somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাত্যহিকী-৯

২০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একঃ

মোবাইল সাইলেন্ট করে গত রাত সাড়ে দশটায় ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেও আর মোবাইল দেখিনি। অফিসে এসে মোবাইল খুলে দেখি কহিনুর সাতবার কল করেছে গত রাতে। সাথে সাথে কল ব্যাক করলামঃ
-হ্যালো, কাকু
-হ্যাঁ কহিনুর, তুই কল করছিলি দেখলাম গতকাল, কি ব্যাপার বলতো?
- কাকু, আমিতো আজ তিন মাস যাবৎ গ্রামে।
- বলিস কি? আমিতো জানি তুই সাভারে থাকিস।
- হয় কাকু থাকতাম। অক্টোবর মাসে চইলা আসছি গ্রামে। এখন মিন্টু মামাদের বাড়িত আছি।
- কেন? কোন সমস্যা?
কহিনুর একসময় আমার মায়ের দেখাশোনা করতো। মায়ের আর্থ্রাইটিস আছে। চলা ফেরায় সমস্যা। কহিনুর বাসার সব কাজকর্ম করে দিয়ে যেতো। তিন চার বছর আগে তার মামা সাভারে এনে একটা গার্মেন্টেসে সুইং অপরেটরের চাকরি দিসিলো।
কহিনুরের মা নেই, বাবা আছে তাও পঙ্গু। কোন কাজকর্ম করতে পারেনা। কহিনুর বর্তমানে স্বামী পরিত্যাক্তা। ছয় বছরের একটা মেয়েও আছে। অক্টোবরে তার ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামে ফিরে গেছে। কিন্তু থাকবে কোথায়। আমাকে কল করে বলেছে আমাদের পুকুরের উত্তর পাড়ে একটা ঝুপড়ি ঘর তুলে থাকতে চায়। মায়ের দেখা শোনাও করবে। আমি ছোট ভাইকে ঘটনাটা জানাইছি। ছোট ভাই বলছে উত্তর পাশের জায়গাতো আমার। পূব পাশে তোমার জায়গা সেখানে ঘর তুলে থাকতে বলো।

দুইঃ

ঘড়িতে দুপুর আড়াইটা বাজে। বাসা থেকে আনা লাঞ্চ বক্সটা খুলে টেবিলে বসেছি। মোবাইলে একটা কল বেজেঁ উঠলো। অপরিচিত নম্বরঃ
- হ্যালো, ভাইয়া আমি আপনার অফিসের নিচে দাড়িয়ে আছি।
- কে আপনি?
- আমি তমাল, রসুলপুরের কাজল মাষ্টারের ছেলে
- ও আচ্ছা, তিন তলায় এসে সোফায় বসো, আমি লাঞ্চ শেষ করে আসছি।
তমাল আমার এলাকার ছেলে। বি.কম পাশ করেছে রিসেন্টলি। ওর বাবা আমার বন্ধু। গত বছর আগষ্টের জোরপূর্বক স্কুল থেকে অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ (!)। আমার অফিসে একটা সিভি জমা দিতে আসছিলো। সিভির খামটা হাতে নিয়ে বসে আছি। কোথায় চাকরি দেবো?

তিনঃ
ছোট মাামা গত সপ্তাহ থেকে মোবাইলে কল দিচ্ছে। আমি ইচ্ছে করেই কল রিসিভ করিনা। কারন ফোন ধরলেই বলবে- “তোরা তোর মায়ের জমিটা বিক্রি করলে আমার কাছেই বিক্রি করবি কিন্তু। দেখিস না, তোর বড় মামা আমাকে ঠকিয়েছে” গত পাঁচ বছর ধরে ছোট মামা প্রত্যেক বার মোবাইল করে কথা শেষ করার সময় এই বাক্য বলবেই। মহাবিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করলামঃ
- হ্যা মামা বলো. .. . .
কাহিনি হইলো- ছোট মামার একমাত্র শালা তাবলীগ জামাতের সাথে ইজতেমায় গিয়া দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছিলো। ট্রিটমেন্ট নিয়ে বাড়িও চলে গিয়েছিলো। ইদানিং অবস্থা আরো অবনতি হচ্ছে। ওখানকার ডাক্তার পিজি হাসপাতালে রেফার করেছে। এখন ফোন করে আমার বাসায় তার শালাকে নিয়ে দুই তিনদিন থাকতে চায়।
আমি আমার বৌয়ের সাথে বিষয়টা আলাপ করেছি। তার সাফ কথা তোমার ছোট ভাইয়ের ওখানে উঠতে বলো।

চারঃ
হেড কনষ্টেবলল (নিরস্ত্র) পদে পদোন্নতি পেয়ে হায়দার আলী সৈয়দপুর থেকে বদলী হয়ে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নবিনগর থানায় এসেছিলো ২০২২ সালে। গত নভেম্বর মাসে ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামী ধরতে গিয়ে আসামী পক্ষের অতর্কিত হামলার শিকার হয় হায়দার আলী।

