ছোট বেলাটা কেটেছ গ্রামে। বিদুৎ আসলেও তখনো ঘরে টিভি ওঠেনি। স্কুলের পড়া শেষ করে ঘুমানোর আগের কাজ ছিল গল্প শোনা। কোন দিন ছোট ফুফুর কাছে কোন দিন মায়ের কাছে। সে গল্পেরও নানা রকমফের ছিল।
রূপকথা থেকে শুরু করে ভূতের গল্প কোনটাই বাকী ছিল না। যাই হোক সেই গল্পের ঝুড়ি থেকে আজ একটি সত্যি ঘটনা আপনারদের সামনে তুলে ধরবো। ঘটনার ধরন হিসেবে এগুলোকে অতিপ্রাকৃত হিসেবে বলা যেতে পারে।
৮০ দশকের একেবারে শেষের দিকের ঘটনা। ঘটনাস্থল আমার নানা বাড়ি। আমার নানা অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থ ছিলেন। সেই সঙ্গে ১৩টি ছেলে মেয়ের পিতা। আমার নানী ছিলেন তার তৃতীয় পক্ষ। আমার নানীর অষ্টম এবং নানার ১৩ তম সন্তান তখন নানীর কোলে।
মূল ঘটনায় আসা যাক, ভারত সীমান্ত লাগোয়া ওই অঞ্চলের আশেপাশে বিদুৎ না থাকায় কোন হাস্কিং মিলও ছিল না। বাড়িতেই মেয়েরা ঢেঁকি আর হাতে চালানো জাঁতা দিয়ে ধান ভানা আর রুটির আটা তৈরির কাজ করতেন। ঘনটার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমার নানী, বড় মামীকে বলে রেখেছিলেন ভোর রাতে তারা জাঁতায় রুটির আটা প্রস্তুত করবেন।
রাতের খাবার টাবার খেয়ে সেদিন নানী ঘুমিয়ে পড়েছেন। হঠাৎ ছোট্ট ছেলেটির কান্নায় ঘুম ভাঙে। কিছুক্ষণ পর ঘরের দরজার পাশে ছোট ছেলেকে প্রাকৃতিক কর্ম সারাচ্ছেন। বলে রাখা ভাল, আমার নানী ভীতু প্রকৃতির মানুষ তাই বাইরে বের হওয়ার শাহস পাননি। বাচ্চাকে ধরে আছেন, এমন অবস্থাতেই নানীর চোখে তন্দ্রা এসে যায়। হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে এক মহিলার ডাকে তন্দ্রা ভাঙ্গে। খেয়াল করে শুনতে পান, বাইরে থেকে তার বড় বউয়ের মত গলায় কেউ এক জন বলছে, মা উঠেন আটা পিষতে হবে হবে। একবার, দু বার , তিনবারের পর ডাক থেমে যায়। আমার নানী কুসংস্কারে বিশ্বাসী মানুষ ছিলেন। তার জানা ছিল, রাতে ভূতেরা মানুষের কন্ঠ নকল করে মানুষকে ডাকে। তবে তিনবারের বেশি ডাকে না। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তিনি ভালভাবে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন।
ফজেরর আযানের পর সত্যি সত্যি বড় মামীর ডাকে নানীর ঘুম ভাঙল। জাঁতা ঘোরানোর এক ফাঁকে নানী তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি রাতে আর এক বার আমাকে ডাকতে এসেছিলে। মামী বলেন, না তো। একটু আগেই আমার ঘুম ভাঙল। নানী দুইয়ে দুইয়ে চার মেলালেন।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা ভাল, ঘটনাটা যে সময়ের তখন ওই এলাকাটা ছিল একেবারে অজ পাড়াগাঁ। বাড়ীর পেছনে অনেক বড় আম বাগান তার পেছনেই ছিল জঙ্গলের মত নানা গাছের বাগান।দিনের বেলায় যেতেই ভয় করত। সে সময় ওই বাড়ির আশপাশ ঘিরে নানান অতিপ্রাকৃত ঘটনার কথা শোনা যায়।
অবশ্য এখন সে বাগান কিংবা জঙ্গল কোনটাই নেই, সেই ঘটনাগুলোও আর শুনি না। আহ সে দিন কোথায় গেল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৫৯