পদার্থবিদ্যা ও মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী আবিষ্কার। ১০০ বছর পর প্রমাণিত হল আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব একশভাগ সঠিক। ১৪০০ কোটি বছর আগে ঘটে যাওয়া বিগ ব্যাং-এর পর সৃষ্টি হয়েছিল উত্তাল মহাকর্ষীয় তরঙ্গমালার। চোখে দেখা না গেলেও, বাস্তবে অস্তিত্ব রয়েছে সেই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের। গাণিতিকভাবে প্রমাণ করেছিলেন আইনস্টাইন। শেষ পর্যন্ত বাস্তবে প্রমাণ পাওয়া গেল সেই মহাকর্ষী তরঙ্গের। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মহাকর্ষীয় তরঙ্গ পৌছেছে পৃথিবীতে। শত কোটি বছর আগে দুটি কৃষ্ণ গহ্বরের সংঘর্ষের সময় যে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই তরঙ্গই এসে পৌছেছে পৃথিবীতে। প্রমাণ পেয়েছেন দুজন মার্কিন মহাকাশ বিজ্ঞানী।
এবার মহাকর্ষ তরঙ্গ প্রসঙ্গে একটু জেনে নেওয়া যাক। সংক্ষেপে বললে, ব্রহ্মাণ্ডের জন্মের সময়ে যে বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেখান থেকে জন্মানো তরঙ্গই মহাকর্ষ তরঙ্গ। পৃথিবীতে দিনরাতের মাপ, জোয়ার-ভাটা সবকিছুই নির্ভর করে মহাকর্ষ তরঙ্গের উপর। এই তরঙ্গের উৎপত্তির আধার মহাকাশে বিশাল মাপের একাধিক বস্তু যেমন ব্ল্যাক হোল বা দু’টি ভারী নক্ষত্র নড়াচড়া করলে। ধাক্কা খেলে, বিস্ফোরণ হলে। বিগ ব্যাংয়ের মতো মহাজাগতিক ঘটনা ঘটলে। বস্তুগুলির মাঝে যে শূন্যস্থান থাকে, অধিক কম্পনের ফলে তা থেকে সৃষ্টি হয় তরঙ্গ। ঠিক যেমনটা হয় পুকুরে ঢিল ছুঁড়লে। বৃত্তাকারে তরঙ্গ বা ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই হয়। আর এই তরঙ্গ ছড়ালে মহাকাশে শূন্যস্থানগুলিতে আয়তন সঙ্কোচন ও প্রসারিত হয়।
কিন্তু, এই গবেষণা প্রমাণে সবচেয়ে কঠিন অন্তরায় হল, পৃথিবীতে এই তরঙ্গ যতটুকু এসে পৌঁছয়, তা অতি ক্ষীণ। আর এই ক্ষীণ তরঙ্গ মাপার জন্য যে পরিকাঠামো বা যন্ত্র প্রয়োজন, তা তৈরি করতেই সময় লেগেছে বিজ্ঞানীদের। শেষ পর্যন্ত ক্যালিফর্নিয়া ইন্সস্টিটিউট অফ টেকনলজির লেজ়ার ইন্টারফেরোমিটার গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ অবজ়ারভেটরি যন্ত্রে ধরা পড়ে ওই তরঙ্গ। চার কিলোমিটার দীর্ঘ দু’টি ভ্যাকুয়াম পাইপ পেতে তারমধ্যে দিয়ে লেজ়ার রশ্মি পাঠান বিজ্ঞানীরা। ওই রশ্মির সাহায্যে পাইপগুলির দৈর্ঘ্য মাপতে গিয়ে দেখা গেল তা নিখুঁত চার কিলোমিটারের নয়। মাপে সামান্য কমবেশি রয়েছে। এরপরেই মহাকর্ষ তরঙ্গের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যান বিজ্ঞানীরা।
সেকথাই বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে ঘোষণা করেছেন মার্কিন ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর। পুনে, ওয়াশিংটন এবং ইতালি থেকে একসঙ্গে ঘোষণা করা হয় এই আবিষ্কারের বিষয়টি। তাতেই বলা হয়েছে, মহাকর্ষীয় তরঙ্গের যে গানিতিক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আইনস্টাইন, তা এখন প্রমাণিত। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর ফলে সম্পূর্ণ বদলে যাবে মহাকাশ বিজ্ঞানের চর্চা ও গবেষণার ধারা।
মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আবিষ্কারে যুক্ত ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইটারে মোদী লিখেছেন, এই মহান আবিষ্কারের পিছনে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এজন্য আমি গর্বিত। মহাকর্ষীয় তরঙ্গের এই ঐতিহাসিক আবিষ্কার মহাবিশ্বের অনেক অজানা দিক উন্মোচন করবে। আশা করি আগামীদিনেও মহাকর্ষীয় তরঙ্গ চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আরও বড় ভূমিকা পালন করবেন।
সূত্র : ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১২