ভাষার কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। মানবমনের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ভাষা যেমনি অদ্বিতীয় তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাষাই অনুভূতি প্রকাশের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়। এর একটি সরল উদাহরন হল, প্রেমিক যেমন প্রেমিকাকে বলে থাকে “তোমাকে আমি কত যে ভালোবাসি তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়”। বস্তুত আমাদের জীবনে আমরা এমন সমস্যার সম্মুখীন মাঝে মাঝেই হই। ঠিক এমনই সমস্যায় কিছুক্ষন ধরে ভুগছিল লতা। তার প্রেমিক যখন তাকে কিছুটা ধমকের সুরে বলল, সারাদিন শাহাবাগে পড়ে থেকে তোমার লাভ কি? লতা বলতে পাড়ত, “জয় বাংলা” স্লোগানটি যখন তার চারপাশ থেকে ধ্বনিত হতে থাকে তখন তার প্রতিটি রক্তকনায় উদ্দাম নাচন শুরু হয়, তখন বৈশাখী ঝড়ে তার মাথার সব চিন্তা-ভাবনাগুলো লন্ড-ভন্ড হয়ে যায়, তখন তার বুকের ভিতরে কেউ হাতুড়ির আঘাত হানে দমাদম। নিজের অজান্তেই তার ডান হাতটা বার বার আকাশের দিকে ধাবিত হয় আস্ফালন করে। কিন্তু লতা এসব কিছুই বলতে পাড়ল না কারন এতোকিছু বলার পরেও সে বুলবুলকে বোঝাতে পাড়বে না শাহাবাগে গিয়ে তার কি লাভ হল। লাভের অংশ হিসেব করে বোঝানো এখানে অসম্ভব।সহজ কথায় ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
এইবার বুলবুল বিরক্তি মেশানো কন্ঠে বললঃ ঐখানে কারা যায় জানো? যারা পলিটিক্স করে তারা, আর যায় যতসব নাস্তিক ব্লগার। তুমি কি এদের কেউ?
এই প্রশ্নে লতা একটু চিন্তায়ই পড়ে গেল, সে তথাকথিত কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয়, ব্লগারও নয়। আর নাস্তিক? এর ধারে কাছেও তার অবস্থান নয়। তাহলে কেন তখন তার মনে হচ্ছিল এই শাহাবাগে যারা আছে সে তাদেরই একজন, অতি ঘনিষ্ট একজন!
মুঠোফোনের ওপাশ থেকে তাড়া এল, কি কথা বলো না কেন? তুমি কি এদের কেউ?
নিজের অজান্তেই লতার মুখে চলে এলঃ আমি বাঙালী, বাংলাদেশী।