আহত হায়দার আলি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আবারো রাজারবাগ হাসপাতালে আসছিলো গত শনিবার। আামাকে জানিয়েছে সে এই চাকরি আর করবেনা। রিজাইন দিয়ে লাল মোহন চলে যাবে। তার চাচাতো ভাইদের সাথে শেয়ারে একটা ইলিশ মাছ ধরার ট্রলার কিনে ইলিশ ধরার বিজনেন শুরু করবে। চাইলে আমি তার পার্টনার হইতে পারি।

সমস্যা হলো তার বৌ রাহেলা বেগম হায়দার আলীর চাকরী ছাড়ার বিষয়ে কিছুতেই রাজি না।

পাঁচঃ
গফুর সাহেব দোতলার ভাড়াটিয়া। একটা লিজিং কোম্পানীতে এ্যাকাউন্টসে চাকরী করে। গফুর ভাইয়ের সাথে এই বাসায় থাকার সুবাদেই পরিচয়। মাসে একবার একসাথে মাছ কিনতে কাওরান বাজার আড়তে যাই। আসা যাওয়ার রিক্সা ভাড়া একটা আমার আরেকটা উনার। আড়তে গিয়ে মাছ কিনলে একটু সাশ্রয় হয়। তার পর দুই জনের কেনা মাছ বটিওয়ালাদের কাছে নিয়ে কাটিয়ে আনি।

গফুর ভাইয়ের দুইটা ছেলে। বড়টা পুরান ঢাকার একটা কলেজে পড়তো। গত মাস দুয়েক আগে দুই কলেজের মারামারিতে মাথা ফাটিয়েছে। বারোটা সেলাই লাগছে মাথায়।

গফুর ভাই ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছেলেকে তার ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেবে। তার ছোট ভাই দক্ষিন আফ্রিকায় থাকে। ছেলেন জন্য অলরেডি প্রসেসিং শুরু করেছে। আশুলিয়ায় দুই কাঠা জমি আছে উনার বৌয়ের নামে। সেই জমি বিক্রি করে টাকা পয়শা ম্যানেজ করতে হবে। আমার কাছে ভালো গ্রাহক থাকলে একটু খোঁজ জানাতে বলেছে গফুর ভাই।


ঢাকা,
০৬ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।

ছবিঃ অন্তর্জাল।

প্রাত্যহিকী-১
প্রাত্যহিকী-২
প্রত্যহিকী-৩
প্রাত্যহিকী-৪
প্রাত্যহিকী-৫
প্রাত্যহিকী-৬
প্রাত্যহিকী-৭
প্রাত্যহিকী-৮
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৩৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপেক্ষা-২য় পর্ব

লিখেছেন শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৪

বিগত পাঁচ-ছয় মাস যাবত ফকির আবদুল হাই সাহেবকে মাথা থেকে সরাতে পারছি না। আমি নিজে থেকেই বিড়বিড় করে ওনার সাথে কথা বলা শুরু করেছি। দিন রাত যখনই অবসরে থাকি ফকির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকার কি পদক্ষেপ নিবে ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:২৭


আওয়ামী লীগের মিছিলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকার ডেমরা-উত্তরা- বাড্ডা - মিরপুর সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ঝটিকা মিছিল করছে। প্রায় তিনমাস ধরে রাস্তায় মিছিল নামানোর প্রস্তুতি ছিলো। মিছিলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবেনাকো তুমি- যেদেশে হাসির জন্যও প্রাণ দিতে হয়!

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:৩৩

কয়েক দিন আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম হবু চন্দের আইন কবিতা নিয়ে, যেখানে কান্নার বিরুদ্ধে রাজা আইন জাড়ি করেছিলেন.....আজ লিখতে হচ্ছে- হাসির জন্য প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ঘটনা নিয়ে। আমরা সবাই ইতোমধ্যেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

৭১ না দেখেও কেবল ইতিহাস পড়ে যদি আপনি ৫৩ বছর পরে এসেও পাকিস্তানকে ঘৃণা করতে পারেন। তাহলে নিজ চোখে ভারতের আগ্রাসন দেখেও চুপ কেন?

লিখেছেন তারেক সালমান জাবেদ, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

প্রথমেই শুরু করতে চাই সীমান্ত হত্যা নিয়েঃ -
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী দ্বারা ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ সাধারণ ও বেসামরিক বাংলাদেশি হত্যা করা হয়েছে। ভারত সরকারের বাংলাদেশের সীমান্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চতুর্দিকে ওত পেতে আছে ফ্যাসিস্টের দোসর

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:৩৮

চতুর্দিকে ওত পেতে আছে ফ্যাসিস্টের দোসর

ছবি, অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

২০২৫ সালে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। স্বৈরাচারী শাসনের পতন সত্ত্বেও ফ্যাসিবাদের ছায়া সমাজের প্রতিটি স্তরে লুকিয়ে রয়েছে। ফ্যাসিস্ট শক্তির সহযোগীরা—যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×