন বেজে যাওয়ার পর ও ধরছে না! একটু ভয় ই পেয়ে গেলো মিলি। ঠিক আছে তো রায়েদ? এমন সময় সোফার উপরে পড়ে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। ডিসপ্লে তে রায়েদের নাম। তড়িঘড়ি করে ফোন ধরলো মিলি। ওপাশ থেকে রায়েদের অস্বাভাবিক গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো।
- হুম কি হয়েছে?
: এতবার ফোন দিলাম, ধরলে না যে?
- অদ্ভুত তো! অফিসে কি আমায় চাকরি দিয়েছে তোমার ফোন ধরার জন্য নাকি তুমি ভাবো যে তোমার ফোন ধরার জন্য আমি অফিসে কাজ কাম ছাড়া বসে থাকি!
: না তা তো বলছি না।আমি তো জাস্ট...
- শোনো এসব ইউজলেস কথার জন্য আমার কাছে সময় নেই। কেন ফোন করেছ তাড়াতাড়ি বলো।
: বলছিলাম কি, আজ দুপুরে চলো না এক সাথে লাঞ্চ করি কোনো একটা রেস্তোরায়?
- ধ্যাত! কোনো মানে হয় এসবের! আসলে বাসায় বসে বসে আরাম করো তো, চাকরির ঝামেলার কি বুঝবে! রাখো ফোন!
সাথে সাথে ওপাশ থেকে ফোন রেখে দিলো রায়েদ। মিলি বরাবরই নরম মনের মেয়ে। স্বামীর এসব কড়া কড়া কথায় সত্যি দু চোখ ভরে জল এলো তার। এমন কি বেশি ও চেয়ে ফেলেছে নিজের বিবাহবার্ষিকীতে যে এমন কথাও শুনতে হবে! রায়েদেরই তো এসব বেশি প্রিয়। একটু ধাতস্থ হতেই রায়েদের এমন অদ্ভুত ব্যাবহারের কারণ খুজে বের করতে চেষ্টা করলোমিলি। বিভিন্ন ভংগিতে আয়নায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজেকে দেখে কোনো খুত পেলো না
। কই, সে তো আগের মতই আছে, আকর্ষণ কমে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যত্নও কম করে না মিলি রায়েদের।। তবে কি....
গত সপ্তাহে ডাক্তারের রিপোর্ট হাতে পেলো মিলি আর রায়েদ। স্পষ্ট ভাবে রিপোর্ট এ যা লেখা তা যেকোনো মেয়েকে অসম্পূর্ণ করতে যথেষ্ট। রিপোর্ট বলে ইনফারটিলিটি আছে মিলির। এ জীবনে সন্তানসুখ পাওয়া হবে না তার। এই নিয়ে শাশুড়ি বেশ কয়েক কথা শোনান যার সারমর্ম এই যে মিলি ই রায়েদের জীবন টা ধ্বংস করছে। তবে কি রায়েদ ও তাই ভাবছে বাবা হতে না পেরে?
বিকেলে রায়েদ এলো অফিস থেকে। মিলি অবাক হয়ে দেখলো রায়েদের দেয়া শাড়িটা পরা সত্বেও রায়েদ এক বারও তাকালো না মিলির দিকে। একবার ও বললো না তোমায় কিন্তু নীলে খুব সুন্দর লাগে মিলি। সে বাড়িতে ঢুকেই স্টাডিরুমে চলে গেল হন্তদন্ত হয়ে। চা বানাতে গেল যথারীতি মিলি স্বামীর জন্য। চা বানিয়ে স্টাডিরুমের সামনে যেতেই মিলি রায়েদের ফোনালাপ শুনতে পেলো।
- হ্যা হ্যা আসাদ সাহেব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার ডিভোর্স নোটিশ চাই। আর এসব সহ্য করা যাচ্ছে না।
এ কি শুনলাম!! নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না মিলি। ডিভোর্স দেবে ওকে? তাও রায়েদ!! আর এক মুহূর্ত সেখানে দাড়াল না ও। এখন সত্যি মাথা ঠান্ডা করে চিন্তা করা দরকার!!! বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার। নিরিবিলি জায়গায় বসে ভাবতে লাগল ও। কত স্মৃতি এই রায়েদের সাথে! এই শহীদ মিনারেই কত ওরা স্বপ্নময় আগামীর কল্পনায় বিভোর হয়েছে, কিংবা হারিয়ে গেছে পরষ্পরের চোখে। মনে পড়ে সেবার যখন মিলির টাইফয়েড হলো, রায়েদ নিজে ৫ রাত নির্ঘুম থেকে স্পঞ্জ করে দিয়েছে ওকে। এত ভালবাসা হঠাত ই.... নিজের সংগে যুদ্ধ করে শেষে সিদ্ধান্ত নিলো মিলি, রায়েদ কে আজো ভালবাসে ও, তাই রায়েদের আশা পূর্ণ করেই রায়েদকে ও আজীবনের মত মুক্ত করে দেবে।
বাড়ি পৌছাতেই চোখে পড়ল দরজার সামনের নেমপ্লেট
" মিলি এন্ড রায়েদ নেওয়াজ " ... নেমপ্লেট যেন ওকেই বিদ্রুপ করছে। দরজা খুলতেই......
ঘর জুড়ে অগনিত মোমবাতি জ্বলছে। মিলির একবার মনে হল যেন অন্য কারোর বাড়ি। কে করলো এতসব? যাক প্রাথমিক উত্তেজনা কাটতেই মোমবাতি দিয়ে তৈরি হার্ট আকৃতির মধ্যে রাখা ব্ল্যাক ফরেস্ট কেকের পাশে একটা চিঠি পেলো মিলি।
" শুভ ৬ষ্ঠ বিবাহবার্ষিকী।
প্রথমত দুপুরে লাঞ্চ প্রত্যাখ্যান করার জন্য সরি।
দ্বিতীয়ত বানিয়ে বানিয়ে ডিভোর্স দেয়ার কথা বলার জন্য সরি।
তারপর আশা করি এতগুলো মোমবাতি একা হাতে জ্বালানোর জন্য আমি একটা থ্যাংকু পাব( তুমি তো জানই আমি আগুন ভয় পাই!!!)
বি.দ্র. আমার যতদিন তুমি আছ ততদিন বাচ্চা লাগবে না। একটা সামলাতেই নাকানি চোবানি খেয়ে যাচ্ছি, আবার আরেকটা!!! "
পড়তে পড়তে কেদেই চলেছে মিলি! সব তাহলে সাজানো!!! এমন সময় দরজায় দাড়িয়ে রায়েদ বললো " কি, কেমন দিলাম বলো!! " স্বামী কে এক নজর দেখেই ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো মিলি, সংগে কান্না তো চলছেই!!! আর রায়েদের অবস্থা! সে তার এই " বড় বাচ্চাটিকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ততক্ষণে!!!
(পুনশ্চ : জীবনটা অনেক ছোট । আসুন না , অপূর্ণতা ভুলে , দু;সহ স্মৃতি মুছে ভালবেসে ভালবাসি ??? )