somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শিশির খান ১৪
সময় পাইলে ব্লগ লেখাটা এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। ব্যাস্ততার ফাকে যারা আমার ব্লগ দেখেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনাদের অনুপ্রেরণা থাকলে নিশ্চই সামনের দিন গুলোতে লেখা চালিয়ে যাবো।

আরাফাতের ড্রাগ তত্ত্ব বিশ্লেষন

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আওয়ামীলীগের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন আরাফাত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত রংপুরের শহীদ আবু সাঈদের বিষয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে বলে “ আন্দোলনকারীদের অনেকে ড্রাগড ছিল। তাদের ড্রাগ করা হয়েছে, যেন তারা বুক পেতে পুলিশের সামনে চলে আসতে পারে।” বন্ধু কোটায় নির্বাচিত হলেও সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বেফাস মন্তব্যের করার মতো বেকুব কেটাগরির রাজনীতিবিদ না ।ধূর্ত , ফন্দিবাজ চরিত্রের আরাফাত এতো কিছু থাকতে ড্রাগড হওয়ার কথা কেন বললো নিশ্চই গণহত্যার সাথে ড্রাগ এর কোনো যোগসূত্র রয়েছে।

বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে ,আহত অগণিত সঠিক সংখ্যা কেউ বলতে পারবে না । গুলিবিদ্ধ অনেকের হাত পা কেটে ফেলা হয়েছে শত শত মানুষ অন্ধ হয়ে গেছে ।এখনো হাসপাতালের মর্গে অনেক বেওয়ারিশ লাশ পড়ে আছে । বিভিন্ন কবরস্থানে গণ কবর এর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে ।আহত নিহতের তালিকা দেখলে একটা বিষয় স্পষ্ট যে এই আন্দোলনে সকল শ্রেণীর ,সকল ধর্মের ,সকল পেশার ,সকল বয়সের মানুষ শরীক হয়েছে ।এই আন্দোলনে ইংলিশ মিডিয়াম এর ছাত্রীর পাশে মাদ্রাসার ছাত্র কে দেখা গেছে , মুসলিম জনগোষ্ঠীর পাশে সংখ্যালঘুদের দেখা গেছে , ওয়ার্কশপ এর মিস্ত্রির সাথে কারখানার মালিককে দেখা গেছে , ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রের পাশে চল্লিশ বছরের যুবককে দেখা গেছে এমনকি আন্দোলনের সময় মিছিলের সম্মুখ সারিতে প্রচুর মহিলাদের নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। আন্দোলনের এমন প্যাটার্ন বাংলাদেশে আগে কেউ কখনো দেখে নাই ।

আরাফাতের তত্ত্ব অনুযায়ী এই বিপুল জনগোষ্ঠী কে কি ড্রাগ করা হয়েছে ? একটা কথা আছে "ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি তো কলা খাইনি" আরাফাত এর এখন সেই অবস্থা ।আরাফাত নিজেই নিজের কথার জলে ধরা খাইছে ।গণহত্যার অন্যতম কারণ যে ড্রাগ সেটা আরাফাত ঠিকই বলেছে তবে যারা আন্দোলন করেছে তাদেরকে ড্রাগ করা হয় নাই বরং যারা আন্দোলকারীদের উপর নিপিড়ন চালিয়েছে তাদেরকে ড্রাগ করা হয়েছে । ধূর্ত আরাফাত বিষয়টি উলটো করে বলেছে ।

শুরু থেকেই বিষয়টা আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিলো পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিজের দেশের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের মাথায় ও বুকে এইম করে গুলি চালাচ্ছে এটা কি করে সম্ভব।তারা খুব ভালো করেই জানতো চাইনিজ রাইফেল ৭.৬২ দিয়ে চালানো গুলিতে বাঁচার সম্ভবনা ক্ষীণ ।এক জন সুস্থ মানুষ কখনো নিজের দেশের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে এভাবে গুলি করে মারতে পরে না ।যারা বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বাহিনীর সদস্য (এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট ) তারাও নিরস্ত্র দাগী আসামিকে গুলি করার আগে দুই বার ভাবে অথচ এই পুলিশ সদস্যদের মাঝে বিন্দু মাত্র জড়তা ছিলো না । এখন হিসাব মিলে যাচ্ছে যেহেতু পুলিশ সদস্যরা মাদকাসক্ত ছিলো তাই তারা একাধারছে গুলি করছে কে পুলিশের সন্তান ,কে ডাক্তার ,কে গৃহিণী ,কে ছাত্র ,কে দোকানদার কিছুই তারা বলতে পারে না।

