ড. ইউনুসের ভাষণটি শুনে মনে হয়েছে, যিনি শেখ হাসিনার ভাষণ ড্রাফ্ট করে দিতেন তিনিই ড. ইউনূসের ভাষণ ড্রাফ্ট দিয়েছেন।
তাঁর ভাষণ শুণে মনে হয়েছে তিনি যেন একটি রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছেন। তার ভাষণে দেশ পরিচালনার বিভিন্ন নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং পূর্ববর্তী সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে যেভাবে আলোচনা করা হয়েছে, তা একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রধান উপদেষ্টার চেয়ে একজন রাজনৈতিক নেতা বা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মতো শোনায়।
বিশেষত, নতুন ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা দেওয়া রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর মতো মনে হয়েছে। এই ধরনের বক্তব্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেওয়া একটি বক্তব্যের মতো মনে হয়েছে।
আমার মতে তাঁর ভাষণের ভলো দিক :
1. শহীদ ও বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা: ভাষণের শুরুতেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ এবং তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি একটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে।
2. জাতীয় উন্নয়নে ফোকাস: ভাষণে অর্থনীতি, তৈরি পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প এবং পুনর্বাসন কার্যক্রমের উন্নতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, যা জাতীয় উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক।
3. বন্যা মোকাবিলা ও পুনর্বাসন: বন্যা দুর্গত মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ এবং পুনর্বাসনের জন্য সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা সংকটময় সময়ে সরকারের কার্যক্রমকে তুলে ধরে।
4. প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি: নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের পরিকল্পনা একটি উন্নত ও সুশাসিত দেশ গড়ার লক্ষ্যের প্রতিফলন।
5. পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ: প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ ও পরিবেশের দূষণ কমানোর উদ্যোগগুলো তরুণদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিল রেখে পরিবেশ সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ।
আমার মতে যা মন্দ দিক :
1. একপাক্ষিক সমালোচনা: ভাষণের শুরু দিকটা শুনে মনে হয়েছে শেখ হাসিনা যেভাবে ড. ইউনুসকে অন্যায় ভাবে হেনস্তা করেছিলেন ঠিক তার প্রতিশোধন নেওয়ার মিশনে মি. ইউনূস নেমেছেন এবং জনগণ তাকে সেই ম্যান্ডেট দিয়েছে।
2. ব্যক্তিগত আক্রমণ: ভাষণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে, যা কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে চলে গেছে। অবশ্যই এটা তাঁর হাসিনার প্রতি দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রকাশ বই আর কিছু নয়।
3. জনগণের বিভ্রান্তি: ভাষণটি কিছু ক্ষেত্রে অত্যন্ত তীব্র এবং বিদ্বেষপূর্ণ হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে, যা জাতীয় ঐক্যের পথে বাধা হতে পারে।
ড. ইউনুসের ভাষণটি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারকে তুলে ধরলেও, সরকারের প্রতি একতরফা সমালোচনা এবং অতিরঞ্জিত অভিযোগগুলির জন্য সমালোচনামূলক হয়ে উঠেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৮