আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
প্রত্যুষের আলোয় মুছে নিয়েছি
রাত্রির কালো অন্ধকার। ভোরের
পাখির কলরবে ছুঁয়েছি কূজন
গ্রীবায় জমে থাকা ছায়া মুছে
পরেছি রোদের তাজ।
আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
মসৃণ আয়নায় আমার আমাকে
পড়েছি অজস্রবার। অসংখ্য
অসমপ্ত গল্পের সীমান্তে দাঁড়িয়ে
ডেকেছি শৈশবের নাম ধরে; আর
দেখেছি এক ছিপছিপে নদী; তার
মুখছবি আর ভেবেছি অবাধ।
আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
আমার চোখ, হাতপা খুঁজে খুঁজে
ক্লান্তিসার; কেবলই একটা হলুদ
সরিষাবন, তালপাতার পাখায়
অসংখ্য হৈচৈ তুলে আনে আনন্দঘরে।
আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
বাবার জীর্ণ ছাতার মতো আকাশও
মেলেছে আজ নীলিমায় সাদা সাদা
মেঘের ভেলা; তার স্নেহের স্পর্ধায়
ওড়ে পায়চারীমন সারা ঘরময়।
আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
সন্ধ্যায় বাড়ীফেরার পথে জানালায়
একজোড়া চোখ পড়ে থাকে
অধীর আগ্রহে; সারা বিকেলের
হৈচৈ আর কাদামাটি গলে গলে
ক্ষীর হয় আঙ্খাকার মেদে।
আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
একটা আধক্ষয়া লাটিম ঘুরে ঘুরে হর্দ্দ
উৎফুল্ল বাতাসে ওড়ে ডাক ঘুড়ি।
কয়েকটি কাঁচের মার্বেল বুকপকেট
উপচে পড়ে শৈশবমাঠে আর বাড়ীর
টিন চালে একটানা বৃষ্টিপতনের শব্দে
বাজে মন অচীন কুজকাওয়াজ।
আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
অসংখ্য অক্ষর মিছিলে মিছিলে
জেগে ওঠে ডিমালু শব্দমিশ্রণে।
আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
চেয়ে থাকে রক্তাক্ত ১৯৫২; শ্লোগানে
কাঁপে অথৈ জনতার উল্লাস।
আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
একটা ডোবাপুকুরে শেওলার নীচে
প্রত্যাশায় দুচোখ জেগে থাকে; ১৯৭১,
তাদের স্পদনে ওড়ে আগামী।
আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
অসংখ্য অস্থির চোখ তাককরা
রাইফেলের মতো বসে আছে
অধীক্ষায়; একজন মা খুঁজছেন তার
মৃতসন্তানের লাশ, মর্গে পড়ে থাকে
অসনাক্তরা। মুছে যাওয়া অসংখ্য
সত্যরা দল বেঁধে বসে আছে কল্পপুরে।
আমি আজ কবিতা পড়বো বলে
দুচোখে শ্রাবণজল, অবরুদ্ধ কন্ঠস্বর।
৩১ মে ২০১৬