আরাফাতের মতো মনগড়া তত্ত্ব দিলে তো হবে না কিছু তথ্য দিচ্ছি হিসাব মিলিয়ে নেন ২০১৯ সালের শেষের দিকে মাদকবিরোধী শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার সময় রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ও রেললাইন এলাকা থেকে মাদক চক্রের ২১ কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয় ।রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা সংশ্লিষ্ট থানার কিছু পুলিশ সদস্যের নাম উল্লেখ করে যারা মাদক কারবারের সাথে জড়িত। ডিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে মাদক কারবারিদের সহযোগিতাকারী হিসেবে আরো এক জন শিল্পাঞ্চল থানার সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) এর নাম চলে আসে। সে দিন সভায় উপস্থিত ৫০ টি থানার ওসিদের মাদকের বিষয়ে সতর্ক করা হয় ।

মাদকবিরোধী শুদ্ধি অভিযান চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন সূত্র থেকেও মাদকাসক্ত পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে তথ্য আসতে থাকে ।তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বিষয়টা স্পর্শকাতর হওয়াতে গোপনে অনুসন্ধান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য থেকে উনি নিশ্চিত হন যে পুলিশ লাইনের অনেক সদস্য ইতিমধ্যে মাদকসেবী হয়ে গেছে ।এমনকি মাদকসেবী পুলিশ সদস্যরা যে তাদের ব্যাচমেট ও রুমমেটদের মাদক সেবন করার জন্য চাপাচাপি করে সেটাও তিনি জানতে পারেন ।পুলিশ লাইন ও ব্যারাকে যে সব মাদকসেবী পুলিশ সদস্য ছিলো তাদের দিনে তিনটি করে ইয়াবা লাগতো এতে তাদের খরচ হতো ১ হাজার টাকা, সে হিসাবে মাসে খরচ হতো ৩০ হাজার টাকা। অথচ সে সময় একজন পুলিশ কনস্টেবল বেতন ছিল ১৭ হাজার টাকা। মাদকের খরচ চালানোর জন্য তারা মাদক ব্যবসা সাথে জড়িয়ে যায় ।তাদের প্রথম টার্গেট কাস্টমার ছিলো পুলিশ লাইনের ও ব্যারাকের অন্যান্য সদস্যরা যারা এখনো মাদক সেবন শুরু করে নাই ।

পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে তৎকালীন আইজিপি বেনজীর আহমেদ ঘরকে আগাছা মুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে তে ডোপ টেস্ট (মাদকাসক্ত চিহ্নিতের পরীক্ষা) শুরু করে। কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদের পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্টের আওতায় নেওয়া হয় কিন্তু বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে ওপরের পদের কর্মকর্তাদের ডোপ টেস্টের মুখোমুখি হতে হয় নি ।এ নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে অসন্তোষের সৃষ্টি হয় এই দ্বৈতনীতির কারণে ডোপ টেস্টের কার্যক্রম একটা সময় মুখ থুবড়ে পরে।

সর্ব প্রথম ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) ২০২০ সালে ডোপ টেস্ট শুরু করে। প্রথম বছর কাজে গতি ছিল সে সময় প্রায় ১০০ জন পুলিশ সদস্য ডোপ টেস্টে পজিটিভি হন।পরের আঠারো মাস কাজ ছিলো ধীর গতির সে সময় মাত্র ২০ জন পুলিশ সদস্য ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন ।যেহেতু ওপরের পদের কর্মকর্তারা ডোপ টেস্টে আগ্রহী না তাই ডিএমপি তে ডোপ টেস্ট কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ডোপ টেস্টে পজিটিভ এই ১২০ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৮৪ জনই কনস্টেবল। বাকিদের মধ্যে সাত জন নায়েক, সাত জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), ১১ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট ও একজন পুলিশ পরিদর্শক আছেন। ইতিমধ্যে ১১১ জনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তবে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই একজন মৃত্যুবরণ করেছেন আরেক জন অবসরে চলে গেছেন ।

সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রয়ারিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) থানাভিত্তিক মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা তৈরি করে , তাতেও পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম ছিল। তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার কদমতলী ও শ্যামপুর থানার পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের কেউ মাদক বিক্রির জায়গা (স্পট) থেকে টাকা তোলেন। কেউ কেউ তথ্যদাতার (সোর্স) এর মাধ্যমে মাদক ব্যাবসা চালান । কেউ সরাসরি নিজেই মাদক ব্যবসা চালান ।এমন তথ্য উঠে আসার পরও ডিএমপি থেকে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নিতে দেখা যায় নাই ।দুই এক জন সোর্স কে গ্রেফতার করে দায় সেরেছে প্রশাসন ।

কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ যেন না বেরিয়ে আসে সেই ভয়ে ডি এম পি ডোপ টেস্ট (মাদকাসক্ত চিহ্নিতের পরীক্ষা) কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। প্রশাসনের এই নমনীয় ভাবের কারণে মাদকসেবী পুলিশ সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে । ফলাফল দ্বিগুন গতিতে পুলিশ লাইনের সদস্যরা মাদকাসক্ত হতে থাকে । ব্যারাকে ও থানায় যে এমন পরিস্থিতি সেটা পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহল ও আওয়ামীলীগ সরকার জানতো ।তারা টিনের সানগ্লাস পরে দেখেও না দেখার ভান করেছে কারণ তারা জানতো সুস্থ পুলিশের দিয়ে দলীয় কাজ করানো কঠিন নেশাগ্রস্থ পুলিশ দিয়ে দলীয় কাজ করানো সহজ ।তখন নেশা গ্রস্থ পুলিশ সদস্য দের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিলে আজকে এমন দিন দেখতে হতো না ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৮
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের উপর আল-জাজিরা-র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২৮


ধীরে ধীরে অনেক চোর-বাটপারদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তবে আল জাজিরা রীতিমত কুমির খুঁজে পেয়েছে। তাদের প্রতিবেদনটি দেখার আমন্ত্রন থাকছে। এরা নাকি দেশ-প্রেমিক, ৭১-এর চেতনাধারী, তাই তেনাদের চেতনার গরমে টেকা যাচ্ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরাফাতের ড্রাগ তত্ত্ব বিশ্লেষন

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৭



আওয়ামীলীগের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন আরাফাত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত রংপুরের শহীদ আবু সাঈদের বিষয়ে মন্তব্য করতে যেয়ে বলে “ আন্দোলনকারীদের অনেকে ড্রাগড ছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেশীর ভাগ হিন্দু আওয়ামী লীগে ভোট দেয় বা সমর্থন করে – এই কথাটা কতটা সত্য

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৫৯

ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কে কাকে ভোট দিচ্ছে এটা জানার কোন উপায় নেই। কারণ প্রকাশ্যে ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ফেলা হয় না। যদিও আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্ন সময়ে অনেক কেন্দ্রে বাধ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড: ইউনুস দেশের বড় অংশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভোর ৫:২০



ড: ইউনুসের ১ম বদনাম হলো, তিনি 'সুদখোর'; ধর্মীয় কোন লোকজন ইহা পছন্দ করে না; যারা উনার সংস্হা থেকে ঋণ নিয়েছে, তারাও উনাকে সুদের কারণে পছন্দ করে না; ধর্মীয়দের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগে তো পানি দিতনা মারার আগে। এখন ভাত পানি খাওয়াইয়া মারে।

লিখেছেন আহসানের ব্লগ, ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪


আগে তো পানি দিতনা শেষ নিস্বাশের আগে। এখন ভাত পানি খাওয়াইয়া মারে। আর শামীম মোল্লা ভাইয়ের কপালে অবশ্য অত্যাচার ছাড়া কিছু জোটে নাই। “ভাই আমারে আর মাইরেন না বলে অনুনয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×