অভিযোগ বক্সের আইডিয়াটা শিপনের।বাসর ঘরে সে তার বউয়ের কাছে যে কয়টা প্রস্তাব রাখে এর মধ্যে এটা অন্যতম।নিয়ম হচ্ছে শুধু শুধু রাগারাগি করা যাবে না।একজন রাগলে আরেকজন চুপ থাকবে।এরপর বিস্তারিত লিখে বক্সে রেখে দিবে।যার মেজাজ খারাপ হয়েছে সে পরদিন চিঠি দিবে এবং সরি বলবে।এই আইডিয়াটা শুনে নতুন বউ শিমলা বলেছিল ওয়াও! শিপন তার স্ত্রীর চোখে একটা তৃপ্তি দেখতে পেল।এই তৃপ্তির মানে খুব পরিষ্কার।আমাদের দেশের বউয়েরা সব সময় একটু কম সুযোগ পায়।সুযোগ বলতে কথা বলার সুযোগ।শিপন বিশ্বাস করে যাবতীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব কথা বলায়।চুপ করে থাকাটা কোন সমাধান নিয়ে আসে না।উল্টো ঝামেয়া পাকায়।এই চুপ করে থাকার অনেক সময় তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ ঘটে।কারণ মানুষের স্বভাব হচ্ছে কথা বলা। প্রচন্ড রকম ইন্ট্রোভারট মেয়েটাও একজন মানুষ খুঁজে বেড়ায় তার বলতে না পারা কথা গুলো বলার জন্য।মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না এই আপ্তবাক্য আসলে সবসময় সত্য না।
বিয়ের পর গতকাল রাতে প্রথম শিপন আর শিমলার মধ্যে ঝগড়া হলো।ঝগড়ার বিষয় শিমলার ভাষায় শিপনের কথিত সাবেক প্রেমিকা।আসলে প্রেমিকা নাকি সেটা জানা যায় নি।তবে অভিযোগ বক্সে শিপনের চিঠিটা পড়লে বুঝা যেতে পারে কিছুটা। চিঠিটা হুবহু তুলে ধরা হলো।
শিমলা,
এটা তোমাকে লিখা আমার প্রথম চিঠি।যদিও অভিযোগ বক্সে শুধু অভিযোগ পোস্ট করার নিয়ম। কিন্তু অভিযোগ বক্সে আমি চিঠি লিখছি। চিঠির সাথে আরেকটা কিছু আছে কিন্তু সেটা বক্সের ভিতর রাখা ঠিক হবে না। সেটা কোথায় আছে জানতে চোখ রাখুন শেষের দিকের প্যারায়। অনেকটা বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন পর্দায় এই টাইপ। হা হা হা।
গতরাতে আমার যে মেয়েকে নিয়ে তোমার আপত্তি সে আমার বোন।আমার আপন কোন বোন না থাকলেও আমি তাকেই বোন মনে করি।পৃথিবীতে এই মেয়েটির আপন মানুষের পরিমাণ খুব কম।আর যাদের আপন মানুষের পরিমাণ কম তাদের আপন মানুষ তৈরি করার সাহস ও কম।মেয়েটা বিবাহিত।তার স্বামী আছে। কিন্তু এদেশের বেশিরভাগ স্বামীই স্বামী শব্দের প্রতিশব্দ মনে করে প্রভু শব্দটাকে। এতে আমি তাদের দোষ দেখি না। দোষ বাংলা একাডেমীর ।স্বামী শব্দের যে কয়টা প্রতিশব্দ আছে তার মধ্যে একটা হচ্ছে প্রভু। কি অদ্ভুদ দেখো ! বাকি গুলো নিজে নিজে খুঁজে জেনে নিবে ।কারণ তুমি জানো তোমার স্বামী অলস প্রকৃতির মানুষ।
মিতুর স্বামী হচ্ছে তেমন প্রভু টাইপ স্বামী। সে সব সময় প্রভুত্ব ফলাতে চায় এবং ফলায় । মিতুর এতে কিছু করার থাকে না । মিতুর না বলে মিতুদের বললে ভালো শোনাবে।কারণ এমন হাজারো মিতু আছে এ দেশে । মিতুর সাথে আমার পরিচয় আমার চেম্বারে। একদিন নিজে নিজে আসে ডাক্তার দেখাতে। আমার কাছে আসার কারণ সে আমার ছোট ভাইয়ের বান্ধবী । কেন জানি এরপর মিতুর সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। তবে এটুকু বলতে পারি আমরা কখনোই ভাই বোনের পবিত্র সম্পর্কের বাহিরে কিছু ছিলাম না। আমি প্রমাণ হাজির করতে পারি কিন্তু সেটা আমি করব না ।কারণ প্রমাণ মিথ্যা হতে পারে কিন্তু বিশ্বাস কখনো মিথ্যা হয় না । আমার উপর বিশ্বাস রাখলে আমি খুশি হবো ।
তোমার ভুল বুঝাবুঝির কারণ আমি বুঝতে পেরেছি। এসব কথা আমি হয়তো মুখে বলতে পারতাম।কিন্তু সব কথা মুখে বললে অভিযোগ বক্সটা ঝুলালাম কেন ? হা হা ।
শিমলা, লিখার শুরুতে বলেছিলাম অভিযোগ বক্সে কিভাবে আমি চিঠি রাখব কিন্তু অভিযোগ বক্সে অভিযোগ রাখার নিয়মে আমার একটা অভিযোগ আছে। অভিযোগটা এখন বলব না । আচ্ছা বলেই ফেলি । এই বক্সের নাম অভিযোগ বক্স থাকবে কেন? এটার নাম ভালোবাসার বক্স হতে পারত।তুমি সেটা আমাকে মনে করিয়ে দাও নি । এটা তোমার প্রতি আমার অভিযোগ।
শেষ প্যারাঃ তোমার বালিশের নীচে একটা বকুল ফুল আছে । বেশি রাখি নি ।তাহলে ফাঁস হয়ে যাবে গন্ধটা।একটা দিলাম যাতে তুমি চিঠি পড়ে খুঁজে নিতে হয় ।
ইতি,
শিপন।
চিঠি দেয়ার কথা ছিল শিমলার।কিন্তু শিমলা চিঠির বক্সে আগেই ফেলে রাখা একটা চিঠি দেখে তাঁর হাতের চিঠিটা লুকিয়ে ফেলল । শিমলা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করল । চিঠিটা পড়া শেষে শিমলা কান্না শুরু করে দিলো। তারপর বালিশের নীচের বকুল ফুলটা হাতে নিলো । শিমলা হাতের চিঠিটা একবার দেখল তারপর কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলে দিলো সেটা ।
শিপন ড্রইং রুমের সোফায় বসে আছে। ঝগড়া হলে স্বামী স্ত্রীর রুমে বসে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। শিমলা এসে বলল,
-এটা কি ?
-কেন ।চিনো না ?
-বকুল ফুল ?
-না জবা ফুল ।
-তুমি এত ফকিন্নি কেন ?একটা বকুলের মালা তো ১০ টাকা। আর তুমি কিনা মাত্র ১ টা ফুল এনেছো ?
-একটা মালার দাম ১০ টাকা একটা বকুলের দাম কত হিসাব করো ।ঐকিক নিয়মে কর ।
-তুমি জানো না আমি ম্যাথে দুর্বল?
-তুমি যেটায় সবল সেটাতেও তো দেখি তুমি দুর্বল। হুহ।
-ভুল হয়ে গেছে ।সরি তো।
-সরি লাগবে না ।চলো ।
-কোথায় ?
-নার্সারিতে যাব।
-সেখানে কেন!
-একটা বকুল বৃক্ষ কিনে আনব ।আমার বউয়ের যাতে বকুলের অভাব না হয়।
-লাগবে না ।আমার একটা বকুল হলেই চলবে।তুমি খুঁজে খুঁজে একটা আনবে এটার দাম অনেক বেশি ।
"অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস শুরু করিতে লাগিল । "
পুনশ্চ ১ঃ অভিযোগ বক্সের নতুন নামকরণ করা হয়েছে।নতুন নাম "ভালোবাসার বক্স"।
পুনশ্চ ২ঃ ভালোবাসার বক্স নাম দেয়ার পর একটা অদ্ভুদ জিনিস দেখা যাচ্ছে।প্রতি শুক্রবারে কেউ একজন একটা চিঠি লিখে রাখে। উত্তর জমা হয় পরেরদিনেই । কোন শুক্রবারে বকুল ফুল থাকে বালিশের নীচে ,কোন শুক্রবারে থাকে গোলাপ ফুল । শিপনের প্রিয় ফুল গোলাপ ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১২